মোহাম্মদ রুবেল : বহুল আলোচিত-সমালোচিত নোয়াখালী বসুরহাট পৌরসভার নবনির্বাচিত পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা শনিবার (৩০ জানুয়ারি) দেখা করেছেন তার বড় ভাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। এসময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন তার সঙ্গে ছিলেন।
তবে দুই ভাইয়ের মধ্যে ঠিক কী বিষয়ে কথা হয়েছে এটি কেউ পরিষ্কার না করলেও এটিকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলেই প্রচার করেছেন অনেকেই। সূত্র বলেছে দুই ভাইয়ের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাপ হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমান সময়ের আলোচিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছোট ভাই কাদের মির্জা শনিবার বিকাল ৩ টা ৩০ মিনিটে আওয়ামী লীগের ২৩ কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দেখা করতে যান। আগে থেকেই সময়টা নির্ধারিত ছিল। কিন্ত সময় মতো সাক্ষাৎ করতে আসেননি ওবায়দুল কাদের।
তাতে অনেকটাই বিচলিত হয়ে পড়েন নবনির্বাচিত মেয়র কাদের মীর্জা। গত সপ্তাহে নোয়াখালীর বসুরহাটে মেয়র কাদের মীর্জার সংবর্ধনার একটি অনুষ্ঠানে লাইভে বক্তব্য রাখার কথা ছিল ওবায়দুল কাদেরের। এজন্য ব্যাপক আয়োজন করেছিল আয়োজকরা। লাইভে কথা বলতে সবপ্রস্তুতি কিছু নির্ধারণ করে কিন্তু যখন কথা বলার সময় হয় তার কয়েক মিনিট আগে ওবায়দুল কাদেরের পিএস জানিয়ে দেন কথা বলবেন না তিনি।
কেন কথা বলবেন না এনিয়েও ব্যাখ্যা করেননি। যার কারণে ক্ষেপে যান মীর্জা কাদের। ফলে অনুষ্ঠানটির শ্রী হারায়। এরপর মান বাঁচাতে গরম বক্তব্য দিয়ে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকেন কাদের মির্জা। বলেছিলেন কথা দিয়েও কথা রাখেন না ওবায়দুল কাদের।
ঘটনাটির এক সপ্তাহ পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাড়ে তিনটায় আসবে বলার পরও ওবায়দুল কাদের না আসায় চিন্তিত হয়ে পড়েন কাদের মির্জা।
তখন বার বার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন কাদের মির্জাকে ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ করে বলেন মন্ত্রী মহোদয় আসবেন। প্লিজ আপনি বসুন। এভাবে কেটে যায় অনেকটা সময়। এরপর বার বার কাদের মির্জা ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়েও ব্যর্থ হন।
এর মধ্যে অস্থিরতায় সময় কাটছিল না কাদের মির্জার। এরপর সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে আসেন। দেখা হয় দুই ভাইয়ের। কথা হয় নানান বিষয়ে । দুই ভাই একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দেন। এরপর ছবি তুলেন। দুই ভাইয়ের সাক্ষাতের সময়ে হাজির হয় নোয়াখালী এলাকার শ’দুয়েক নেতা কর্মী।
গত ১৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আব্দুল কাদের মির্জা নৌকা প্রতীকে বিজয় লাভ করেন। নির্বাচনের আগে দলের ‘আদর্শ ও সাংঘর্ষিক’ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসেন আব্দুল কাদের মির্জা।
সম্প্রতি নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল কাদের মির্জা। সাম্প্রতিক সময়ে কাদের মির্জা বেশ কিছু বক্তব্যে দেশ-বিদেশে নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে নানান নাটকীয়তায় শনিবার ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তিনি।
এবিষয়ে নোয়াখালী কোম্পানী উপজেলা চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন দুই ভাইয়ের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে খুবই আন্তরিকভাবে। একে অপরকে মিষ্টি ও ফুল দিয়েও বরণ করে নেন । তিনি বলেন ,রাজনৈতিক কোন আলোচনা না হলেও পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এ সাক্ষাৎ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ছোট ভাই কাদের মির্জা বলেন, এটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। নির্বাচনের পর দেখা হয়নি, তাই দেখা করতে এসেছিলাম। সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা কিছু কমিটি পুনর্গঠন করেছি, সেগুলো তাকে (সাধারণ সম্পাদক) জানিয়েছি। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ওই নির্বাচনও যাতে সুষ্ঠু হয় সে বিষয়ে কথা হয়েছে।
নির্বাচনের সময় তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সে বিষয়ে ওবায়দুল কাদের কিছু বলেছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে কাদের মির্জা বলেন, এসব বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে তিনি (ওবায়দুল কাদের) শান্ত থাকতে বলেছেন। নেতারা যেসব আচরণ করেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে নেত্রী (আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা) দেখছেন বলেও সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন।
কাদের মির্জা বলেন, আমার পৌরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আমি বিজয়ী হয়েছি। আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তা আমি সব সময় বলবো। আমি আজীবন এ কথা বলে যাবো।
সান নিউজ/এমআর/এম