নাসিমা আক্তার নিশা: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হয়েছে ১ জুন ২০২৩। বাজেট ঘোষণার পর সবাই নিজ নিজ খাতে কত বরাদ্দ হয়েছে তার হিসাবে ব্যস্ত। আমাদের দৃষ্টি ছিল ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তাদের বরাদ্দের দিকে।
আরও পড়ুন: সংস্কারমুখী বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজন সুসমন্বয়
এবার অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ক্ষেত্রে ঋণদান ব্যবস্থার সংস্কার করে এই প্রকল্পে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষেত্রগুলো বন্ধক ছাড়াই মোট ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। এই ঋণের সুদ ১ শতাংশ হারে কমানো হবে।
এরমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে ২৫ হাজার নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমের নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
বর্তমান সরকার নারী উদ্যোক্তাদের অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। পলক বলেন, নারীদের যে যেই সেক্টরে দক্ষ বা আগ্রহী তাদের সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি তারা যাতে ব্যবসা শুরু করতে পারেন এজন্য নগদ ৫০ হাজার পর্যন্ত অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: কৃষকের ভাবনায় জাতীয় বাজেট
স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণদের জ্ঞানভিত্তিক, দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মশক্তিতে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে। নিঃসন্দেহে এটি আনন্দের খবর।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটটি অনেক বড় আকারের বাজেট। প্রতিবারের মতো এবারের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে। এই সময়ে বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে অনলাইনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়কে মার্কেটপ্লেসের স্বীকৃতি দিয়ে সরকার ভ্যাট আইনের কার্যক্রম সুস্পষ্ট করেছে।
আমাদের দেশে দেশীয় পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জোয়ার চলছে। অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে যারা দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন নিজ নিজ এলাকা থেকে।
এতে এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই যেমন—মার্কেটপ্লেস, খুচরা বিক্রেতা, পরিবহনকারী, তাদের নিজ নিজ ভ্যাট প্রদান ও দায়িত্ব সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা পাবেন।
আরও পড়ুন: উন্নয়নে সামাজিক মূলধনের ভূমিকা
সরকারের এই সময়োপযোগী উদ্যোগ ব্যবসা সহজ করতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এই খাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন। পাশাপাশি এই ব্যাখ্যা দেওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সহজে ভ্যাট প্রদানকারীদের শনাক্ত করতে পারবে, যা ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়াকে আরও জোরালো করবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে দীর্ঘদিন কাজের সুবাদে তা আমাকে বেশ আশাবাদী করেছে, সরকার আমাদের এই খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে ভাবছে।
আমি খুব আশাবাদী নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে। করোনা মহামারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কাজের জায়গা করে দিয়েছে নানাভাবে, আমার বিশ্বাস ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী এসএমই উদ্যোক্তারা আরও দীর্ঘমেয়াদে কাজের সুযোগ পাবে এবং তাদের জীবনমান উন্নত হবে।
আমাদের দেশে দেশীয় পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জোয়ার চলছে। অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে যারা দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন নিজ নিজ এলাকা থেকে। এতে করে প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে তেমনি মূল অর্থনৈতিক স্রোতও সমুন্নত হচ্ছে।
দেশীয় পণ্যের বড় মার্কেটপ্লেস তৈরি হয়েছে এবং এর চাহিদা কিন্তু ব্যাপক।
আরও পড়ুন: শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশ চাই
বর্তমান বাজেটে ঘোষিত হয়েছে বিদেশি পণ্য বিশেষ করে বিদেশি পোশাকের ওপর শুল্ক মুক্ত করা হবে বা দাম কমানো হবে। এটা যদি হয় তাহলে আমাদের দেশে দেশি পণ্যের জোয়ার থেমে যাবে। ভেঙে যাবে এই মার্কেট। সহজলভ্যতার কারণে এই পণ্যের বাজার অনেক বড় হয়ে যাবে এবং এতে করে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ধ্বংস হয়ে যাবেন।
বর্তমান বাজেটে ঘোষিত হয়েছে বিদেশি পণ্য বিশেষ করে বিদেশি পোশাকের ওপর শুল্ক মুক্ত করা হবে বা দাম কমানো হবে। এটা যদি হয় তাহলে আমাদের দেশে দেশি পণ্যের জোয়ার থেমে যাবে।
স্থানীয় শিল্প উন্নয়ন বাধা প্রাপ্ত হবে। আমি অনুরোধ করব দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদের দিকে খেয়াল রেখে পণ্যের বাজারে চাহিদা ধরে রাখার জন্যে বিদেশি পণ্যের ওপরে শুল্ক বৃদ্ধি করা হোক।
বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক মুক্ত হলে দেশে একদিকে যেমন বিদেশি পণ্যের প্রসার বাড়বে, ক্রেতা বেশি তৈরি হবে, অপরদিকে এতদিনে গড়ে ওঠা দেশীয় উদ্যোক্তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: ঈদের অর্থনীতিতে নারীর অবদান
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত আড়াই বছরে দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। বর্তমানে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য এই খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর তথ্য অনুসারে, ই-কমার্স বাজারের আকার ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, যা গড়ে বার্ষিক ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশে ২০২১ সালের শেষে ই-কমার্স বাজারের আকার ১৬ হাজার কোটি টাকা ছিল। ই-ক্যাব ধারণা করছে ২০৩০ সালের শেষ নাগাদ এটি ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে। যদি তাই হয় সরকারি নানান সহযোগিতা আমাদের জন্য দারুণ উপলক্ষ্য।
লেখক:
নাসিমা আক্তার নিশা
প্রেসিডেন্ট, ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)