নিজস্ব প্রতিবেদক : ইতোমধ্যে হেফাজতে ইসলামের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটিতে ১২১ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন মহাসচিব আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমির রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতারা পেয়েছেন ৩৫টি পদ ।
মাওলানা মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে ২২ জন এবং নতুন আমির হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীর আত্মীয়-স্বজন আছেন ২০ জন। সব মিলিয়ে এ তিন জনের পক্ষ থেকেই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ৭৭ জন।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে হেফাজতে ইসলামের আল্লামা শফীপন্থিরা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ আহমদ শফী এ সংগঠনকে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রেখেছিলেন। নতুন কমিটির মাধ্যমে এটিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থি ২০ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ করা হয়েছে।
আত্মীয়করণ করা হয়েছে ব্যাপকভাবে। তারা বলেছেন, সারাদেশে ৩০ হাজার কওমি মাদ্রাসা থাকলেও মাত্র তিন ব্যক্তি কমিটির অর্ধেক অংশ নিয়ে নিয়েছেন। তা হলে অন্যদের প্রতিনিধিত্বে থাকার সুযোগ কোথায়?
জানা যায়, হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির নায়েবে আমির ওবায়দুল্লাহ ফারুক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামেরও নায়েবে আমির। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে সিলেট থেকে অংশ নেন।
জমিয়ত নেতা মুনির আহমদ হেফাজতের অর্থ সম্পাদক। তিনি বিগত নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরাসরি শামীম ওসমানের বিপক্ষে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।জমিয়তের আরেক নেতা শাহীনুর পাশা ধানের শীষ নিয়ে সুনামগঞ্জে নির্বাচনে অংশ নেন।
২০ দলীয় নেতাদের অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদেরও হেফাজতে পদ-পদবি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া হাবিবুল্লাহ আজাদী জামায়াতের রুকন বলে দাবি করা হয়েছে।
নতুন আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর মামাতো বোনের স্বামী এডভোকেট নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক। এখন হেফাজতে ইসলামের সহকারী আইনবিষয়ক সম্পাদক। আবদুল কাদের বাচ্চু যুব শিবিরের সারাদেশের সভাপতি ছিলেন।
কেবল তারাই নন, আরও ভয়ানক অভিযোগ করে বসেছেন হেফাজতে ইসলামের বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহি। তিনি বলেছেন, মীর মোহাম্মদ ইদ্রিস ও মুফতি হারুন ইজহার হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদেরও হেফাজতে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদে।
পদ-পদবির কথা উল্লেখ করে আত্মীয়করণের অভিযোগ তুলে মঈনুদ্দিন রুহি বলেন, ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা থেকে সাত জনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুর মাদ্রাসা থেকে আপন তিন ভাইকে রাখা হয়েছে। তারা হলেন- সালাহ উদ্দিন, কুতুব উদ্দিন ও হেলাল উদ্দিন। এদের মধ্যে কুতুব উদ্দিন হলেন হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর মেয়ের জামাই। তিনি বলেন, বাবুনগরীর রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশে ১৬টি ইসলামী রাজনৈতিক দল আছে। আর হেফাজতে ইসলামে স্থান পেয়েছেন কেবল দুটি দলের নেতারা।
নতুন কমিটি নিয়ে হেফাজতের অনেক দায়িত্বশীল নেতাই প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। একাধিক নেতা বলেন, এই কমিটি নিয়ে হেফাজতের মূল ঘাঁটি হাট হাজারী মাদ্রাসার অনেকে ভেতরে ভেতরে অসন্তুষ্ট। তাদের প্রত্যাশা ছিল হেফাজতে ইসলামের প্রধান দুই পদ হাটহাজারী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কিন্তু বাবুনগরী তাতে সম্মত হননি। তিনি বলেছেন, ঢাকার নেতাদের তিনি এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছেন। তবে নতুন কমিটির নেতারা দাবি করেছেন, হেফাজতে ইসলামে আগে থেকেই ২০ দলীয় নেতারা ছিলেন। এ নিয়ে তখন বেশি কথা হয়নি, এখন কেউ কেউ কথা বলার চেষ্টা করছেন।
হেফাজতের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী যখন ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি ছিলেন, তখনও ২০ দলের নেতা ছিলেন। মঈনুদ্দিন রুহিও ইসলামী ঐক্যজোট থেকে পদত্যাগ না করেই হেফাজতে ছিলেন। এখন এসব নিয়ে কথা বলা অবান্তর।
সান নিউজ/এসএ