অন্তরা আফরোজ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একই সাথে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাও রেকর্ড গড়লেন। তিনিই হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের টানা চতুর্থবারের মতো প্রধান মন্ত্রী। যদিও ইতিপূর্বে তিনি এক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব (১৯৯৬- ২০০১) পালন করেছেন। বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি ইতোমধ্যে টপকেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের ১১ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদকে। এখন তার সামনে দীর্ঘ রেকডের হাতছানি দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের ১৮ বছরের মেয়াদ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সরকার যে উন্নয়ন করেছে- সেগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করতে সফল হয়েছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। সেকারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা যে ফের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিরষ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে তিনি তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। একইভাবে তিনি নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেছিলেন। সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্নফুলি ট্যানেলসহ দেশের অভ্যন্তরে দৃশ্যমান হয়েছে বড় বড় মেগাপ্রকল্প।
আরও পড়ুন: বিজয় দিবস বাঙালির শৌর্য-বীর্যের প্রতীক
পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলোতে দীর্ঘসময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের উদাহরণ মালয়েশিয়া, উন্নতির কারিগর প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের, যিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে ৫ বার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে একটানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকেন। তার সময়ে মালয়েশিয়া আর্থিকভাবে একটি উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। মাহাথীর মোহাম্মদ মালয়েশিয়াকে উন্নতির মহাসড়কে নিয়ে যাবার ফলে বর্তমানে মালয়েশিয়াকে আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি সম্ভব হয়েছে একজন দক্ষ শাসক দ্বারা একটানা রাষ্ট্র পরিচালনার ফলে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অন্যতম উন্নত, সফল ও সমৃদ্ধশালী দেশ সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের উন্নতির মহানায়ক বলা হয় লি কুয়ান ইউকে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করা লি কুয়ান টানা ৩০ বছর দেশ পরিচালনা করেন। এই তিন দশকে ভগ্ন অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে লি কুয়ান ইউ সিঙ্গাপুরকে এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশে পরিণত করেন । সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সুবিধা বঞ্চিত একটি দেশ ছিল। এমনকি প্রাকৃতিক সম্পদের কোনো আশীর্বাদও ছিল না দেশটিতে।
আরও পড়ুন: দেশনায়ক থেকে বিশ্বনায়ক
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেকটি দেশ কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের একটানা ৩৮ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতা পরিচালনার ফলে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানের অমিত সম্ভাবনার দেশে পরিণত হয়েছে কম্বোডিয়া।
রাষ্ট্র কোন প্রকল্প নয়; এটি একটি স্থায়ী ব্যবস্থাপনা। ফলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া রাষ্ট্রকাঠামোর স্থায়ী উন্নয়ন আশা করা যায় না। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনা, পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনৈতিক সক্ষমতার সাথে বাংলাদেশের তুলনা চলে না। বাংলাদেশের যেকোনো উন্নয়ন পলিসি ও পররাষ্ট্রনীতি সরকারের ধারাবাহিকতা ও স্থায়িত্ব দ্বারা প্রভাবিত। বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের ফলে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তিত হয়ে যায়। ফলে কূটনৈতিক বিবেচনায় দেশটি আস্থার সংকটে পড়ে; বাঁধাগ্রস্ত হয় উন্নয়ন পরিকল্পনা। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত স্বল্প মেয়াদের সরকার পরবর্তী মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। স্বল্প অভিজ্ঞতার কারণে দেশের বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। অপরপক্ষে দীর্ঘমেয়াদি সরকার ভুল ভ্রান্তি শুধরে নিয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে রাষ্ট্রকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে। একটি দক্ষ, শক্তিশালী, জনগণের সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক দল এবং ভিশনারী ও ক্যারিশমাটিক লিডারের দায়িত্বশীল নেতৃত্বে একটানা দেশ পরিচালনা করলে রাষ্ট্র ও জনগনের উন্নয়ণ অবশ্যম্ভাবী।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এই ঐতিহাসিক মেয়াদে শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে তোলার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগনের কল্যাণে তার দায়িত্ব পুর্ন করে পরবর্তী মেয়াদের দায়িত্বভার গ্রহণের মাধ্যমে বাঙালি নারীর ক্ষমতায়নের হাজার বছরের মাইল ফলক রেখে যাবেন।
এই হোক বাংলার উন্নয়নের প্রত্যাশা।
জয় হোক আমজনতার
জয় হোক মহান স্বাধীনতার
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।