নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘দেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতি নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে যারাই অভিযোগ করুক, তা আমাদের সংবিধান পরিপন্থী। কারণ আমাদের সংবিধানের মূলকথাই হল জনগণ’। বিএনপি নেতাদের বিদেশি কুটনীতিকদের দ্বারস্থ হওয়ার বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক|
বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতার বাইরে থাকে তারাই দেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয়, তাদের কাছে তুলে ধরা হয় দেশের বিভিন্ন বিষয়। এমন কি লন্ডনের হাউজ অব লর্ডস-এ বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় আওয়ামী লীগ-বিএনপি, যেখানে সভাপতিত্ব করেন বৃটেনের সংসদ সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে সমাজের বিশিষ্ঠজনেরা বিষয়গুলো নিয়ে তুমুল সমালোচনা করে এলেও তাতে কর্ণপাত করছে না বিরোধী দলগুলো।
সদ্য সমাপ্ত ঢাকার দুই সিটি করেপোরেশন নির্বাচনের আগে বিদেশি কুটনীতিকদের কাছে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরা, বিএনপি’র কোন কোন কোন প্রার্থীর বাসায় কুটনীতিকদের বৈঠক, নির্বাচনে বিদেশি মিশনগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশিদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নাম পাঠানো নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও বিদেশি কুটনীতিকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন বিএনপি নেতারা। তুলে ধরলেন সদ্য-সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট ‘কারচুপির’ অভিযোগ।
গতকাল রবিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বিএনপি’র দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন কূটনীতিকদের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। কূটনীতিকদের সামনে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা, ইভিএমে কারচুপি, কেন্দ্র দখল, গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণসহ নির্বাচনের সার্বিক চিত্র তথ্য-উপাত্তসহ উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ডেনমার্ক, নরওয়ের রাষ্ট্রদূতসহ জার্মানি, তুরস্ক, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১৩টি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শামা ওবায়েদ, আসাদুজ্জামান, জহিরউদ্দিন স্বপনসহ আরও অনেকে।
বৈঠকের পর অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণের বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন কথা বললেও আরেক প্রার্থী তাবিথ আউয়াল কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারাও সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
তবে ইশরাক হোসেন বলেন, দলের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির পক্ষ থেকে একটা প্রেজেন্টেশন দেয়া হয়েছে কুটনীতিকদের কাছে। তাতে এই নির্বাচনের কারচুপি, জালিয়াতি এবং কীভাবে ফলাফল স্থগিত করে পরবর্তী সময়ে গভীর রাতে তা পরিবর্তন করা হয়, সেসব বিষয় দেখানো হয়েছে।
বিদেশি কুটনীতিকদের কাছে অভিযোগ কেন, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা তো আমাদের উন্নয়ন সহযোগী দেশ। তারা জানতে চেয়েছেন ইলেকটেরাল প্রসেসটা কীভাবে সংঘটিত হচ্ছে। তারা আমাদের এখানে বিভিন্ন সময়ে ডেমোক্রেসির ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তাদের একটা আগ্রহ রয়েছে, এত বড় নির্বাচন হয়ে গেল- সেটা কীভাবে হলো?
তাই সেগুলোর বিষয়ে আমরা তাদেরকে প্রেজেন্টেশন দিয়েছি। মেয়র নির্বাচনের বিভিন্ন স্তরে কারচুপির ধরণ, ভোটকেন্দ্র দখল, ফলাফল স্থগিত করে পরবর্তী সময়ে গভীর রাতে তা পরিবর্তন কীভাবে করা হয়েছে, তার সবকিছু আমরা আমাদের মতো তুলে ধরেছি। আমরা কোনো অভিযোগ করছি না। তারা জানতে চেয়েছে, আমরা তাদেরকে জানাচ্ছি।’
বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে বিএনপি’র এসব অভিযোগ তুলে ধরার প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক সান নিউজকে বলেন, ‘এসব করে বিএনপির কোন লাভ হবে না। যদি কোন অভিযোগ থাকে তবে তা জনগণের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরতে হবে। তাছাড়া বিদেশিরা কাজ করে তাদের নিজেদের কল্যাণে। আমাদের অভিযোগ শুনে তারাতো নিশ্চয় আমাদের কল্যাণে কোন কাজ করবে না।’ নিজেদের বিষয় নিয়ে অন্যদের কাছে নালিশ করতে যাওয়াটা ‘রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত’ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।