তন্ময় আহমেদ: উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ। সম্ভবত আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে। এই দলের নেতৃত্বেই দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রাম এবং সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে, বিশ্বের মানচিত্রে উদিত হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র। তাই বাঙালি জাতির রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে গণমানুষের দল হিসেবে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অগ্রযাত্রার ইতিহাস আর আওয়ামী লীগের ইতিহাস একই। আজকে যে আধুনিক বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে, সেটাও এসেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কারণে।
আরও পড়ুন: আমাদের দেশের জনগণ শান্তিপ্রিয়
তাহলে একবার ফিরে দেখা যাক– আওয়ামী লীগের ইতিহাসের দিকে। হয়তো আওয়ামী লীগের ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে বারবার বাংলাদেশের ইতিহাসেই ফিরে যেতে হবে আমাদের। অথবা বলতে পারেন, বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে, হয়তো বারবার আওয়ামী লীগের ইতিহাসই স্পর্শ করে যেতে হবে আমাদের। বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ এতটাই অবিচ্ছেদ্য যে, কাউকে ছাড়া কারও পথচলা অসম্পূর্ণ। সোনার বাংলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, এরপর স্মার্ট বাংলাদেশ অভিমুখে বাঙালি জাতির স্বপ্নযাত্রার এই সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। তাই আসুন একবার, অন্তত খুব সংক্ষেপে হলেও বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের এই যুগপথ চলার পথটা একটু উঁকি দিয়ে দেখি।
ঘটনার সূত্রপাত কিন্তু দেশভাগের পরপর ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে। মাতৃভাষা ও আবহমান বাংলার সংস্কৃতি রক্ষার প্রত্যয়ে এক ষড়যন্ত্রমুখর সময়ের জাল ছিন্ন করে জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ। সেসময় ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সময় জেলে ছিলেন তৎকালীন প্রভাবশালী ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরও অনেকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বকে কাজে লাগাতে তাকে যুগ্ম-সম্পাদক করা হলেও কিছুদিন পর থেকেই সাধারণ সম্পাদকের কাজটি তাকেই করতে হতো। অবশেষে ১৯৫৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত শ্রম এবং তেজস্বী নেতৃত্বের কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। যার ফল, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয়। এরপরের ইতিহাস শুধুই আওয়ামী লীগ এবং গণমানুষের মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার ইতিহাস।
আরও পড়ুন: ইন্টারনেটের গতিতে ১১৯তম বাংলাদেশ
অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা:
পাকিস্তান আমলে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলেও, পাকিস্তানিদের প্রতারণা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ধরা পড়ে। ফলে ধর্মপ্রাণ বাঙালি জাতি ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। ধর্মের ফতোয়া দিয়েও তাই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলায় মাত্র ৯ আসন পেয়ে বিদায় হয় মুসলিম লীগ। ধর্মের নামে অধর্মের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখা এবং অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের জন্য আপামর বাঙালির মন ও ম্যান্ডেট জিতে নেয় আওয়ামী লীগ। ফলে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতা এবং আওয়ামী লীগের মানবিক সমাজ গঠনের অভিযাত্রা একই গতিমুখে জোরালো গতি পায়।
অর্থনৈতিকভাবে সামাজিক বৈষম্য রোধ এবং সমতাভিত্তিক সমাজ:
বাংলাদেশের সংবিধানের চারনীতির একটি সমাজতন্ত্র। এই সমাজতন্ত্র মানে সামাজিত সাম্য, বৈষম্য কমানো, অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক মানুষের জন্য সুবিধা নিশ্চিত করা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার সময় থেকেই জনগণকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। যার ফলে জনগণও একচেটিয়াভাবে ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। সেই জনমতের প্রতিফলন পড়েছে সংবিধান প্রণয়নের সময়। এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই কাজ করে চলেছেন। জাতীয় মুক্তি অর্জনের সর্বশেষ ধাপগুলো অর্জনের জন্য দেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য পরিকল্পনামাফিক দেশকে ডিজিটাল করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন: পদ্মায় আটকা ৩ ফেরি
স্বৈরাচার-উগ্রবাদমুক্ত রাষ্ট্র কায়েম এবং গণতন্ত্র অর্জন:
পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় সংগ্রাম করেছে বাঙালি জাতি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। স্বৈরাচার আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের পর রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিক নেতাদের কাছে মুচলেকা নিলেও বঙ্গবন্ধু তা দেননি। ফলে বারবার জেলে যেতে হয়েছে তাকে। তবুও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একমাত্র আওয়ামী লীগই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে থেকে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন চালিয়ে গেছে। যার ফলে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। এমনকি স্বাধীনতার পর, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় চার নেতাকে জেলের মধ্যে হত্যা করে স্বাধীনতা বিরোধী উগ্রবাদীরা। এরপর দেশটাকে লুটপাট করে খেতে থাকে তারা। একপর্যায়ে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগের। দীর্ঘ এক দশক রাজপথে সংগ্রাম করে বিদায় করেন স্বৈরাচারকে। চালু করেন সংসদীয় গণতন্ত্র।
জাতীয় মুক্তি এবং মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা:
এই ভূখণ্ডের বহু ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-শ্রেণিপেশার মানুষকে একতাবদ্ধ করে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনা করে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন। এমনকি স্বাধীনতা অর্জনের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে মিত্রবাহিনীকে ফেরত পাঠিয়ে নিজস্ব জনবল দিয়ে দেশ পুনর্গঠন এবং বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে আসা আওয়ামী লীগের আরও একটি বড় অর্জন। আওয়ামী লীগ প্রধান ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তর্জাতিক ইমেজ এবং দূরদর্শিতার কারণেই এটি সম্ভব হয়।
এরপর উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে, ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করে। ১৯৯৮ সালের বন্যায় দেশের ৭০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হওয়ার পরেও, আওয়ামী লীগ সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছাশ্রমের কারণে কোনও জনবল ক্ষয় ছাড়াই এই দুর্যোগ মোকাবিলা করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর, জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদের কড়াল গ্রাস থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তিদান এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে, মাত্র এক যুগের মধ্য দেশকে ডিজিটাইজড করে বিস্ময় সৃষ্টি করে এই সরকার। ক্ষুধা-দারিদ্র্য এবং উগ্রবাদের গ্রাসে নিমজ্জিত বাংলাদেশের এই উত্থানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছে এখন জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ছাত্রলীগের মঞ্চ ভেঙে আহত ৮
বিপদে গণমানুষের পাশে থেকে মানবিক বাংলাদেশ গঠন:
২০২০ সালে করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব যখন থমকে যায়, তখনও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে থাকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ভাইরাসের মৃত্যুভয়ে যখন সব রাজনৈতিক দল নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারকে সহযোগিতা করতে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ এবং দলটির অঙ্গসংগঠনগুলো। করোনাআক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সহায়তা এবং মৃতের দাফন-কাফন সম্পন্ন করার মতো মানবিক কর্মে যুক্ত হয়ে ভাইরাসে প্রাণ হারায় প্রায় অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এরপরেও নিম্ন আয়ের এক কোটি অসহায় মানুষের ঘরে স্যানিটাইজার, মাস্ক, সাবান, ওষুধ, প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য এবং নগদ অর্থ পৌঁছে দেয় আওয়ামী লীগ।
করোনার ভয়াল গ্রাস চলাকালে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে হানা দেয় একাধিক ঘূর্ণিঝড়। ফলে নষ্ট হয়ে যায় অনেক কৃষকের ফসল ও মৎস্য চাষ প্রকল্প। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে থাকতে, ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ প্রদান করা হয় প্রায় ৫০ লাখ কৃষক-শ্রমিক-মজুরকে। এমনকি করোনাকালে সারা দেশের মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা ও এতিমখানার উন্নয়ন এবং এসবের সঙ্গে যুক্ত প্রায় অর্ধকোটি মানুষের জন্য আড়াইশ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গৃহহীন মানুষদের মাথাগোঁজার জায়গা করে দিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য জমিসহ বাড়ি নির্মাণের করে দেওয়ার কাজ চলমান রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। নিয়মিত বিরতিতে সেগুলো হস্তান্তর করা হচ্ছে অসহায় মানুষদের হাতে। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দল এরকম উদ্যোগ নেয়নি।
নারীদের উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ অভিমুখে অগ্রযাত্রা:
দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাই আর্থিক ও সামাজিকভাবে তাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎপ্রজন্মকে শিক্ষিত ও মানবিক প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নারী উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। বিনামূল্য প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা এবং উপবৃত্তির মাধ্যমে নারীদের এগিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রায় সাত কোটি নারীকে উগ্রবাদের কবল ও সামাজিক দাসত্ব মুক্ত করে আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন জীবন দিতে এবং তাদের কর্মের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার নীতিমালা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
এর আগে, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও সরকারি কর্মক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কোটা চালু করেন, সেই পথ ধরেই আজ প্রাইমারি শিক্ষকতায় ৬০ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে নিজ অঞ্চলে বাস করেই প্রাইমারি স্কুলগুলোতে চাকরি করতে পারেন নারীরা, বিশেষায়িত কোনও দক্ষতাও প্রয়োজন হয় না– নারীদের জন্য এটি সুবিধাজনক ও সহজ। ফলে নারী শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীর হারও বাড়ছে। পরবর্তীতে যারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে পুরুষদের মতোই সব রকমের কর্মে যোগদান করতে সমর্থ হচ্ছেন। এই শিক্ষিত ও কর্মক্ষম নারীদের হাত দিয়েই, দেশের প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহার করে, আগামীতে বেড়ে উঠবে একটি নতুন মানবিক ও স্মার্ট প্রজন্ম।
ক্রীড়া-সংস্কৃতির বিকাশ:
স্বাধীনতার পরপরই দেশের তরুণ প্রজন্মের বিকশিত ভবিষ্যতের জন্য খেলাধুলা প্রসারে উদ্যোগ নেয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। দেশের ফুটবলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে, ১৯৭৩ সালে রাশিয়ার মিন্স্ক ডায়নামো ক্লাবকে ঢাকায় নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু। এমনকি বঙ্গবন্ধুর উৎসাহ ও আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগের কারণেই ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলার ব্যবস্থা হয় বাংলাদেশ ফুটবল দলের।
সেই ধারাবাহিকতাতেই, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরপরই আবারও দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ফুটবল দল দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়। এমনকি ক্রিকেটের উন্নতির জন্য ঢেলে সাজানো হয় ক্রিকেট বোর্ড এবং ভালো কোচ এনে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় খেলোয়াড়দের। ফলে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, লাভ করে ওডিআই স্ট্যাটাস।
এছাড়াও ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের টেবিল ডিপলোম্যাসির কারণে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, ফলে আইসিসির সব সুযোগ-সুবিধা যোগ্য দাবিদার হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। এমনকি ক্রিকেটের বুনিয়াদ গঠনের জন্য ১৯৯৯-২০০০ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় ক্রিকেট লীগের মাধ্যমে চারদিনের ম্যাচ চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। বহুমুখী প্রচেষ্টার ফলে অবশেষে ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যার ফলে আজ বিশ্বব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে টিম টাইগার।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর নারীদের খেলাধুলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। ফলে ২০১১ সালে ওডিআই স্ট্যাটাস পায় নারী ক্রিকেট দল। নিয়মিত পরিচর্যার কারণে ২০১৮ সালে এশিয়া কাপ জয় এবং ২০২১ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে নারী ক্রিকেটাররা। দেশজুড়ে জেলাভিত্তিক খেলাধুলায় সরকারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষতার কারণে নারীদের ফুটবল দলেও সাফল্য আসে। ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে অনুর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দল। ২০২২ সালেই প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় জাতীয় নারী ফুটবল দল।
পরিশেষে, বলতে চাই– আজকের বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট-অবকাঠামো-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার, ২০০৯ সালের আগের দৃশ্য চিন্তা করুন একবার। নিঃসন্দেহে এটি একটি সামাজিক বিপ্লব। এটি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বিপ্লব। আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-অভাব-অন্ধকার দূর করে দেশকে আলোকিত করেছে। এখন আমাদের নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব, সরকারের এসব সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে উগ্রবাদমুক্ত মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা। তাই কণ্ঠ ছাড়ুন- জয় বাংলা বলে আগে বাড়ুন।
লেখক: সমন্বয়ক, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। সদস্য সচিব, সাইবার মনিটরিং সেল এবং সদস্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।