প্রবাসী ভোটিং পদ্ধতি বাছাইয়ে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনদের সমর্থন আশা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, দলের সমর্থন না পেলে ইসির সব ধরনের উদ্যোগ বিফলে পর্যবসিত হবে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনে অংশীজনদের সঙ্গে আয়োজিত সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছোট পরিসরে হলেও পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং ও প্রক্সি ভোটিংয়ের যে কোনো পদ্ধতি চালু করার বিষয়ে উদ্যোগী বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
সিইসি বলেন, “লাগসই একটা অপশন আমরা চালু করতে চাই। আপনাদের সমর্থন চাই। ছোট পরিসরে হলেও যাত্রা শুরু করতে চাই।... রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি সমর্থন না দেন আমাদের যত এক্সারসাইজ আছে ইট উইং অল অ্যান্ড ইন ফিউটিলি।”
শুরুতে সিইসি বলেন, “আজ আমাদের জন্য স্মরণীয় দিন। ইসির এ আয়োজনে অংশ নেওয়ায় সম্মানিত বোধ করছি। আপনাদের উপস্থিতিতে আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের সব ধরনের কাজে আপনাদের সমর্থনের পরিচয়।”
দল, গণমাধ্যমসহ সবার আগ্রহ ও সমর্থনের কথা তুলে ধরেন সিইসি। তিনি বলেন, “আমরা যখন দায়িত্ব নেই, প্রথম থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিং আগামী নির্বাচনে চালু করার বিষয়ে উদ্যোগী হই। আমরাও ওয়াদাবদ্ধ, প্রবাসীদের ভোটের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাও জাতির কাছে একই ওয়াদা করেছেন।”
তিনি জানান, “প্রবাসীরা যখন করেন বা কথা বলেন তাদের ভোটের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে এসেছেন বরাবরই। গণমাধ্যমেও লেখালেখি দেখি, রাজনৈতিক নেতারাও একই বিষয়ে সোচ্চার।”
সিইসি বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই এ বিষয় নিয়ে কাজ করছি। ইনহাউজ এক্সারসাইজ করেছি, প্রতিষ্ঠান বিশেষজ্ঞদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়েছি। লাগসই অপশন যেটা আমরা ইন্ট্রোডিউস করতে পারি, সেটা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
দেশের আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক বাস্তবতা, লেভেল অব এডুকেশন-সব কিছু মিলিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, “আমাদের বিশেষজ্ঞরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন কয়েকমাস ধরে। কিছু সাজেশন দিয়েছেন। আমাদের সময়ের স্বল্পতা, সীমাবদ্ধতার মধ্যে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা কি করছি তা তুলে ধরা হচ্ছে। আমরা কী করেছি, কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি, অভিজ্ঞতা কী তা শেয়ার করতে চাই।”
অংশীজনদের মূল্যবান পরামর্শ পেলে তা বিবেচনার আশ্বাস দেন সিইসি। এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “আপনাদের পরামর্শ নিয়েই আমরা এগোতে চাই। আর সর্বোপরি, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি সমর্থন না দেন আমাদের যত এক্সারসাইজ আছে ইট উইং অল অ্যান্ড ইন ফিউটিলিটি।”
যদি আমরা রাজনৈতিক দলের সমর্থন না পাই সব নিষ্ফলে পর্যবসিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, “কারণ, এ সমস্ত কাজে প্রবাসী ভোটিং যে সিম্পলিসিটি, আইন কানুন পরিবর্তন, কম খরচ ও মানুষের বিশ্বাস নিশ্চিত করে আমাদেরকে আগাতে হবে।”
বিশিষ্ট নাগরিকদের মাধ্যমে ইসির কাজ জাতিকে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি। সেমিনারে নিজের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি পরবর্তীতে লিখিতভাবেও মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান সিইসি। আগামী নির্বাচনে ছোট পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটিং চালু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
সিইসি বলেন, “আমরা পরবর্তী নির্বাচনে অন্তত শুরু করতে চাই প্রবাসীদের ভোটিং। অন্তত যাত্রা শুরু হোক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শুরু করে আবার এগোতে পারেনি। অনেক দেশ চালু করেছে, অনেক দেশ চালু করতে পারেনি। আমরা চালু করতে চাই, অন্তত সীমিত পরিসরে শুরু করতে চাই। আমরা চাই নেক্সট ইলেকশনে শুরু হোক, আপনাদের সমর্থন চাই। আশা করি, সমর্থন পাবো।
সেমিনারে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২১ দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে ইসমাইল জবিউল্লাহ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স অংশ নেন। জামায়াতের অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন, মতিউর রহমান আকন্দসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট এর সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্নাসহ সাধারণ সম্পাদক শাহ জামাল আমিরুল উপস্থিত আছেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া নিবন্ধিত দলের মধ্য এলডিপি, সিপিবি, জেএসডি, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, এনপিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিত, এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ জাসদ, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যম, কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছেন।
সাননিউজ/ইউকে