নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘স্বাধীনতার ইশতেহারের’ কোনো অঙ্গীকারই আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই পুরণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম যেটা হয়েছিল, স্বাধীনতার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, স্বাধীনতার যে কমিটমেন্ট ছিল, যে ইশতেহার ছিল তার একটাও আওয়ামী লীগ সরকার কোনো দিনই পুরণ করেনি। তারা বাকশাল গঠন করেছিল, পত্রিকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল, অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছিল। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল; এই আওয়ামী লীগ। আজকে ভিন্ন মোড়কের ছদ্মবেশে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু রেখেছে।
বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার ইতেশহার’ দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।
এর আগের দিন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। বিএনপি এই দুইটি দিবসই স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী কর্মসূচির অংশ হিসেবে পালন করেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত শাহজাহান সিরাজের স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ টাঙ্গাইলে আরেকটি কর্মসূচিতে থাকায় অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি।
অবস্থার পরিবর্তনে করণীয় তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সমস্ত শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সভার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাতে চাই যে, আসুন ১৯৭১ সালে আমরা যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা, আমাদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আরেকবার লড়াই করি, আরেকবার যুদ্ধ করি।
তিনি বলেন, আমরা কারও সেবাদাসে পরিণত হতে চাই না। আমরা কারও হুকুমের দাস হতে চাই না। আমরা আমাদের যে অধিকার সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা আমাদের নিজেদেরকে আরও বিকশিত করতে চাই। আমরা আমাদের ভবিষ্যত বংশধরের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটা আবাসস্থল গড়ে তুলতে চাই। যেখানে তারা মুক্ত বাতাস অবস্থায় বাস করতে পারবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের ওপর যে দানব বসে আছে যেটা আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সাহেব বলেছিলেন সরকার মনোস্টার, সেখান থেকে দেশকে আমরা মুক্ত করি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করছি- শাহজাহান সিরাজের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যারা স্বাধীকার আন্দোলনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, যারা অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, তাদেরকে এখন আওয়ামী লীগ স্মরণ করে না। স্মরণ করে না আ স ম আবদুর রবকে, স্মরণ করে না শাহজাহান সিরাজকে। আমরা সূবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে তাদেরকে সামনে নিয়ে এসেছি। আমরা ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না। আমরা ইতিহাসে যার যার অবস্থান সেটা দিতে চাই।
স্বাধীনতার ইশতেহারের বক্তব্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে। কোথায়? আওয়ামী লীগের শাসনে বাংলাদেশে এই ১৫ বছরে কোথায় এইসব? এখন ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য আকাশসমান-পাহাড় সমান হয়ে গেছে। বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা সব কিছু হরণ করা হয়ে গেছে। আর অঞ্চলে অঞ্চলে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, তারা স্লোগান দেয়-উন্নয়ন, উন্নয়নের জোয়ার বইছে। আর সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য। এক শ্রেণির মানুষ আওয়ামী লীগের যারা মদদপুষ্ট। তারা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে পাঁচার করে দিচ্ছে। আরেক শ্রেণির মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, খেতে পারছে না, চরম নৈরাশ্যের মধ্যে আছে। এই হচ্ছে তাদের (আওয়ামী লীগ) বাংলাদেশ।
বাক স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, লেখক মুশতাক আহমেদ তাকে শুধু সমালোচনামূলক একটা লেখার জন্যে এবং সেটা নিজে না, কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর লেখতে গিয়ে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ৬ মাস তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিলো। এই মুশতাক আহমেদ একা নন। এই ধরনের ৭শ মানুষকে তারা শুধু সমালোচনা করার জন্য তাদেরকে তুলে নিয়ে আটক করে রেখেছে। আমাদের ছাত্রদলের নেতারা এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আপনারা দেখেছেন- কী নির্মমভাবে নিষ্ঠুরভাবে তাদের এখানে নির্যাতন করা হয়েছে, পুলিশ তাদেরকে পিটিয়েছে। শুধু তাই না, তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে কী পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এখন জানতে চান, পুলিশ প্রতিপক্ষ কেন? প্রতিপক্ষ তো আপনারা বানিয়েছেন নিজেদের।
নির্বাচন কমিশনও প্রতিপক্ষ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনকে দেখেন। প্রকাশ্যে প্রেসের সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরেকজন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ভীষণ তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। আরে ভাই, সারা বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তাদের মধ্যে দুই-একটা বাদে ৮০% তারা নিয়েছে। আমার নিজের পৌরসভায় ৭দিন আগে থেকে তাদের পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা সমস্ত নেমে পড়ে বিএনপির যতজন নেতাকর্মী সবাইকে এরেস্ট করেছে। সব জায়গায় নাই। তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের কী প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন নেই।
জিয়াউর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী জাতীয় কমিটির আহবায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। এই ৩ মার্চে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তিকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজ এই পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। গতকাল পালন করেছি পতাকা উত্তোলন দিবস। সেই সময়ে ডাকসুর ভিপি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। কেনো এই দুইটি দিন উদযাপন করছি?
তিনি বলেন, কেননা, আজকে যারা প্রজন্ম, আজকে যারা ছাত্র সমাজ তারা যাতে বুঝতে পারে যে সেদিন যদি পতাকা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে তুলতে হয়, পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার শাহজাহান সিরাজকে পাঠ করতে হয় সেদিন কী বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল ছিলো না। এটা যাতে আজকে প্রজন্ম প্রশ্ন করতে পারে সেদিন রাজনৈতিক দল কারা ছিলো? তখনই তো আসবে সেদিন এমন একটি রাজনৈতিক দল ছিলো তারা পূর্ব পাকিস্তানের ৯৮% ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। তাদের কি দায়িত্ব ছিলো? তাহলে কেনো ছাত্র সমাজকে অগ্রনী ভুমিকা নিতে হয়েছিলো।
সূবর্ণজয়ন্তী জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হেলেন জেরিন খান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সাননিউজ/টিএস/আরআই