নিজস্ব প্রতিবেদক : আল-জাজিরার এক রিপোর্টেই ক্ষমতাসীন দলের সবাই ‘দিল্লিতে ধর্ণা দিচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তবে জনভিত্তি না থাকলে হিল্লি-দিল্লি দৌঁড়েও কোনও লাভ হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরকার প্রধান শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদনে আপনার রাজসিংহাসন থরথর করে কেঁপে উঠলো। আপনার গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান, আমলাদের প্রধান, পুলিশ বাহিনীর প্রধান সব দিল্লিতে যাচ্ছে। কারণ, আপনার ক্ষমতার উৎস তো জনগণ নয়।
জিয়াউর রহমান বারবার বলেছেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এটা জিয়াউর রহমানের একটি মহান বাক্য মানুষের মুখেমুখে। আর আপনার ক্ষমতার উৎস তো আমরা জানি। জনভিত্তি না থাকলে হিল্লি-দিল্লি দৌড়ে কোনও লাভ হবে না।’
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বীর উত্তম বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রিজভী আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মাধ্যমে আপনি কোন মুখে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের কথা বলেন? এটাতো প্রতিহিংসা। এই প্রতিহিংসা করতে গিয়ে আপনি একের পর এক রাষ্ট্র নিয়ে, দেশ নিয়ে, দেশপ্রেম নিয়ে যে কাজগুলো করছেন এটা ইতিহাসের ‘জঘন্যতম কালো অধ্যায়’ হিসেবে রচিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে তো কথা বলার অধিকার নেই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কত কালাকানুন। প্রতিটা মানুষের কণ্ঠের মধ্যে ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কথা বললেই মামলা।’
ইতিহাসের পটভূমি তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি কি আয়নার দিকে তাকান না? আপনি কি আপনার মন্ত্রিপরিষদের দিকে তাকান না? আপনি কাদেরকে সেখানে রেখেছেন? শেখ মুজিবের হত্যাকারী যাদেরকে বলা হচ্ছে তাদেরকে দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার যখন ব্যবস্থা করা হয় তখনতো জিয়াউর রহমান বন্দি ছিলেন। গৃহবন্দি ছিলেন। তখন তো আপনাদের সমর্থনেই একটি ‘ক্যু’ হয়েছিল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে। সেদিন আমরা টেলিভিশনে দেখেছি, খালেদ মোশাররফের মা-ভাই বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে ৩২ নম্বরে মিছিল করেছে। সেই খালেদ মোশাররফই তো আপনার পরিবারের হত্যাকারীদের থাইল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ কথা আপনার মন্ত্রীরা বলে না কেন? আপনার নেতারা বলে না কেন? সেদিন তো খালেদ মোশাররফ ক্ষমতায়। তাহলে তারা জিয়াউর রহমানের কথা বলছে কেন? জিয়াউর রহমান তো চাকরি করতেন। তিনি সেকেন্ড ম্যান ছিলেন, এক নম্বর ব্যক্তিও ছিলেন না।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘সেই সময়ে এক নম্বর ব্যক্তি যিনি ছিলেন যার দায়-দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করার তিনি টেলিফোনে বলছেন, “আপনি প্রাচীর টপকে পার হয়ে যান”। এতো বড় কাপুরুষ ভীরু লোককে আপনার পিতা সেনাবাহিনীর প্রধান বানিয়েছিলেন। অথচ সিনিয়র ছিলেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। আর এই কারণেই বোধহয় তাঁকে সেনাবাহিনীর প্রধান করা হয়নি! যাকে করা হয়েছিল তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘প্রাচীর টপকে’ বের হয়ে যেতে বলেছিলেন। এই হচ্ছে আপনাদের সেই সেনাপ্রধানের চরিত্র। আর সেই লোককেই কিনা আপনারা এমপি বানিয়েছিলেন। রূপগঞ্জ থেকে আপনি এমপি বানাননি?’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো ১৯৭২-৭৫ সালে ক্ষমতায় ছিল, আপনাকে ক্যাপ্টেন নাছির গ্রেফতার করেছিল কেন? এই উত্তরটি আপনি দেবেন, কেন আপনাকে গ্রেফতার করেছিল? আপনি তো আওয়ামী লীগের বড় নেতা, ক্ষমতায় থাকলে তো সবাই আপনাদেরকে ভয় পায়, কিন্তু সেই সময়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায় কেন আপনাকে ক্যাপ্টেন নাছির গ্রেফতার করেছিল, এই উত্তরটা আপনি দিন।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডাক্তার দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাফের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।
সান নিউজ/টিএস/এম