নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘গণতন্ত্রের স্বার্থে শক্তিশালী বিরোধী দল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল অবশ্যই দরকার, কারণ আমরা গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। এখন বিরোধী দল বলতে যে দলগুলি আছে তাদের নেতৃত্ব সেইভাবে নেই বলেই তারা জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি’ রোববার (৩১ জানুয়ারি) মুজিববর্ষ ওয়েবসাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, রাষ্ট্র ও ভোটাধিকার ধ্বংসকারী রাতের ভোটে নির্বাচিত অটো প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই বক্তব্য নির্লজ্জতা ও হাস্যকর। এধরনের রসিকতা ও মিথ্যাচার তাঁর রাজনীতির সংস্কৃতির অংশ। বিবেকহীন মানুষের কথা আমলযোগ্য নয়।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রিজভী আহমেদ বলেন, তিনি বেমালুম ভুলে গেছেন যে, জনগণের ভোটে নয় তিনি আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর দ্বারা রাতের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তিনি যা বলেন করেন তার উল্টোটা। তার কথার সাথে কাজের কোন মিল নেই।
শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি মানুষের শান্তি চাই।’ কিছুদিন আগেও একটি বিদেশী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন ‘আর চাই না প্রধানমন্ত্রীত্ব!’ এসব কথা বলে আবার তার মোসাহেব মন্ত্রীদের দিয়ে বলান, ‘শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত ও কর্মক্ষম থাকবেন ততদিন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে কেউ সরাতে পারবে না।’ এখন বলছেন “শক্তিশালী বিরোধী দল লাগবে উনার।”
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রেজিমের চামুন্ডারাই কেবল মহিমা কীর্তন করে থাকে, যা জনগণের কাছে বিশ্বাাসযোগ্য নয়। সম্ভবত ভাঁড় ও মোসাহেব পরিবেষ্টিত রাজসভায় সুচিন্তা ও মননশীলতা হারিয়ে গিয়ে বিকৃত রুচির পরিধি বৃদ্ধি পায়। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা আওয়ামী লীগের ধর্ম। গণতন্ত্রকে নিহত করে সেই পুরনো একদলীয় বাকশালই জেঁকে বসেছে বর্তমানে। গণতন্ত্রের লাশের ওপর পুরো রাষ্ট্র ও সমাজটাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভয় ও ত্রাসের অধীনে।
রিজভী বলেন, দেশের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে এখন বিকল্প মত প্রকাশেরও সুযোগ নেই। ক্ষমতাশালীদের নিয়ন্ত্রণে গণতন্ত্র ও মিডিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদল নির্মূলের কাজ করে আসছেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। যে দেশে গুম ও ক্রসফায়ার আর লা|খ লা|খ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা জাতীয় জীবনের অংশ হয় সেই দেশে শক্তিশালী বিরোধীদল গড়ে তোলার কথা যে বছরের শ্রেষ্ঠ ইয়ার্কি ছাড়া আর কিছুই নয়।
তারা পরিকল্পিতভাবে শুধুমাত্র বিএনপি নয় সকল বিরোধী দল এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের নির্মূলের চেষ্টা করছেন। নিশিরাতের সংসদে আওয়ামী লীগের বানানো একটি কথিত বিরোধীদল আছে। তাদের নেত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, তারা দেশে-বিদেশে নিজেদের পরিচয় দিতে পারেন না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা লাগে। কারণ, সবাই জানতে চায়, তারা সরকারি দল না বিরোধীদল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধী দলীয় নেতা প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা সরকারি দল, না বিরোধীদল, কোনটা আমরা?’
তিনি বলেন, পৃথিবীতে এমন নজিরবিহীন মিডনাইটের অটো এমপিদের সংসদ আর নেই। যেমনিভাবে তারা এবারে অটো পাশ আর জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়ি দেখালেন সেটিরও নজীর পৃথিবীতে নেই। মিডনাইট নির্বাচন করে ক্ষমতা জবরদখলে রাখতে হলে শেখ হাসিনার দরকার মেরুদন্ডহীন একটি অশিক্ষিত জাতির। তাই নজীরবিহীন অটো পাশ দিলেন কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবুল মনসুর আহমেদ দুঃখ করে তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘১৯৭৩ সালে যেখানে অন্য কোনো দলের ক্ষমতায় আসার কোনো আভাস ছিল না। তারপরও ছোট্ট বিরোধী দলকে আওয়ামী লীগ সহ্য করতে পারেনি।’
আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র হত্যার বিজয় অভিযানের অগ্রগতির ছায়াসঙ্গী করেছেন বিরোধীদলের ওপর পৈশাচিক নিপীড়ণ-নির্যাতন চালিয়ে। গণতন্ত্রকে কবরে শায়িত করে এখন গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চান তিনি। শক্তিশালী বিরোধীদল চান। জনগণ জানে, প্রধানমন্ত্রী নির্ভেজাল টাটকা মিথ্যা কথা বলছেন। আদতে তিনি চান বিরোধী দল-ও মতের কবর রচনা করতে। যা তাঁর গত এক যুগের কর্মকান্ডে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দেশের মানুষ। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র পরস্পর বিরোধী সত্তা। এক সাথে চলতে পারে না। একদিকে দুর্নীতি-দুঃশাসন অন্যদিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের ওপর নির্ভর করে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, খুন ও জখম চালিয়ে দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। দেশে অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
রিজভী আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী আক্রমণের অভিঘাতে, নির্বিচার লুন্ঠন ও ধ্বংসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে দেশে স্বমহিমায় বিরাজ করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী নাৎসীবাদের এক ভয়ানক মূর্তি।
সান নিউজ/টিএস/এম