নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ৪র্থ জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১২ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে (কাজী বশির মিলনায়তন) সংগঠনের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক দলের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংগঠনের জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মহান স্বাধীনতার ঘোষক আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশের কৃষিখাতে যুগান্তকারী কর্মসূচী গ্রহণের ফলে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে বিদেশে খাদ্য রফতানি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সালে শাসন আমলে বৈপ্লবিক কর্মসূচি গ্রহণের ফলে দেশের কৃষি ব্যবস্থা উন্নতির চরম শিখরে পৌছে যায়। বলা যায়, বাংলাদেশের কৃষি এবং কৃষকের জন্য যা কিছু কল্যাণকর তার সবই করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
নেতারা বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার ও তাদের দোষররা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সর্ম্পকে নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক ভিত্তিহীন মিথ্যা ,বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মামলা দায়ের করেই চলেছে। বাংলাদেশের কৃষক সমাজ বর্তমান অবৈধ সরকারের এই অপপ্রচার ও মামলাবাজী চরিত্রের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায়। অবিলম্বে অপপ্রাচার বন্ধ এবং হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় দেয়া সাজা বাতিল ও মুক্তির দাবী করছি।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং শ্রম শক্তির সবচেয়ে বড় যোগানদার এ দেশের কৃষি ব্যবস্থা। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ এখনো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের ৭০ শতাংশেরও বেশী জনশক্তি কৃষি কাজে নিয়োজিত আছে। দেশ যে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে গর্ব করে তার ৯০ ভাগই আসে কৃষকের সন্তানদের প্রেরিত অর্থ থেকে। দেশের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে সস্তা শ্রমের যোগানও আসে কৃষকের সন্তানদের মাধ্যমে। দেশের উৎপাদিত এবং আমদানীকৃত সকল পণ্যের সবচেয়ে বড় ভোক্তাও এদেশের কৃষক সমাজ। অথচ বাংলাদেশের কৃষকরা আজ দিশেহারা।
নেতারা বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ ভোটার ও প্রার্থীবিহীন তামাশার নির্বাচনের ও ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ রাতের মধ্যেরাতে ভোট নামে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান হাসিনা সরকার দেশের কৃষক সমাজকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে। দেশের প্রতিটি কৃষক নানাভাবে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হচ্ছে অথচ তাদের পাশে কথিত সরকারের কেউ দাঁড়াচ্ছে না। কোথাও কোথাও অবৈধ ক্ষমতাসীনদের লালিত সন্ত্রাসীরা কৃষকের জমি জমা দখল করছে আবার কোথাও ফসল, পুকুরের মাছ,গবাদী পশু গাছ-পালা কেটে লুটতরাজ করে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষক নির্বিঘ্নে তার প্রয়োজনে জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে না ক্ষমতাসীন দালাল ফড়িয়াদের কারণে।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক দলের ৪র্থ জাতীয় সম্মেলনে কৃষকের পক্ষে কিছু দাবী তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে-কৃষককে সর্বশান্ত কারার জন্য ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানী বন্ধ করতে হবে, সরকারীভাবে সরাসরি প্রকৃত কৃষকের নিকট হতে ন্যায্যমূল্যে ধান–চাল ক্রয় করতে হবে, ভারত থেকে ভূট্টা আমদানী বন্ধ করতে হবে, শস্য পরিবহনের সময় পথে পথে দলীয় চাঁদাবাজী ও পুলিশী হয়রানি বন্ধ করতে হবে, হাটে ইজারাদারদের দৌরাত্ম বন্ধ ও কৃষকের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, কৃষি ঋণ প্রকৃত কৃষকের মাঝে সরাসরি প্রদান করতে হবে, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ঘুষ ও দালালী বন্ধ করতে হবে, বীজ, সার, কীটনাশকসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্য কমাতে হবে, কৃষিতে ভর্তুকী বাড়াতে হবে, ডিজেলের মূল্য কমাতে হবে, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না, সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিরীহ কৃষক হত্যা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং করোনা চলাকালীন সময়ে প্রকৃত কৃষকদের সাহায্য সহযোগীতা করতে হবে।
দাবী মানা না হলে বাংলাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত কৃষক সমাজকে সাথে নিয়ে দুর্বার কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমানে অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী কৃষকের শক্র হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশপ্রেমিক কৃষক বান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে কৃষকের ন্যায্য দাবি আদায় করা হবে বলেও হুশিয়ারী দেন কৃষক দল নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদুসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সাননিউজ/টিএস/