নিজস্ব প্রতিবেদক : বছরব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। কিন্তু বৃহৎ এ অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছবি ও নাম থাকায় আগত নেতাকর্মীরা অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার ( ১ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
বিএনপির যেকোনও কর্মসূচিতে ৩ জনের ছবির ব্যবহার হয়, যার মধ্যে থাকে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যানারে প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছবি থাকলেও ছিল না খালেদা জিয়ার ছবি। তবে হোটেলের প্রবেশমুখে খালেদা জিয়ার ছবি সংবলিত ফেস্টুন দেখা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুষ্ঠানে আগত নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন— এমন আশঙ্কা থেকে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক নারী সংসদ সদস্য বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন হচ্ছে, সেখানে গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি নেই কেন, এটা আসলে আমার বোধগম্য নয়। জানি না কী কারণে আয়োজকরা ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ছবি ব্যানারে রাখেননি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছবি ব্যানারে যদি পরিকল্পিতভাবে বাদ দেয়া হয়, সেটা এক জিনিস, আর যদি অপরিকল্পিতভাবে হয়ে থাকে তাহলে তা অমার্জনীয় অপরাধ।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, আমানুল্লাহ আমানের নেতৃত্বে নয়াপল্টনে সাজসজ্জা যেটা হয়েছে সেখানে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি রয়েছে। এখানে কেন ম্যাডামের ছবি রাখা হয়নি তা আমি জানি না। আমার মনে হয়, ম্যাডামের ছবি রাখা উচিত ছিল।
যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেখানে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ছবি দেখতে না পেয়ে আমি খুব অবাক হয়েছি। জানি না কী কারণে ম্যাডামের ছবি দেয়া হয়নি। বিষয়টির জন্য আমাদের অনেকেই কষ্ট পেয়েছে। তৃণমূল নেতাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’
ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবি না থাকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। সোমবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘বদলে যাওয়া এ এক অন্য রকম বিএনপি। সব আছে, সবাই আছে, শুধু নেই বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ও নামটি।
দেশের এই দুর্দিনে অনেকেই ছিলেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এই জাঁকালো অনুষ্ঠানে। তবে বিএনপির আমন্ত্রণ পেয়েও সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতারা এবং দাওয়াত না পাওয়ায় জামায়াত নেতারা ছিলেন অনুপস্থিত।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে, রাজনীতির ইতিহাসে, গণতন্ত্রের ইতিহাসে, মানবাধিকারের ইতিহাসে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার ইতিহাসে গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম জড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন যে খালেদা জিয়ার ছবি বিএনপি রাখেনি, এটা আমার কাছে একটু অন্যরকম লাগছে। খালেদা জিয়ার ছবি থাকলে সেটা পূর্ণতা পেত। এ ব্যাপারে বিএনপির ব্যাখ্যা দেয়া উচিত।’
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবি না থাকা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব একটা সার্বজনীন বিষয়, কোনও ব্যক্তির বিষয় না। জিয়াউর রহমান খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, এ কারণে হয়তো তার ছবি রাখা হয়েছে। এটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে নেব। তবে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি থাকলে সেটা ভালো হতো।’
অনুষ্ঠানে বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এটা ছোটখাটো বিষয়।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঞ্চালক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম মুঠোফোনে বলেন, ‘ব্যানার যা ছিল ঠিকই ছিল।’ ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবি না থাকা নিয়ে নেতাকর্মীদের ক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ‘আমি ব্যস্ত আছি, এখন কথা বলতে পারব ন ‘ বলে ফোন কেটে দেন।
লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে দলটির বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত এবং পরে দলের শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, জাপান, জাতিসংঘ, ইউএসএইড, আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সান নিউজ/এসএ