ছবি : সংগৃহিত
মতামত

মায়েদের অর্জন শুধুই একাকিত্ব

ড. নূর জাহান সরকার : বিশ্বে মায়েরা বড়ই একাকিত্বে ভুগছেন। ভুগছেন মানসিক বিধ্বস্ততায়। দিন যায় রাত আসে, রাতের পরে দিন, মায়ের জীবনে বিরাজমান শুধুই রাতের আঁধার। এক অমানিশার অন্ধকার যেন মাকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখে যে আঁধারের শেষ নেই। কী হতে কী হয়ে গেল।

আরও পড়ুন : স্মার্ট জনশক্তি স্মার্ট বাংলাদেশের প্রধান ভিত্তি

উন্নত বিশ্বের আদলে জীবনের সব কিছুই আমাদের জীবনে একের পর এক এসে গেল। উন্নত বিশ্বে একটি বয়সে এসে আর কেউ মায়ের সান্নিধ্যে থাকছে না, তার একজন বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গী চাই, নয়তো সমাজে হতে হয় হেয়প্রতিপন্ন। বন্ধুদের থেকে শুনতে হয় এ কথা সে কথা, যেমন তোমার মানসিক পরিপক্বতার ঘাটতি নেই তো? নয়তো তোমার কেন এখনো যুগল জুটল না? দেখা যায় একসময় তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, সঙ্গীর সাথে শুরু করে লিভ টুগেদার। আমাদের দেশে এটা এখনো আসেনি, তবে আমাদের সন্তান যারা বিদেশে সেটেল্ড হয়েছে তাদের মধ্যে এ প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেছে অনেকটাই। ওরা লিভ টুগেদার-এ এখন জীবনও কাটাচ্ছে। বিয়ে নেই, সংসার নেই, সন্তান নেই, আছে ডিপ্রেসন।

আমাদের দেশে এখনো তা নেই বটে, কিন্তু আমাদের ছেলে-মেয়ে যারা বিদেশে থাকছে দেশী কিংবা বিদেশী বৌ কিংবা জামাই নিয়ে সংসার করছে তাদের মধ্যে এক প্রকার মনোভাব পোক্ত হয়ে গেছে যে, বাবা-মা কাউকে সাথে রাখা যাবে না, যেমন রাখে না ওখানকার ছেলে-মেয়েরা। কেন? তাহলে তো তাদের কোনো প্রাইভেসি রইল না। আর এই প্রাইভেসির কারণেই নাকি শেষ বয়সে মাকে বা বাবাকে তাদের সাথে রাখা সম্ভব নয়। তাছাড়া ওসব দেশে বুড়োদের স্বাস্থ্যবীমার প্রশ্নও কঠিন। নাগরিকত্ব তো অত সহজ কিছু নয়।

আরও পড়ুন : শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশ চাই

নিজ দেশের মধ্যেও ওই বাতাস লেগে গেছে। উন্নত জীবনপ্রাপ্ত সন্তানরা সাধারণত শহুরে জীবনে স্থায়ী হয়ে যায়। মাকে তাদের সাথে রাখা তাদের পোষায় না। মা যদি শহরেও তার নিজের বাড়িতে থাকেন সে বাড়িতে আমাদের ধর্ম মতে/কৃষ্টি মতে ছেলেটির থাকার কথা থাকলেও মায়ের কাছে থাকা চলবে না। ওই যে পশ্চিমা বাতাস গায়ে লেগেছে। আমাদের পশ্চিমা কালচারে আসতে হবে। না হলে স্মার্ট তো হলাম না। সমাজে স্মার্টনেস বলতে একটা কথা আছে না!

গ্রামের মায়েদের তাদের বাড়িতে শরিকদের ছেলে-মেয়েরা যারা উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি তাদের সাহচর্যে দিনের কিছুটা সময় মন্দ কাটে না, কিন্তু শহুরে মায়েদের তাদের জীবনে একাকিত্ব আর একাকিত্ব। বর্তমানে বিশ^জুড়ে একাকিত্বই নাকি সবচেয়ে বড় রোগ, এ রোগ থেকে ডিপ্রেসন, ডিপ্রেসন থেকে নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামন্দা প্রভৃতি এবং এই প্রভৃতি থেকে হার্ট ডিজিজ, কিডনি ফেইলিউর; নতুন দেখা দিয়েছে ফেটি-লিভার, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি। এভাবে ভুগে ভুগে অচিরেই মৃত্যু। মৃত্যুকালেও সন্তানের দেখা নেই। কী সুন্দর সব সিস্টেম ছেলে-মেয়েদের হাতের মুঠোয় এসে গেছে যার, যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে বলি আর বিদেশেই বলি, সন্তানরা নিশ্চিন্ত। কী সে সিস্টেম? একটি সিসি ক্যামেরা ও একজন ফুলটাইম কেয়ার টেকার। তা না হলে বৃদ্ধাশ্রম। ধীরে হলেও প্রয়োজনানুযায়ী দিনে দিনে বৃদ্ধাশ্রম কম গড়ে উঠছে না। ঘরে ঘরে বৃদ্ধদের জন্য কেয়ারটেকার সার্ভিসের জন্য বিভিন্ন কোম্পানিও কম গড়ে উঠছে না। পশ্চিমা দেশগুলোতে ছেলে কিংবা মেয়ের বাড়ি থাকা-থাকির রেওয়াজই নেই। ছেলে-মেয়েদের কারো কারো তিনতলা বাড়ি থাকলেও মায়ের সেখানে থাকা হবে না, তার স্থান সংকুলান হয় না তা নয় বরং তাদের কালচারে নেই। আমরাও কি কম স্মার্ট! ওটা রপ্ত করতে পারব না! অন্য দিকে একটু কম স্মার্ট সন্তানের ঘরে মায়ের নিত্যদিনের প্রশান্তি। সন্তান সকালে মাকে একটু দেখে দোয়া নিয়ে অফিসে যাওয়া, নাতি নাতনিদের একটু ছোঁয়া, দাদির বিছানায় বসে বসে অঙ্ক করা শেষ হলে গল্প শোনা, নানা জীবন্ত গল্প, যে গল্প ওদের জীবনবোধ উজ্জীবিত করে।

আরও পড়ুন : ঈদের অর্থনীতিতে নারীর অবদান

এখন একাকিত্ব শিশুদের জন্যও এসে গেছে নানা কারণে ভুললে চলবে না। সব কিছু বিবেচনায় আমরা সামনে একটি ঘোর অন্ধকারের দিকে ছুটছি, স্মার্ট হতে গিয়ে স্টুপিড হচ্ছি।

যা হোক, জীবন সায়াহ্নে এসে পরিস্থিতির শিকার এক মায়ের একটি কবিতা এখানে তুলে ধরে লেখাটি শেষ করছি।

কবিতাটি

‘বৃদ্ধাশ্রম থেকে বলছি’

ভেবেছিলাম সুখ হবে মোর বড় হলে ছেলে,

অবশ্যই বড় হলো, আমায় গেল ফেলে।

একদিন এক ১০টার সময় রেখে গেল হেথা;

এরপর থেকে ছেলের সাথে টেলিফোনে হয় কথা।

নিত্যদিনই বলে, ‘আসব এই উইক অ্যান্ডে’;

শুনেছি সে বৌ-বাচ্চা নিয়ে গেছে নেদারল্যান্ডসে।

একদিন এক ফোন এলো মোর, সন্তান বলল, ‘মা

আমার কথা ভুলে যাও তুমি, আল্টিমেটাম পেয়েছি আমি,

সংসার টিকবে না।

বললাম আমি, ভালোবাসা-¯স্নেহ,

সে তো নিম্নগামী;

ঘর ভেঙো না, আমার জন্য

রইল অন্তর্যামী।

আরও পড়ুন : মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করে ‘ঈদুল ফিতর’

লেখক :

প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান

প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

ইসলামী ব্যাংকের সাথে হাব-এর মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর উদ্যোগে হ...

ঢাকার বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বায়ুদূষণের কবল থেকে নিস্তার মিলছে না দিল্ল...

২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী...

বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃ...

কাল গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় 

নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাস পাইপলাইনের জরুরি স্থানান্তর বা মেরাম...

অরবিসের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে চোখের যত্ন ও পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা