নিজস্ব প্রতিবেদক : ৭ বছর আগে ঢাকাসহ সারদেশের বিভিন্ন থানায় হেফাজতের বিরুদ্ধে ৮৩টি মামলা করা হয়। আর এসব মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে হেফাজত ও বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার নাম রয়েছে।
তাছাড়া ১৮টি মামলা আদালতে বিচারাধীনও আছে। বর্তমানে ৬২টি মামলার তদন্ত ঝুলে আছে থানায়। সেসব মামলায় তদন্তকারী সংস্থাগুলো নজরই দিচ্ছে না বলে অভিযোগ ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর সরকারের হাইকমান্ড নড়েচড়ে বসেছে। কঠোর বার্তা পেয়ে হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
রোববার (০৬ ডিসেম্বর) এ নিয়ে পুলিশ-র্যাব ও বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তাছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশেষ বৈঠক করেছেন। সে বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে ঝুলে থাকা মামলাগুলো আবার সচল করা হবে। মামলাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তের পর অভিযোগপত্র দিতে পুলিশ সদর দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
আর যে সব আসামি জামিন নিয়ে প্রকাশ্য ঘুরছে তাদের তালিকা করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে। এজন্য পুলিশ কাজ করছে। তদন্ত শেষ করেই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট আদালতে। তাছাড়া আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া খুব শিগগিরই শেষ হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে যারা নানা অপ্রচার চালাচ্ছে তারা না বুঝে এসব করছে। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাংচুরের সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবেই। ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা উসকানি দিচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
একই কথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঝুলে থাকা হেফাজতের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। সেইসব মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে। কোনও ইস্যু নিয়ে বিশেষ মহল বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। পুরো ঢাকায় পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। শান্ত পরিবেশকে কেউ অশান্ত করতে পারবে না বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের মধ্যে বেশিরভাগই জামিনে আছেন। যেকোনও সময় তাদের জামিন আদালতের মাধ্যমে বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, কোরআন শরিফ পোড়ানো, পুলিশের ওপর হামলা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় মামলা হয়।
২০১৩ সালের ৫ মে তাণ্ডবের পর ঢাকাসহ ৭টি জেলায় ৮৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয়। তার মধ্যে বাগেরহাটের একটি মামলার বিচার শেষ হলেও রায়ে সব আসামি খালাস পেয়ে যান। দুটি মামলার অভিযোগ প্রমাণ করতে না পেরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। ১৮টি মামলার অভিযোগপত্র দিলেও এর বিচার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। মামলায় হেফাজতের আমির মৃত শাহ আহমদ শফীকে আসামি করা হয়নি।
হেফাজত ছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ও ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। সে বছরের ৫ মে ঢাকার ৬ টি প্রবেশমুখে অবরোধ করা হয়। এক পর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় তারা। এ সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব সহিংস ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ না করতে হুমকি দিচ্ছেন হেফাজত নেতারা। কুষ্টিয়ার ঘটনার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আরও কঠোর হয়েছে।
ঝুলে থাকা মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন। মামলাগুলো সচল করার পর হেফাজত নেতারা ফেঁসে যাবেন তা নিশ্চিত করে বলা যায়। পুলিশকে বলা হয়েছে শিগগির তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দিতে আদালতে। তাছাড়া আদালতে যেসব মামলা বিচারাধীন সেগুলোও নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানা গেছে।
সান নিউজ/এসএ