নিজস্ব প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের জন্মদিনের একটি অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, তৈমূর আলম খন্দকার ও তার কন্যা ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খন্দকারকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তাদের হামলায় অন্তত ৩০ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী খন্দকার বাড়িতে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীরা রামদা, তলোয়ার ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে অনুষ্ঠানের ওই মঞ্চে থাকা চেয়ার টেবিল ও সাউন্ড সিস্টেম ভাঙচুর করে। মঞ্চ থেকে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে দেয় তৈমূর আলম খন্দকার, তার মেয়ে মার-ই-য়াম খন্দকার ও নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর মান্নাকে। ঘটনার সময় ধারণকৃত ফেসবুক লাইভে দেখা যায় স্থানীয় কিছু যুবককে সরকার দলীয় স্লোগান দিয়ে মহড়া দিতে। আকস্মিক এ হামলায় আশেপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তৈমূর আলম খন্দকারের ব্যক্তিগত সহকারী আলাল জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের রোগমুক্তি কামনা, তৈমূর আলম খন্দকারের জন্মদিন উপলক্ষে রূপসী খন্দকার বাড়িতে দোয়ার আয়োজন করা হয়। বিকাল ৪টার মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না, তৈমূর আলম খন্দকার, তার মেয়ে ব্যারিস্টার মার-ই-য়ামসহ অনেকেই। ওই সময়ে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
উপস্থিত লোকজনদের একের পর এক মারধর করতে থাকে। মঞ্চ থেকে নেতাদের ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হামলায় উপজেলা মহিলা দলের নেত্রী ফাতেমা, বিএনপির নেতা পিন্টু আহমেদ, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলমসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া হামলাকারীরা সেখানে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
তৈমূর আলম খন্দকার জানান, ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল শিকদারের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্নাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। এছাড়া পিটিয়ে আহত করা হয় তার অন্তত ৩০ জন কর্মীকে। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্দেশেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি দাবি করেন।
রূপগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল শিকদার বলেন, আমরা কোনো হামলা করিনি। ওই এলাকার ছাত্রলীগ যুবলীগ সহ অন্যান্য সংগঠনের যারা আছে তারা তাদের জিজ্ঞাসা করতে সেখানে যায়। যে কি অনুষ্ঠান চলছে। তখনও তাদের অনুষ্ঠান চলছিল। পরবর্তীতে তারা অনুষ্ঠান বাতিল করে। হামলার অভিযোগ মিথ্যা।
হামলার ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, আমরা বিরোধী দলকে মারধর করার মতো রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা করি না। তাদের নিজেদের মধ্যে ব্যাপক কোন্দল আছে। নিজেরা নিজেরা ভাঙচুর করে সেটার দায় আমাদের ওপর চাপাতে চাচ্ছে। তাদের কাছে নিশ্চয় ভিডিও বা ছবি আছে। আমাদের লোকজন সেখানে হামলা করেছে, এমন প্রমাণ দিতে পারলে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তৈমুর আলমের ৬৮তম জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলাম। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে ৪০-৫০ জন ছেলে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” স্লোগান দিয়ে মঞ্চের দিকে আসতে থাকে। সেখানে থাকা নেতা-কর্মীরা আমাকে নিরাপদে একটি কক্ষে নিয়ে আসে। হামলাকারীরা আমার গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ঘটনার এক ঘণ্টা পরও ঘটনাস্থলে পুলিশ আসেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে অনুষ্ঠানে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজীর বাড়ির পাশেই তৈমূর আলম তার বাড়িতে অনুষ্ঠান করছিলেন। অনুষ্ঠানে সরকারবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিতে নিষেধ করতে গিয়েছিলেন।
আহত ও ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশ সদস্যরা আছেন। তারা ভাঙচুর বা আহতের কোনো ঘটনা দেখেননি। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগও পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে নাগরিক ঐক্য। দলেরকেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাকিব আনোয়ার বলেন, দলের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমানকে মঞ্চে মানব ঢাল সৃষ্টি করে রাখা হয়েছিল। তারপরও তাকে রামদা দিয়ে আঘাত করা হলে তা ব্যানারে গিয়ে লাগে। এ সময় মাহমুদুর রহমান মান্না পড়ে গিয়ে আহত হন।