নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’ করে ক্ষমতাসীনরা পৌরসভা দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন যে, নির্বাচনগুলো কি হচ্ছে? পৌরসভা নির্বাচন গতকাল (শনিবার) হয়ে গেলো। প্রত্যেকটি নির্বাচনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা দখল করে নিয়ে গেলো, ডাকাতি করে নিয়ে গেলো। এমনকি খুন পর্যন্ত হয়েছে সিরাজগঞ্জে একজন কমিশনার তিনি প্রায় ৮৫ ভাগ ভোট পেয়ে জিতেছেন তাকে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর শাহজাহানপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এমনকি ইভিএম যে ইভিএম নিয়ে তারা (সরকার) এখন ভোট করছে এই ইভিএমের মধ্যে সম্পূর্ণ কারসাজি-কারচুপি তারা রাখছে। অর্থাৎ সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকেই তারা আজকে নষ্ট করে ফেলেছে। ওরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহারে করে তারা নিজেরা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে পোক্ত করবার জন্য।
তিনি বলেন, দুভার্গ্য আমাদের আজ ৫০ বছর পরে যখন আমরা সেই বছরটি পালন করতে যাচ্ছি আমরা দেখছি যে, আমাদের কোনো স্বাধীনতা নাই। আজকে আমাদেরে ন্যুনতম যে অধিকার, সংবিধান সম্মত যে অধিকার সেই অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে, আমাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এদেশের মানুষকে তার কথা বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, এদেশের মানুষকে তার সংগঠন করবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের একটি শ্রেনীকে বিপুল বিত্তের অধিকারী করা হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ তারা দারিদ্র্যের আরো অতল গহবরে চলে যাচ্ছে। আজকে আমাদের গণতন্ত্রকে লুন্ঠন করা হয়েছে, মানবাধিকার লুন্ঠন করা হয়েছে। সেই কারণে এই সূবর্ণ জয়ন্তীকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে জনগনের সামনে তাদের আকাংখা ছিলো ১৯৭১ সালে, সেই আকাংখাকে সামনে নিয়ে এসে জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এখানে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ এবং সকল মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই-এই হবে আমাদের লক্ষ্য।
‘বাংলাদেশে গভীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে’দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সংকট শুধু রাজনৈতিক সংকট নয়, অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সেই সংকট মানুষের ন্যুনতম বাস করবার যে পরিবেশ তার সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং স্বাধীনতার সংকট শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যখন খবরের কাগজ খুললে দেখি যে, সীমান্তে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। একদিন না দুইদিন না, চলছেই বছরের পর বছর ধরে। পৃথিবী কোনো সভ্য রাষ্ট্রে সীমান্তে এই ধরনের গণহত্যা চলতে পারে না।
ফখরুল বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, আমাদের যে ন্যায্য অধিকারগুলো স্বাধীন দেশ হিসেবে সেগুলো আমরা পাচ্ছি না। অন্যদিকে আমাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এই সরকার একটা নতজানু নীতি গ্রহন করে তাদের কাছে সমস্ত সুবিধাগুলো দিয়ে দিচ্ছে। অথচ আমরা আমাদের যে সমস্যাগুলো আছে তার সমাধান করতে পাচ্ছি না। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন বলা যেতে পারে এখন সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ নয়।
স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করে নিজে রনাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়ে সেক্টার কমান্ডার, ‘জেড’ ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে তিনি রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি যখন এই দল প্রতিষ্ঠা করেন তখন রনাঙ্গনে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তারাই এই দলে বেশিরভাগ যুক্ত হয়েছেন। তাই আমরা দাবি করি, আমরা এমন দল করি যে দল স্বাধীনতার ঘোষকের দল এবং রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের দল।
তিনি বলেন, আমরা কোনো চেতনার দল না। কেননা চেতনা কিন্তু বই পড়ে সৃষ্টি হয়, অন্য লোকের থেকে কথা শুনে বিভিন্ন কারণে চেতনা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সেরকম দল আমরা নই। সূবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃতি ইতিহাস’ তুলে ধরতে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারি দল একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি। শুধু স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান ও তার দলকে খাটো করার জন্যে তাদের (আওয়ামী লীগ) প্রচার-প্রচারণা চলছে। আমরা অনবরত রেডিও টেলিভিশনে তা দেখতে পারছি।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের কৃতিত্বকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগে যেভাবে উঠে-পড়ে লেগেছে তার প্রতিরোধে যেমনি আমরা রাজপথে মিছিল করতাম তেমনি এই সূবর্ণ জয়ন্তী যার যার সাধ্য মতো আমাদেরকে পালন করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ যে যেখানে আমরা পারবো শহীদ জিয়া্উর রহমানের কৃতিত্ব ও পরবর্তি কার্যক্রম তিনি কি কি করেছেন দেশের জন্য তা আমরা তুলে ধরবো। এটাই হবে আমাদের লক্ষ্য।
মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় সভায় স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার, আফরোজা খানম রীতা, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, আবুল কালাম আজাদ, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হুমায়ুন কবির খান, তমিজ উদ্দিন, ফকির মাহবুব আলম স্বপন, মজিবরুর রহমান, এলাবার্ট পি কস্টা, শামসুজ্জামান সুরুজ, অপর্না রায়, নিপুণ রায় চৌধুরী, মেহেরুন নেছা হক, আকম মোজাম্মেল, এস এম কবির জিন্নাহ, আজহারুল ইসলাম মান্নান, মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভুঁইয়া, রবিউল ইসলাম রবি, মাজহারুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, কাজী আবুল বাশার, আবদুল আলীম নকি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, ইউনুস মৃধা, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, সাবিনা ইয়াসমীন, আমেনা খাতুন, রোকেয়া সুলতানা তামান্না, শামসুন্নাহার ভুঁইয়া, সুরাইয়া বেগম, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, রফিকুল আলম মজনু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, শহীদ বাবলু, ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, আলমগীর হোসেন, গোলাম মনজুর, মাহবুব আলম বাদল, জেলা নেতাদের মধ্যে দেওয়ান সালাহউদ্দিন, খন্দকার আবু আশফাক, কাজী ছায়েদুল আলম বাবুল, সালাহউদ্দিন সরকার, সোহরাব উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সাখাওয়াত হোসেন খান, অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সাইদুল হক সাজু, ফরহাদ হোসেন ইকবাল, আবদুস সবুর সেন্টু, শাহ রিয়াজুল হান্নান, মনজুরুল করীম রনি প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সান নিউজ/টিএস/এম