রাজনীতি

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই আওয়ামী লী‌গের মূল লক্ষ্য

মোহাম্মদ রুবেল : অস্থির এক রাজনৈতিক সময়ে দিন বদলের সনদ অঙ্গীকার নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার যুগপূর্তিতে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ক্ষমতার মসনদে অর্জনের মুকুটে হয়ত যোগ হতে পারত আরও কিছু পালক, তবে রাষ্ট্র পরিচালনা ও কূটনৈতিক সফলতা-ব্যর্থতার আপাত তুলাযন্ত্রে পাওয়ার গল্পটাই সমৃদ্ধ। তবুও উন্নয়নের বৈশ্বিক রেসে সামষ্টিক অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতায় বেড়েছে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক বিভিন্ন সূচকও। যার পুরোটাই সম্ভব হয়েছে ধারবাহিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে। এরই ধারবাহিকতা বজায় রেখে এগিয়ে যেতে চায় আওয়ামী লীগ। এবিষয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, উন্নয়নের মূলমন্ত্রই হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যা একযুগ ধরে বজায় রাখতে সফল হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলাও বজায় রাখতে হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ সাননিউজকে বলেন, উন্নয়নের চাবিকাঠির প্রথম শর্ত যেমন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, তেমনি এ স্থিতিশীলতা অনেকাংশে নির্ভর করে দলকে সাংগঠনিক পর্যায়ে রাখা। এরই মধ্যে দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অভিযুক্তদের অনেককে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আবার অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বিশৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের হুশিয়ারি করে বলেন,অতীতের মত আগামীতেও শুদ্ধি অভিযান চলবে। যারাই দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা করবে।

কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক সান নিউজকে বলেন, সকল উন্নয়নের চাবিকাঠি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন দীর্ঘ এক যুগ ধরে সম্ভব হয়েছে। আগামীতে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, বড় বড় যে সব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং কাজ চলছে এগুলো শেষ হলে এর সুফল হিসেবে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হবে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধশালী দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য আমরা ভিত্তি স্থাপন করেছি। যে সব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে দেশের মানুষ এর সুফল পাবে। দেশ উন্নত, সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সাননিজকে বলেন, আওয়ামী লীগ এক দিকে সংগ্রামের ঐতিহ্য ধারণ করে আরেক দিকে সরকার পরিচালায় উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে কাজ করে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনা আধুনিক ও বিজ্ঞান মনস্ক। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে যা যা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তার সরকার গত ১২ বছরে সেটা হাতে নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যার ফলে দেশ আজ একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক দেশে পরিণত হয়েছে। এসব করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডয়াস সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সাননিউজকে বলেন, দীর্ঘ এক যুগের পথ পরিক্রমায় নানান সমস্যা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। এই এক যুগে বাংলাদেশকে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশে পরিণত করেছে সরকার। এই নতুন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, এক যুগের পথচলায় সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছিল বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। করোনা মোকাবিলা করে একদিকে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা, অন্যদিকে জনগণের জীবন-জীবিকা সচল রাখা দুইয়ে মিলে সরকারের চলার পথটি ছিল বন্ধুর। করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, সরকারি অনুদান নিয়ে অনিয়ম, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বলতে গেলে একহাতেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লী‌গের সাংগঠ‌নিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউ‌দ্দিন নাছিম সাননিউজকে বলেন, দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, হাই‌ব্রিড ও বিদ্রোহ মুক্ত করতে পারলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায়া রাখা সম্ভব।

সরকারের ২য় বছরের পথচলা : সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাধা অতিক্রম করে মেয়াদের দ্বিতীয় বছরে এসেই স্বপ্নের পদ্মাসেতুর বড় একটি অংশের কাজ শেষ করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। গত ১০ ডিসেম্বর ৪১তম ও শেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে মূল পদ্মাসেতুটি গোটা বিশ্বের সামনে দেশের গর্বের প্রতীক হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গত ২৯ ডিসেম্বর নির্মাণাধীন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বন্দরে ভিড়েছে জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। করোনার অভিঘাত সত্ত্বেও কর্ণফুলী নদীর নিচে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পৌঁছেছে ৫০ শতাংশে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে যানচলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া নদী তীরে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, রাজধানীর অবৈধ দোকান ও খাল উদ্ধারের তৎপরতায় স্বস্তির আশা দেখছে জনগণ। গত কয়েক বছরের মতোই এ শিক্ষাবর্ষেও বছরের শুরুর দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে পৌঁছেছে নতুন বই। মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। এ বছর শুরু হয়েছে ই-পাসপোর্টের কাজও। ডিজিটাল সেবা দিতে ২১টি ডিজিটাল রেকর্ড রুমও চালু করা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্লোগানকে নিজেদের নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করেছিল আওয়ামী লীগ। গত দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর তৃতীয় মেয়াদেও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। এর আওতায় সরকারি বিভিন্ন সেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবে করোনাকালে এসে যেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দযুগল সম্পূর্ণরূপে দৃশ্যমান হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আরেক বিজয় সমুদ্র বিজয়। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমার বিরোধ নিষ্পত্তি একটি যুগান্তকারী অর্জন। এই অর্জনের ফলে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত সব ধরণের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় আওয়ামী লীগ সরকারের একটি যুগান্তকারী সফলতা। ২০১৫ সালের ২১ জুলাই মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় থাকা বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের বন্দিত্বের অবসান হয়।

উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সরকার দেশকে আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ করে তুলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশে। আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকেই মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেন। টানা তিন মেয়াদের সরকারের সময় এই ১২ বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বিশেষ করে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। হাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ, যা বদলে দেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও অর্থনৈতিক গতিধারা। শুধু প্রকল্প গ্রহণই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সান নিউজ/এমআর/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আ’লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ, আহত ৬

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চল...

ঢাকার সব মন্দিরে ঘুরবেন মিম

বিনোদন ডেস্ক: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শা...

ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধা নিহত

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় সিএনজি ও ব্য...

চিলিকে হারিয়ে জয়ী ব্রাজিল

স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপ বাছাইয়ে টিকে থাকতে চিলির বিপক্ষে ম্...

মধুমতির ভাঙনে বসতবাড়ি-কৃষিজমি বিলীন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়...

ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করলেন‌ প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরি...

মাহমুদউল্লাহকে বিদায়ী সংবর্ধনা

স্পোর্টস ডেস্ক : দীর্ঘ টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেল...

সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা

জেলা প্রতিনিধি : ময়মনসিংহে স্বপন ভ্রদ্র (৫৫) নামে এক প্রবীণ...

একদিনে সর্বোচ্চ ৯ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্ট...

বৌভাত অনুষ্ঠানে রোস্ট নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৮

এসআর শফিক স্বপন, মাদারীপুর: মাদারীপুরের শিবচরে বিয়ে বাড়ির বৌ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা