অন্তরা আফরোজ: আধুনিক বিশ্বের বহু দেশ নিজেদেরকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট শান্তিকামী দেশ হিসাবে তুলে ধরতে চায়। যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তুরস্ক, জার্মানী ছাড়াও এই দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কাতার, মিশর, কুয়েত, ওমান। সংযুক্ত আরব আমিরাত একসময় মধ্যপ্রাচ্য সংকটে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে দেশটির অভ্যান্তরীন আর্থিক সমস্যার কারণে অন্য রাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিতে পারে না। এখানে বাকি দেশগুলোর চেয়ে কাতার এগিয়ে। সবাইকে ছাপিয়ে কাতার সংকট সমাধান ও আলোচনার উদ্যোক্তা দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিভিন্ন সময় বৈশ্বিক নানা সংকটে কাতারকে দেখা গিয়েছে আলোচনার টেবিলে মধ্যস্থতা করে দিতে।
আরও পড়ুন: দুর্বৃত্তের গুলিতে ২ জন নিহত
১৮শ শতকের শেষভাগ থেকে সৌদি আরব বংশোদ্ভুত আল-থানি গোত্রের লোকেরা কাতার অঞ্চলটিকে একটি আমিরাত হিসেবে শাসন করে আসছে। বাংলাদেশের মত কাতারও ১৯৭১ সালে পূ্র্ন স্বাধীনতা লাভ করে। প্রায় ২০ লাখ নাগরিক সম্মৃদ্ধ রাজতান্ত্রিক দেশ কাতারের আমীর হলেন একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকার প্রধান। বর্তমান আমীর তামিম বিন হামাদ আল থানি ২০১৩ সালে তার পিতা হামাদ বিন খলিফা আল থানির হাত থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে দেশটির আমীর হামাদ বিন খলিফা আল থানি দেশটিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি দিতে অবদান রাখেন। এরপরই বর্তমান আমীর তামিম দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে আসেন।
কাতার যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সেদেশে সেনা ঘাটি স্থাপন করার সুযোগ দিয়েছে, তেমনি তালেবান, ইসরাইলসহ বিশ্বের সকল বিবাদমান গোষ্টিকে আলোচনা বা সমঝোতার দ্বার উন্মুক্ত রাখতে অফিস খুলতে অনুমতি দিয়েছে। এমনকি বিশ্বের শক্তিশালী গণমাধ্যম আল জাজিরাকেও স্বাধীন ও নিরাপদ কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। আল জাজিরার জন্য কাতারকে একসময় প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান সম্মিলিতভাবে বয়কট করে। তবুও কাতার আল জাজিরার প্রতি সমর্থন থেকে একচুলও সরে আসেনি।
২০১৭ সালে রাশিয়া-সিরিয়া যুদ্ধে কাতারই জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপার নিয়ে সমঝোতা করা চেষ্টা করে। ২০১৯ সালে তালেবানদের হাতে আটক জিম্মিদের মধ্যস্থতাও কাতারই করেছিল। ২০২১ সালে তালেবান যখন ক্ষমতায় আসে তখন হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সামনে তুলে ধরা হয়। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনায় স্বাগতিক দেশ হিসাবে সামনে আসে কাতার।
আরও পড়ুন: অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ হবে
কাতার ছোট দেশ হলেও তরল গ্যাস সমৃদ্ধ দেশটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের অপরিহার্য করে তুলে ধরেছে। প্রতিবেশি দুই প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বলয় থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে সবকিছু।
রাষ্ট্রীয় সমঝোতার বাইরেও বরেণ্য ও আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাক্তিদেরকেও কাতার সুযোগ দিয়ে থাকে। ভারতীয় চিত্র শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন, ড. জাকির নায়েক এর অন্যতম। ১৯৭৫ সালে জর্ডানে ইসরায়েলি হত্যাকান্ডের প্রচেষ্টা থেকে বাঁচার জন্য কাতারে আশ্রয় নেয় অনেকেই। অন্যদিকে হামাসের সুপ্রিম লিডার ইসমাইল হানিয়াও কাতারে থাকেন। কয়েক দশক ধরে এমন সু-সম্পর্কের ফলে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
২০০৮ সালে ইয়েমেনের সরকার ও হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে কাতার মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে লেবাননের পক্ষ থেকে মীমাংসা এবং ২০১২ সালে ফিলিস্তিনি হামাস ও কাতারের মধ্যকার আন্দোলনের সমঝোতায় কাতার বড় ভূমিকা পালন করে।
বিশ্ব রাজনীতিতে যে দেশ যত অর্থশালী, সেই দেশ তত গুরুত্ব পায়। কাতারে পর্যাপ্ত তেলের রিজার্ভ রয়েছে। যা তাদের আয়ের অন্যতম বড় উৎস। কাতারের তেলের ওপর ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশই নির্ভরশীল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাতার নিজেদের গড়ে তুলছে মধ্যস্থতা নামক ভিন্ন পন্থায়।
লেখক : শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ