নিজস্ব প্রতিবেদক: আটকাবস্থায় নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাহস করে মামলা করার জন্য কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে সাবাস ও বাহবা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার ও তার খেতাব বাতিলের ষড়যন্ত্র, সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কিন এবং লেখক মুশতাক আহমেদের হত্যার প্রতিবাদ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইর বাতিলে’র দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে, এই আইনে গ্রেপ্তারকৃত সকল মানুষকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। আমি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে সাবাস দিতে চাই, কারণ তিনি সাহস করে মামলা করেছেন। এই সাহস নিয়ে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। আজকে এই সাহস নিয়ে অন্ধকারকে দূর করার জন্য, এই স্বৈরাচারকে দূর করার জন্য এবং যারা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে তাদেরকে পরাজিত করবার জন্য সাহস নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে রাজপথে সোচ্চার হতে হবে।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, এই সমাবেশ থেকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন, ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন সমস্ত নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদেরকে অবলিম্বে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকার ও ইসির অধিনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেই লক্ষ্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। কোন কিছুই আমাদের আটকাতে পারবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। এই হোক আজকে আমাদের শপথ।
আপনারা এতো ভয় পান কেনো- সরকারেরর কাছে এই প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপরারা অনুমতি দেয়ার পরও সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে আমাদের নেতা কর্মীদেরকে আসতে দেন না। কারণ আপনারা জানেন, জনগণ যদি জেগে উঠে তাহলে আপনাদের বেআইনী ক্ষমতা রাখা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, ৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য, তাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য এই সরকার সমস্ত গণতান্ত্রিক আইন বাতিল করে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে স্বৈরাচারি আইন প্রতিষ্ঠিত করছে। এটা আমাদের জন্য চরম দূর্ভাগ্যের বিষয়।
বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়। তারা জোর করে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে আজকে বেআইনীভাবে ভোটের আগের রাতে ভোট কেড়ে নিয়ে তারা ক্ষমতা দখল করে আছে। এই দখলদার সরকার শুধু মাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরী করেছে। যা দিয়ে অন্যায় ও অত্যাচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে।
এদিকে সমাবেশকে ঘিরে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব, কদম ফোয়ারা ও সচিবালয়সহ এর আশ-পাশে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলে পুলিশ। এসব স্থান দিয়ে প্রেসক্লাবে ও পল্টনে যেতে হলে পুলিশকে অবশ্যই আইডি কার্ড দেখাতে হয়। অন্যথায় পুলিশ সদস্যরা তাকে যেতে দেয়নি। এমনকি প্রেসক্লাবে সামনে দিয়ে বাস চলাচলও বন্ধ করে রাখা হয় সমাবেশে সময়।
পূর্ব ঘোষিত এই প্রতিবাদ সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল সাড়ে ৯টায় থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়। কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে কর্মসূচিতে শ্লোগানে শ্লোগানে মূখর হয়ে উঠে। সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীরা ‘বাঁধা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে, জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই কর’সহ বিভিন্ন স্লোগানে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ মুখরিত করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিদ আঞ্জু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সাননিউজ/টিএস/এম