নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও পিলখানা হত্যাকান্ডের অনেক প্রশ্নের জবাব মেলেনি দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে-এই মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের ঘটনার পর্দার পেছনের কুচক্রীরা অধরাই থেকে গেছে। গত ১২ বছর যাবত প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনা হত্যাযজ্ঞের দিনটি কিছু সাধারণ কর্মসূচির মাধ্যমে পার হয়ে যায়। এই হত্যাকাণ্ডের যে তদন্তগুলো হয়েছিল, এর পূর্ণাঙ্গ কোনো তদন্ত এখনো জাতির সামনে প্রকাশ করা হয়নি। বিশেষ করে সেনাবাহিনী যে তদন্ত করেছিল, সেই তদন্ত এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ফলে, স্বাভাবিকভাবে জাতির সামনে প্রশ্ন থেকেই গেছে এই ভয়াবহ রক্তাক্ত ঘটনার পেছনে মূল কারা ছিল, পরিকল্পনাকারী কারা ছিল, কারা লাভবান হয়েছে? এগুলো রহস্যজনকভাবেই উদঘাটন করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, পূর্ব পরিকল্পিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেকের সাজা হয়েছে, আবার অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের অনেকের জড়িত থাকার কথা শোনা গেলেও সেগুলোকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি এখনও রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা।
তিনি বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবস। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম একটি কালো দিন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি খোদ রাজধানী ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত হয় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ। পৈশাচিক পিলখানা হত্যাযজ্ঞে শোচনীয় অসহায়ভাবে জীবনদানকারী ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকষ সামরিক অফিসারসহ ৭৪ জন নিরপরাধ মানুষের নির্মম হত্যার দিন। তাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের ওপর বর্বর অত্যাচারের দিন। এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য এক ঘন অন্ধকারতম অধ্যায়। এই বেদনাদায়ক ঘটনায় আমরা সকলেই মুহ্যমান ও শোকে ভারাক্রান্ত। পিতার শুণ্য আসনের দিকে তাকিয়ে আজো তাদের সন্তানদের একরাশ দীর্ঘনিঃশ্বাস ঝড়ে পড়ে। ওই নির্মম হত্যাযজ্ঞ ছিল দেশের গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক সেনাবাহিনীর জন্য একটি বিপর্যয়ের দিনই নয়, বরং তাদের জন্য ছিল এটি একটি অশুভ বার্তা। দেশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার অপরাজেয় জীবনীশক্তির আধার সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করার এক সুদুরপ্রসারী চক্রান্তেরই অংশ ছিল পিলখানা হত্যাকান্ড। বাংলাদেশকে দুর্বল, খর্বিত, নিঃস্ব ও আত্মবিশ্বাসহীন করার প্রথম ধাপ ছিল এ হত্যাকান্ড। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে পঙ্গু করতেই পিলখানায় সুক্ষ্ম কৌশলে বেছে বেছে দক্ষ ও দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের এক সাথে করে হত্যাকান্ড চালানো হয়। দুনিয়ার কোনো যুদ্ধে এক সাথে এতো সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার নজির নেই। ২৫ ফেব্রুয়ারীর সেনা হত্যাযজ্ঞ ছিল আমাদের সেনাবাহিনীর শৌর্য, শক্তি ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার একটি ভিনদেশী মাস্টারপ্ল্যান। এই ঘটনায় দেশীয় তাবেদাররা মীর জাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল।
রিজভী বলেন, এটাই প্রথম নয়, সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ থেকেই। সেই সময় ক্যান্টনমেন্টে সুপরিকল্পিতভাবেই বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়া হয়েছিল। ৭৫ সালের ৬ নভেম্বর দিনে ও রাতে বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সেই সময় রুখে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ৭ নভেম্বর, সিপাহী জনতা সম্মিলিত বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে উল্টো পথে নেয়ার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিলো। মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান সেই বিপ্লবের মহানায়ক হিসেবে ইতিহাসের উজ্জল আলোয় আপন স্থান করে নিয়েছেন। ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত সেই অপশক্তি সেদিন ব্যর্থ হলেও পুনরায় চক্রান্তের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে তারা ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সফল হয়। এরপরই ২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী ঘটে চক্রান্তকারীদের চূড়ান্ত পরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ। নিহত হন অসংখ্য সেনা সদস্য।
তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে বলেই জনগণ বিশ্বাস করে। ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন অপরাধপ্রবণ একটি দল আওয়ামী লীগ। এরা মসনদ আঁকড়ে রাখার জন্য প্রয়োজনে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে দ্বিধা করে না। এদের একমাত্র সাধনা ক্ষমতা লাভের আগে অথবা পরে কোন সময়েই তারা ন্যায়নীতির নির্দেশ গ্রাহ্য করে না।
পিলখানার রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর থেকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব খর্ব হয়ে এসেছে। উদ্দেশ্য-সচেতনভাবেই পিলখানার সেনা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আঁটঘাট বেঁধেই ষড়যন্ত্রকারীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত করে পুনর্বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে জানিয়ে রিজভী বলেন, তখন ঘটনার নেপথ্যের নায়করা রেহায় পাবেন না। বিএনপি যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখান সদর দফতরে সেনা হত্যা দিবসটিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবি করছে। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হলে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করবে।
সাননিউজ/টিএস/