মামুনুর রশীদ ও হিরো আলম
মতামত

মামুনুর রশীদ ও হিরো আলম: আনহেলদি ডিবেট

অজয় দাশগুপ্ত: বাংলাদেশে ঘটনার অভাব হয় না। এতো ছোট একটি দেশে আঠারো কোটি মানুষের বাস। সব সময় নতুন নতুন খবর পয়দা হবে এটাই স্বাভাবিক। আজকাল সামাজিক মিডিয়াই সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। হাতে গোনা কয়েকটি নিউজ মিডিয়া বাদ দিলে বাকী সবগুলোই সামাজিক মিডিয়ার কাছে কুপোকাত। নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ফেইসবুক। আমাদের সবার ফেইসবুক এখন মামুনুর রশীদ আর হিরো আলম বিতর্কে উত্তপ্ত।

আরও পড়ুন: নির্বাচনে থাকছে না ইভিএম

মামুনুর রশীদ স্বনামধন্য নাট্যব্যক্তিত্ব। তাঁর সঙ্গে সিডনিতে গল্প করার সুযোগও হয়েছে আমার। দারুণ মানুষ! তা ছাড়া তরুণ বয়স থেকে তাঁর নাটক আমাদের প্রেরণা যোগাতো। নানা সংগ্রাম আন্দোলন ও সামাজিক দুর্যোগের কালে আরও কয়েকজন মানুষের মতো মামুনুর রশীদ ছিলেন আমাদের ভরসার জায়গা। বিশেষ করে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ এবং নাটকে বিপ্লবের সংকল্পে মুগ্ধ ছিলাম একসময়। এখন তাঁর পড়ন্ত বয়স। যা দেয়ার দিয়ে ফেলেছেন বলা যায়। মামুনুর রশীদের সঙ্গে নানা মিডিয়ায় কলাম লেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এমন একজন মানুষ হঠাৎ হিরো আলমের ব্যাপারে মুখ খুললেন কেন?

তাঁর কথাগুলো নিঃসন্দেহে যৌক্তিক। মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এখন রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। এর মধ্য দিয়েই হিরো আলমের উত্থান হয়েছে।’

মামুনুর রশীদের বক্তব্যটি সোশাল মিডিয়ায় তীব্র আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সোমবার নাট্য দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি আবারও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, তারা দেখেছেন, আমার একটি উক্তি নিয়ে হাজার হাজার কমেন্ট হচ্ছে। আমি বলেছি, রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে- সেই দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে হিরো আলমের উত্থান হয়েছে। এই উত্থান জাতির জন্য আমাদের সংস্কৃতির জন্য ভয়ঙ্কর। এই উত্থানের মূলে আমাদের রাজনীতি আছে, আমাদের মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা আছে।’

আরও পড়ুন: সরকার স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে

কিন্তু সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠছে মামুনুর রশীদদের মতো মানুষ এতো দিন কোথায় ছিলেন? গত দুই দশকে ধীরে ধীরে অবনতির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে সংস্কৃতি। এ তো একদিনে ঘটেনি। নাটক সিনেমা গান কবিতাসহ সব কিছু নিম্নমুখি। মানুষের মনোজগতে ধর্মের নামে ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে যা এখন সংক্রামক। এতসব ঘটনার সময় বুদ্ধিবৃত্তির হিমশীতল নীরবতার ভেতর দিয়েই জন্ম নিয়েছেন হিরো আলম। হিরো আলম নতুন এক নাম যা এই সমাজগর্ভের পয়দা।

হিরো আলমের কথায় ফিরি। ‘রুচির দুর্ভিক্ষে’ হিরো আলমের উত্থান হয়েছে- অভিনয়শিল্পী, নাট্যনির্দেশক ও সংগঠক মামুনুর রশীদের এমন বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল আলম। যিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘হিরো আলম’ নামে।

সোমবার রাতে ফেইসবুক লাইভে এসে তিনি মামুনুর রশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যেহেতু আমার কারণে দেশের মানুষের রুচি নষ্ট হচ্ছে, আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে তৈরি করতে পারতেন। তাহলে মানুষের রুচি নষ্ট হতো না। বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষ, শুধু হিরো আলমের কারণে যদি সবার রুচি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে হিরো আলমকে আপনারা মেরে ফেলে দেন।’

আরও পড়ুন: ৩ মাস পরেই মতিঝিলে মেট্রোরেলের যাত্রা!

আর হিরো আলম তার সমালোচকদের উদ্দেশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেইসবুক লাইভে বলেন, ‘এফডিসিতে বড় বড় আর্টিস্টরা আমার সমালোচনা করেন। কেন রে ভাই, আমাকে নিয়ে কেন কথা বলেন? আমি কোন দিন কোন পরিচালকের কাছে গিয়েছি? কোন শিল্পীর হাতে পায়ে ধরে বলেছি যে- আমাকে সুযোগ করে দেন?’

লাইভে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা যদি এসব করতে থাকেন, এত লোকের সামনে বলতেছি, একদিন লাইভে থাকা অবস্থায় আত্মহত্যা করে পৃথিবী থেকে চলে যাব। আপনাদের, এই দুনিয়া, সমাজকে রুচির দায় থেকে মুক্ত করে যাব। আপনারা আমাকে মেনেই নিতে চান না। এতে আমার কী করণীয় আছে?’

সমালোচনাকারীদের নিজেদের রুচি পাল্টানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সুন্দরবন নাটক দেখার পর থেকে মামুনুর রশীদ স্যারকে শ্রদ্ধা করি। তার মতো এত বড় একজন অভিনেতা আমাকে নিয়ে কথা বলেছেন এটা আমার জন্য সৌভাগ্য। সে নেগেটিভ বলুক আর পজিটিভ বলুক। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই যে আপনার মতো লোক আমাকে চেনে। আমি তো মনে করেছিলাম আপনারা এত বড় অভিনেতা আমাকে চেনেন না।’

আরও পড়ুন: আদালতের কাছে বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না

হিরো আলম কথা শিখে গেছেন। এখন তাকে আমার অপ্রতিরোধ্য মনে হয়। এই মনে হওয়াটাও এখন অপরাধতুল্য। আমাদের বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব যাদের প্রতিবাদী বলে জানতাম তারা এখন আপোসকামী। সে তারা হতেই পারে। কিন্তু তাদের গাত্রদাহের কারণ যখন হিরো আলম বা তেমন কাউকে নিয়ে লেখা তখন অবাক হতে হয়! সমাজ দেশ রাজনীতি স্বয়ং ওবায়দুল কাদের যখন হিরো আলমকে নিয়ে কথা বলেন তখন কিন্তু সবাই চুপ। সামাজিক সমস্যা হিসেবে তাকে বিখ্যাত করে তুলেছেন অনেকে। চ্যানেলে চ্যানেলে তার আলাপ, তাকে নিয়ে অনুষ্ঠান কি রুচির পরিচয় বহন করে? যদি তা না হয় তাহলে মিডিয়া তার পেছনে হামলে পড়ে কোন সুখে?

হিরো আলমের বড় খুঁটি আমজনতা। এককেন্দ্রিক সমাজে যখন আলাপ-আন্দোলন বাদ-প্রতিবাদ সব কিছু একপেশে পানসে, তখন মানুষ এমন কারো পেছনে লাইন লাগাবে এটাই স্বাভাবিক। সে লাইন এখন দীর্ঘ। এমন কি মামুনুর রশীদও দাঁড়িয়ে গেলেন সেই লাইনে। তা না হলে হিরো আলম কেন মানদণ্ড বলে বিবেচ্য হবেন?

হিরো আলম মূলত চতুর এবং ঝোপ বুঝে কোপ মারার মানুষ। একটা কথা স্বীকার করতেই হবে, ভাগ্য আর পরিশ্রম তাকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছে। এমন অনেকেই চেষ্টা করেন অনেক উল্টাপাল্টা কাণ্ড করে পপুলার হতে চান। কিন্তু ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে না। হিরো আলম পেরেছেন। তার এই সাফল্য তাকে মাটিতে পা রাখতে দেবে না এটাই স্বাভাবিক। দুবাই কাণ্ডে হিরো আলম, সাকিব আল হাসান, দীঘি সবাই জড়িত। অথচ ফাঁকতালে হিরো আলম প্রায় সটকে পড়ার পথে। আমার ধারণা বৈরী সমাজ তাকে এই কৌশলগুলো রপ্ত করতে শিখিয়েছে। কারণ পচন হিরো আলমে নয় পচন ধরেছে সমাজে। সে সমাজ আজ দ্বিধাবিভক্ত।

আমি ফেইসবুক ও সামাজিক মিডিয়ায় যা দেখলাম তাতে এটা স্পষ্ট এখন মানুষ হিরো আলমকে যতটা চেনে বা জানে, মামুনুর রশীদকে ততোটা জানে না। এই না জানার কারণগুলো আমাদের সবার জানা।

কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না। আমি বলছি না যে হিরো আলম থাকবে না। আমাদের যুগেও এমন কেউ কেউ ছিলেন। কিন্তু তারা দেশ ও সমাজের এতটা চোখে পড়তেন না। তাদের একটা বিশেষ শ্রেণি ব্যতীত বাকীরা চিনতেন না। চেনার দরকার পড়তো না। দিন পাল্টেছে। সামাজিক মিডিয়ার কল্যাণে অতিরিক্ত ইনফরমেশনও একটা আপদ বৈকি। সে সূত্রে আরো অনেক বিষয়ের মতো হিরো আলম ঢুকে পড়েছেন। সমাজ ও সংস্কৃতির শুদ্ধতা নষ্ট হতে না দিয়ে একটা সুস্থ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চালু রাখা দরকার। যা অতীতে ছিল। তখন হিরো আলম থাকবেন তার নিজস্ব জায়গায়, আর মূলধারা চলবে আপন গতিতে। মূলধারা আজ পদ-পদক অর্থ-বিত্ত আর প্রতিষ্ঠার কাছে ধরাশায়ী। ক্ষমতার কাছে নতজানু। সে কারণেই মামুনুর রশীদের মতো ব্যক্তি বনাম হিরো আলম বিতর্ক হতে পারে। এই আনহেলদি বিতর্ক মানানসই নয় একটুও। আরো কত কি যে দেখতে হবে...।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

লক্ষ্মীপুরে চাষ হচ্ছে সৌদির আজওয়া খেজুর

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: মরুর দেশ সৌদি আরবের বিখ্যাত আজওয়া খেজু...

ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও সিটি ক...

আ’লীগকে নির্বাচনে আনতে চাই বলিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমরা কাউকে নির্বাচনে আনতে চাই, এমনটা বলিন...

কিয়েভে দূতাবাস বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিমান হামলার ভয়...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

আইপিএলের আগেই নিষেধাজ্ঞায় হার্দিক

স্পোর্টস ডেস্ক: আইপিএলের গত আসর শুরুর আগে রোহিত শর্মাকে সরিয়...

খালেদা-ইউনূসের কুশল বিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা সেনানিব...

পথে সড়কে প্রাণ গেল প্রধান শিক্ষকের

জেলা প্রতিনিধি: ফরিদপুর জেলার সালথায় স্কুলে যাওয়ার পথে দুই ম...

বহু বছরপর সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজি...

২০২৫ সালে স্কুল ছুটি থাকবে ৭৬ দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা