নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল : ক্ষমতায় নেই। রাজপথেও নেই বরিশাল বিএনপি। ফলে দিনে দিনে জরাজীর্ন হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কাঠামো। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবী, বরিশালে রাজনীতির প্রেক্ষিতে একমুখি নেতৃত্বের দরুণ বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে স্থানীয় নেতৃত্ব। নেতাদের দাবী বড় কোন আন্দোলন না হোক, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করাও হচ্ছে না এখন। যে কারনে অনেক নেতা আগ্রহ হারিয়ে দলের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। সেই তালিকায় শুধু পদ প্রত্যাশীরা নন, পদধারীদের সংখ্যাও কম নয়।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় বিএনপির বর্তমান যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি করে ১৭১ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। যে কমিটিতে কামরুল আহসান শাহীন ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর শাহীনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একমুখি হয়ে যায় দলটি। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় সরোয়ারের ব্যাক্তিগত সহচার্য জিয়া উদ্দিন সিকদারকে।
স্থানীয় সিনিয়র নেতাদের দাবী, নিজের অবস্থান ধরে রাখতে মজিবর রহমান সরোয়ার নতুন কোন নেতাকে নেতৃত্বের সুযোগ দেন না। এমনকি বেকায়দায় না পড়লে কাউন্সিলও করেন না। বিপরীতে ক্ষমতাশীনদের সাথে লিঁয়াজো করে ঠিকাদারী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বড় কোন কর্মসূচি থাকলে সীমাবদ্ধভাবে শেষ করে ঘরেই সময় কাটান তিনি। তাছাড়া দলের নেতাকর্মীদের সাথেও দেখা করতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, দলের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কারণ দেখিয়ে নিজেদের আবদ্ধ রাখলেও বিএনপির কোন নেতাই তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে নেই। ফুলে-ফেঁপে উঠছেন দিনকে দিন। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর নামে পরিবারশুদ্ধ দেশের বাইরে রেখেছেন। এমনকি সরোয়ার, জিয়াসহ পদধারীদের দেশের বাইরে স্থায়ী বাড়ি রয়েছে বলেও বলছেন দলীয় নেতারা।
তবে অভিযোগ মানতে নারাজ নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া। তিনি জানিয়েছেন, বিএনপির নেতারা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হচ্ছেন এমন তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য। বরং মিথ্যা মামলা, হয়রানির কারণে ঘরেই থাকতে পারছেন না।
জিয়া মনে করেন, কমিটিতে সবাই যোগ্যতা অনুসারে স্থান করে নিয়েছেন। তবে বিভিন্ন কারণে দিনে দিনে অনেকেই নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। নিস্ক্রিয় মানে তারা দল ত্যাগ করেছেন তা কিন্তু না। মূলত সরকারে নানামুখি ষড়যন্ত্রে এই ভূমিকায় অবর্তীণ হতে হয়েছে। তবে, দল পূর্নগঠনের সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
বরিশাল নগর বিএনপি বলছে, মেয়াদ পার হয়ে গেলেও ওয়ার্ড কমিটিগুলো করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মহানগরীর থানা কমিটিগুলো এখনো রয়ে গেছে অধরা। তার প্রধান কারণ দলের কার্যক্রম ছাড়াও এলাকায় থাকলে ক্ষমতাশীন এবং শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের নানামুখি হয়রানি ও হামলার শিকার হতে হয়।
দলের সাথে এক সময়ে ত্যাগী নেতাদের দূরত্বের বিষয়টি স্বীকারও করলেন নগর বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন। তিনি বলেন, “২০১৩ সালে কমিটি ঘোষণার পর থেকে অনেক পদধারী নেতা রয়েছেন যারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। আন্দোলন, জাতীয় ও সিটি নির্বাচনে তারা অংশগ্রহন করেননি। এই সমস্ত নেতাদের দল থেকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনতে বরিশাল থেকে স্থানীয় বিএনিাপ পূর্নগঠনের আবেদন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।”
দলটির সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন নগরীর গুরুত্বপূর্ণ অথচ নিস্ত্রিয় নেতাদের কেন্দ্রে অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে সহ-সভাপতি কেএম শহীদুল্লাহ সহিদ ও মনিরুল ইসলাম মনির, যুগ্ম সম্পাদক মীর জাহিদুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ হোসেন, প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহিন, স্ব-নির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন, সহ-সাধারন সম্পাদক আ ন ম সাইফুল আহসান আজিম ও সৈয়দ জামাল হোসেন নোমান, যুব বিষয়ক সম্পাদক হারুন-অর রশিদ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আবুল হাসান লিমন।
এসব নেতাদের মধ্য থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন নেতা স্বীকার করেছেন, দলে জীবনভর ত্যাগ করেও তারা ভিলেজ পলিটিক্সের শিকার হচ্ছেন। মূলত, মজিবর রহমান সরোয়ারের একক নেতৃত্বের জন্য দলকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। সরোয়ারের কুক্ষি থেকে বরিশাল বিএনপিকে মুক্ত না করা হলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও বরিশালে বিএনপি দাঁড়াতে পারবে না বলে মনে করেন এই নেতারা।
সান নিউজ/এস