নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির ৮০ নেতাকর্মী আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্টে। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জামিন দিয়ে তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
জামিন আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। সোমবার (২৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি রিয়াজউদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে এদিন জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তার সঙ্গে ছিলেন, অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান আসাদ, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, শায়ের খান পাঠান, মো. রুকুনুজ্জামান সুজা ও মো. মাকসুদ উল্লাহ। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ, ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী, মেহেদী হাসান ও মো. কাজী আক্তার হোসেন।
জামিনের বিষয়ে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাস পোড়ানোর ঘটনায় সোমবার ১০টি মামলায় আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে আসেন বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী। এ সব মামলায় বিএনপির ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ৮০ নেতাকর্মীকে আগাম জামিন দেন আদালত। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জামিন দিয়ে ১২০ জনকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিননামা দাখিল করতে বলা হয়েছে।
গত ১২ নভেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় রোববার (২২ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আলাদা আলাদা ২৮টি জামিন আবেদন করা হয়। যে সব আবেদনের প্রত্যেকটিতে ১০ জনের জামিন চাওয়া হয়েছে। এ হিসেবে বিএনপির প্রায় ২৮০ নেতাকর্মী হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা। এর মধ্যে ৮০ জন জামিন পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বেঞ্চে এদিন কমপক্ষে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীর জামিন আবেদনের শুনানির জন্য (কজলিস্ট) কার্যতালিকায় আসবে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এসব আবেদন শুনানি শেষ হলে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নেতাদের জামিন আবেদন শুনানি হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, গত ১৫ নভেম্বর বাস পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা ১৮ আসনের প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ দলটির ১৫০ নেতাকর্মীর জামিন আবেদন করা হয়।
এরপর গত ১৮ নভেম্বর বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি রিয়াজউদ্দিন খানের হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ১২০ নেতাকর্মীর জামিন মঞ্জুর করেন। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জামিন দিয়ে তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
গত ১২ নভেম্বর ঢাকা ১৮ আসনের উপনির্বাচনের দিন, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর ৭টি থানায় ১৬টি মামলা হয়।
আইনজীবীরা জানান, ৩৮ জ্যেষ্ঠ নেতাসহ সাত শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের একজন ইশরাক হোসেন, যিনি আইসোলেশনে আছেন। অথচ তাকে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় আসামি করা হয়েছে। আরেকজন হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি উত্তরায় নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। অথচ তাকে খিলক্ষেত থানায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।
গত ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন চলাকালে বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ৭০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোট ১১টি বাস পোড়ানো হয়।
সান নিউজ/এম/এস