নাসিমা আক্তার নিশা : নারী উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াটি সহজ ছিল না। আগে আমাদের নারীরা ছিল অবহেলিত। তাদের বাইরে কাজের অনুমতি মিলত না, অনুমতি মিললেও তারা কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা পেতেন না। মূলধনের সংকটও ছিল।
আরও পড়ুন : মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করে ‘ঈদুল ফিতর’
তবে বর্তমানের চিত্র ভিন্ন। এখন নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে, কাজ করার স্বাধীনতাও পাওয়া গেছে। কিন্তু কয়েকটা জায়গায় এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
২০২০ সাল থেকে করোনার প্রকোপে অসংখ্য পরিবারের উপর নেমে এসেছে অর্থনৈতিক সংকট। সেই সংকট লাঘব হয়েছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে অনেক নারী। ঘর থেকে বের হয়ে তারা কাঁধে নিয়েছে পরিবারের হাল। আমরা পেয়েছি অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা।
শুরু হয়েছিল টিকে থাকার লড়াই দিয়ে, সেই লড়াই এখনো চলছে। সবাই শুধু সফলতার গল্পই শোনে, এর পেছনের কষ্টটা কিন্তু কেউ দেখে না।
এমন অনেক নারী আছেন, যিনি পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন সেই করোনাকালেই, অথচ তাদের ছিল না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, ছিল না কোনো উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। সেই জায়গা থেকে একজন নারীর ঘুরে দাঁড়ানো সহজ কোনো ব্যাপার ছিল না, কিন্তু নারীরা তা করে দেখিয়েছেন।
আরও পড়ুন : বাংলার লৌকিকতা ও আজকের বৈশাখ
আগে আমাদের নারীরা ছিল অবহেলিত। তাদের বাইরে কাজের অনুমতি মিলত না, অনুমতি মিললেও তারা কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা পেতেন না। মূলধনের সংকটও ছিল....
তাদের ছিল না পুঁজি, ছিল না কোনো বাণিজ্যিক পরিকল্পনা, ছিল না ব্যবসা টিকিয়ে রাখার মেধা কিন্তু প্রায় দুই বছর তারা নিজেদের উদ্যোগ ধরে রেখেছেন, উদ্যোগের পাশাপাশি নিজের সংসার চালাচ্ছেন।
করোনার সময় থেকে নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষাধিক নারী উদ্যোক্তা অনলাইনে কাজ করে যাচ্ছেন উই ফোরামসহ বাংলাদেশের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু এদের বেশিরভাগই পায়নি সরকার কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ। কারণ বেশিরভাগ উদ্যোক্তারই নেই কোনো ট্রেড লাইসেন্স, নেই কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, কিন্তু তারা কাজ করে যাচ্ছেন, অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
তাদের ভেতর যে স্পৃহা এসেছে সেটা তারা বন্ধ করছেন না। তাহলে আমাদেরও উচিত তাদের কাজকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা।
আরও পড়ুন : অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: শিশুস্বাস্থ্যের জন্য বড় আশঙ্কা
এই ঈদে আমরা বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি গতবারের তুলনায়। ২০২২ সালে ঈদের মার্কেটের আকার ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা। এই বছরে তা দাঁড়িয়েছে ৪৬০০ কোটি টাকায়।
এমন অনেক নারী আছেন, যিনি পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন সেই করোনাকালেই, অথচ তাদের ছিল না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, ছিল না কোনো উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন...
যার ভেতরে ১৪০০ কোটি টাকা শুধু অনলাইন লেনদেন। তাতে বোঝা যাচ্ছে মানুষের অনলাইনে কেনাকাটায় আস্থা এসেছে অনেক। পাশাপাশি এবার পরপর কয়েকটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড এবং অতিরিক্ত গরম সব মিলিয়ে গ্রাহকরা মার্কেটে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
ফেসবুকের পেজের একটি বড় অংশ যেহেতু নারীরা দখল করে আছে, তারা এবার মুনাফা কম রেখে বিক্রি বেশি করার দিকে মনোযোগী হয়েছেন এবং ঈদকে কেন্দ্র করে ছোটবড় অনেক মেলা হয়েছে গোটা মাস জুড়ে। এসব মেলায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা যেমন তৈরি হয়, ক্রেতাও তৈরি হয়।
আরও পড়ুন : মামুনুর রশীদ ও হিরো আলম: আনহেলদি ডিবেট
আমি বলব, ক্রেতাদেরও নতুন ধরনের মানসিকতা হয়েছে। সবাই ঈদে দেশীয় পণ্য কিনবে এবং গিফট করবে। সব মিলিয়ে, এবারের ঈদ বাজার খুবই ভালোভাবে কেটেছে নারী উদ্যোক্তাদের এবং ছোট বড় সব ব্যবসায়ীদের।
নারীরা কঠিন সময়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শুধু রান্নাবান্নাই নয়, প্রয়োজনে সংসার হাল ধরতে পারেন এবং অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পারেন। তাই নারীদের উন্নয়নের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি নিরলসভাবে।
সরকারও নারীদের উন্নয়নের জন্য অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে আমাদের আরও নির্দিষ্ট কিছু সেক্টর নিয়ে কাজ করতে হবে বলে আমি মনে করি। ঈদ বা যেকোনো উৎসবের অর্থনীতিতে নারীরা যেভাবে অবদান রাখছেন তা ধরে রাখা জরুরি। তাদের উৎসাহ দিতে পারলে অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
আরও পড়ুন : পুষ্টি চাহিদা পূরণে পোলট্রি শিল্প দেশ উপযোগী
লেখক :
নাসিমা আক্তার নিশা
প্রেসিডেন্ট, ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)