নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বিএনপির সম্পর্কে বিষোদগার না করে আগে নিজের ঘরে শিক্ষা দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, তিনি খুব সন্দুর সুন্দর কথা বলেন। চমৎকার আসনে বসেন আর প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকেন। প্রতিদিন তিনি বিএনপিকে সবক দেন।
শুক্রবার (১২ মার্চ) দুপুরে গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে (কাজী বশির মিলনায়তন) বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের চতুর্থ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন উদ্ভোধনী বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কৃষক দলের সম্মেলন উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ও শামসুজ্জামান দুদু।
শুরুতে নেতাকর্মীরা শ্লোগান দেয়া শুরু করলে কিছুটা বিরুক্তি প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকটা মিনিটি বক্তব্য শুনতে না পারলে কেন সকাল থেকে এতো কষ্ট করে বসে আছেন এখানে। আর শ্লোগান হবে- খালেদা জিয়ার মুক্তি, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি চাই। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লক্ষ মামলা আছে সেই প্রত্যাহার করতে হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং বর্তমান অযোগ্য নির্বাচন কমিশনকে সরিয়ে দিয়ে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। শ্লোগান হবে এইগুলো।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি নিজের ঘরকে আগে শিক্ষা দেন। আপনার ভাই কাদের মির্জা যে সমস্ত কথা আপনার সম্পর্কে বলেন, দলের নেতাদের সম্পর্কে বলেন, সেটার পরেই আপনাদের পদত্যাগ করা উচিত। নিজের ঘরে নিজেরা মারামারি-দলাদলী করে দুই জনকে হত্যা করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি খুব অসুস্থ্য। দু-তিন দিন আগে তার সাজা আবারও স্থগিত করেছে। কোথায় সাজা স্থগিত করেছে? আপনারা (সরকার) তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছে। তার চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চেয়েছেন সেটাও অনুমতি দেননি। বাংলাদেশে রেখেই তার চিকিৎসা করতে হচ্ছে। যা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিনে-দিনে। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিও জানান মির্জা ফখরল।।
বাংলাদেশ এখন কঠিন সময় পার করছে বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই কঠিন সময় কারা তৈরি করেছে? একটি রাজনৈতিক দল। যারা পাকিস্তান আমলে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলো। তারা তখন মানুষের অধিকার, ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিলো। সেই দলটি যখনি ক্ষমতা এসেছে তখনি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের পরে ক্ষমতা এসেছিলো। সেই সময় তারা যে কয়দিন ক্ষমতা ছিলো, সেটাকে বাংলাদেশের মানুষ কালো অধ্যায়, দুঃশাসন বলে চিহ্নিত করে। তাদের দুশাসনে সেইদিনও হাজার-হাজার কৃষক-তরুণ প্রাণ দিয়েছে। শেষে তারা সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে বাকশাল তৈরি করেছিলো। আর তার জন্য রক্ষী বাহিনী তৈরি করে। এখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসে মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। এই কারণে আওয়ামী লীগ কখনও মানুষের ভালোবাসা পায়নি।
নিজেকে কৃষক দাবি করে সংগঠেনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি নিজেও একজন কৃষক। আপনাদের সঙ্গে খেতে খামারে গিয়েছি। আমার গ্রামের কৃষকদের অধিকারে জন্য আন্দোলন করেছি। এলাকা কৃষকদের পানি সমস্যা সমাধানে আন্দোলন করেছি। এরা (সরকার) এখন পর্যন্ত কৃষকদের একটা সমস্যাও সমাধান করতে পারেনি। উপরন্তু এখন কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ বলেছিলো বিনা পয়সায় সার দিবো। সেই সার কি এখন বিনা পয়সায় দেয়? তখন মঞ্চের নিচে বসে থাকা নেতাকর্মীরা না না বলে চিৎকার করে। ১০ টাকায় কেজি চাল পান, তখনও না সূচক জবাব আসে। সরকারি কোষাগারের চালের স্লিপ পায় আওয়ামী লীগের লোকেরা।
সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চের প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা ও দলীয় উত্তোলন, রঙিন বেলুন ও সাদা কবুতর উন্মুক্ত করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব ও আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু। এই সময়ে জাতীয় সঙ্গীত এবং পরে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
বিকাল তিনটায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন। এই সম্মেলনে সারাদেশে থেকে আসা সংগঠনটির ৫৪৮জন কাউন্সিলর অর্থাত ৭৯টি সাংগঠনিক জেলার ৩৯৫ জন এবং কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ১৫৩ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানের বক্তব্যের সমাপ্তিতে সংগঠনের বিধান অনুযায়ী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পূর্বাহ্নে কৃষক দলের ১৫৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। বিকালে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে।
গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করে বিএনপি।
সাননিউজ/টিএস/এম