নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় এখন একটিই। তা হল- খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গ। আর এটিকে ঘিরে মুখে মুখে এখন প্রশ্নও অনেক। খালেদা জিয়া কি প্যারোলে মুক্তি পাচ্ছেন? রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্ত হবেন তিনি? না কি মানবিক প্রক্রিয়ায় জামিন? মুক্তির পর তিনি কোথায় যাবেন? লন্ডনে না কি অন্য কোথাও? না কি আদৌ কোনভাবে বের হতে পারছেন না কারাগার থেকে?
এমন সব প্রশ্নের মধ্য দিয়ে বিশ্বস্ত সূত্রে যতটুকু জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সনকে আপাতত প্যারোলেই মুক্তি দেয়া হতে যাচ্ছে এবং তা চলতি মাসের যে কোন দিন। প্যারোলে মুক্তির পর তিনি লন্ডনে তার বড় পুত্র তারেক জিয়ার কাছেই যাবেন বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে পর্দার আড়ালে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। প্যারোলের আবেদন করা হলে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখা হতে পারে বলে সরকারের তরফ থেকেও আভাস মিলছে।
তবে প্যারোলে মুক্তির ক্ষেত্রে সরকার বেশ কিছু শক্ত শর্ত আরোপ করতে পারেন বলে জানা গেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা। শর্তগুলো সম্পর্কে যদিও তেমন কিছু জানানি তারা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার দুই বছর পার হয়ে গেলেও তাঁর মুক্তির স্বপক্ষে জোড়ালো কোন ধরণের জনসমর্থন সৃষ্টি করতে পারেনি বিএনপি। আইনী প্রক্রিয়ায়ও বিফল বারবার দলটি। এ অবস্থায় আপাতত বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের চেয়ে দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তির বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে সবকিছুর ছক তারেক জিয়া নিজেই করছেন বলে জানা গেছে। আর এসব কিছুর প্রক্রিয়াও অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে প্যারোল বা সাজা মওকুফের আবেদনে খালেদা জিয়া আপাতত রাজি নন বলে জানা গেছে। তাঁর জামিনের জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অগ্রসর হতে বলেছেন তিনি। এমন নির্দেশনার পরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এরই অংশ হিসেবে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন চেয়ে ফের হাইকোর্টে আবেদন করা হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ সপ্তাহের মধ্যেই দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি চেয়ে নতুন করে আদালতে আবেদনকরা হবে। জামিনের ক্ষেত্রে চিকিৎসার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হবে জানিয়ে তারা বলছেন, ইতিমধ্যে তার পরিবার মেডিকেল বোর্ডের কাছে তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড চেয়ারপারসনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো নতুন করে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর হয়তো তার কোন চিকিৎসা বিদেশে প্রয়োজন সেটা তারা জানাবে।
আগে জামিন না দিলেও এবার এ গ্রাউন্ডে তাকে জামিন দেয়া হবে বলে আশা করছেন আইনজীবীরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মঙ্গলাবার সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, আমাদের দল থেকে আজ পর্যন্ত প্যারোল নিয়ে কোনো কথা বলিনি । 'খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। সরকারের স্বার্থেই তাকে মুক্তি দেওয়া উচিত। সংবিধান অনুযায়ী তিনি (খালেদা জিয়া) জামিন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সরকার জামিন দিচ্ছে না।'
খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন দুই বছরেরও বেশি সময়। বিএনপি আইনী লড়াইয়ের সঙ্গে রাজপথেও আন্দোলনের চেষ্টা করে যাচ্ছে তাঁর মুক্তির জন্য। কিন্তু খালেদার মুক্তির বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সরকারী দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বিএনপি মহাসচিবের ফোনে কথপোকথনের পর থেকে। ওইদিন ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে মির্জা ফখরুল তাঁকে ফোন দিয়েছেন।
এর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সনের পরিবারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন জানান উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য।
পরিবার এবং দলের একটি অংশ যে কোনো মূল্যে তাকে কারামুক্ত করে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে প্যারোলে মুক্তি নিয়েও তাদের আপত্তি নেই। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বিএনপির কয়েক নেতা এবং পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করছেন। আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিরও চেষ্টা করছেন তারা।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুটি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া ১৭ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে থাকার দুই বছর পুরো হয়েছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি। বর্তমানে তিনি কারাবন্দি হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা চলমান রয়েছে।