ছবি: প্রতীকী
মতামত

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং লাভ-ক্ষতির হিসাব

অলোক আচার্য: রাশিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অভিযান এবং ফলশ্রুতিতে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ- গত কয়েক মাসের আন্তর্জাতিক পটভূমিতে বিষয়টি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। দুই দেশ যুদ্ধে জড়ালেও পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অনেক দেশ জড়িয়ে যায়। কারণ পরস্পর নির্ভরশীল বিশ্বে একে অন্যকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব। এতে যেমন ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটে, তেমনি উন্নয়নশীল বিশ্ব এর ফল ভোগ করে।

আরও পড়ুন: তাইওয়ানকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র

বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলমান। পশ্চিমা দেশ ও এর মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার ফলে কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা রাশিয়াকে এই ফর্মুলায় আদৌ কাবু করা যাবে কি না এখন সে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। যদিও ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে নুতন এক পররাষ্ট্রনীতির অনুমোদন করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। এই নীতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার উচিত স্লাভিক দেশগুলো, চীন ও ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করা। এ ছাড়া, ২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের পর মস্কো থেকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া আবখাজিয়া ও ওসেটিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করাসহ পূর্ব ইউক্রেনে দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লাহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিএনপিকে কাভারেজ বেশি দেওয়া হচ্ছে

করোনা অতিমারী বিশ্বকে যতটা না বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে, তার চেয়ে ঢের বেশি বদলে দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অনেক দেশের পররাষ্ট্র-নীতিতে পরিবর্তন এসেছে, কৌশলগত অবস্থানের পরিবর্তন এসেছে, অর্থনৈতিক খাতে পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন আরও আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে যাবার আপাতত কোনো লক্ষণ নেই। প্রথম দিকে তাও কিছুটা আলোচনার সুবাতাস ছিল, উভয়পক্ষ কয়েকবার বসেছিল, যদিও কোনো ফল আসেনি। কিন্তু একটি সম্ভাবনা ছিল। এখন সেটাও নেই। আলোচনা কবে হবে তারও কোনো খবর নেই। তাছাড়া ইউক্রেনকে নানাভাবে সাহায্য করায় যুদ্ধে ইউক্রেনের অবস্থান এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। কোথাও কোথাও রুশ দখলীকৃত অঞ্চলের পুনর্দখলের দাবিও তারা করছে।

আরও পড়ুন: ইভিএম কিনতে ৮৭১১ কোটি টাকা চায় ইসি

সুতরাং যুদ্ধ হয়তো চলবে। এবং অবধারিতভাবেই বিশ্ব আরও সংকটে পরবে। কারণ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে উল্টো ব্যবস্থায় রাশিয়ার পদক্ষেপে জ্বালানি নিয়ে ইউরোপজুড়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশগুলো। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে যেভাবে কাবু করা যাবে বলে ভাবা হচ্ছিল তা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে ইউরোপের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। অঞ্চলটির অনেক দেশই কমবেশি সমস্যায় রয়েছে।

গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, আগামী অক্টোবর মাসে নতুন এক রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে বৈঠকে বসবেন ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিরা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত মাসে ইউরোপীয় রাজনৈতিক জোট গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন এবং এখন তা বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে স্পষ্ট প্রতিয়মান হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে একটি অনিবার্য পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে। এই যুদ্ধের কারণে অর্থনীতির ওপর আঘাত আসতে পারে- আঁচ আগেই পাওয়া গিয়েছিল। সে আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। এখন রাশিয়ার গ্যাস বন্ধ নিয়ে ইউরোপে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে রাশিয়ার পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম-১ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা করেছে রাশিয়া। এ কারণে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বিগ্ন। যদিও রাশিয়া বলছে নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপ লাইনের টারবাইনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ওই পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস পাঠানো যাচ্ছে না। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই টারবাইন কানাডা থেকে আনা যাচ্ছে না বলেও দাবি করেছে মস্কো।

আরও পড়ুন: তাইওয়ানকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র

জ্বালানি সরবরাহ যদি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার জবাব হয় তাহলে তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, নর্ড স্ট্রিম-১ গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা আছে। যতক্ষণ না পশ্চিমারা ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর চাপিয়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেয়, তত দিন এই সমস্যা থাকবে। তিনি আরও বলেন, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো আমাদের বেশ কয়েকটি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ কারণে গ্যাস সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই সমস্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।

আরও পড়ুন: টাইফুনের আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূল

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের দাবি, রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণার কারণ মিথ্যা। নিষেধাজ্ঞা ও অন্যভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করার কারণেই রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউরোপের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তো বলেই দিয়েছে, রাশিয়া জ্বালানিকে অস্ত্র বানাচ্ছে। এনএস-১ দিয়ে ২০১১ সাল থেকে ইউরোপে এলএনজি সরবরাহ করে রাশিয়া। জার্মানির সিংহভাগ গ্যাস আসে এই পাইপলাইন দিয়ে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও বলেছেন, ইউরোপের গ্যাস সংকটের জন্য নিজেদের নিষেধাজ্ঞা দায়ী। এখন পশ্চিমাদেশগুলোর রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আটকে আছে স্পষ্টতই এই যুদ্ধের ওপর। রাশিয়া যুদ্ধ অব্যাহত রাখলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে না- এমন ধারণা করা যায়। অপরদিকে নিষেধাজ্ঞা না তুলে নিলে যদি রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ শুরু করতে না পারে তাহলে বিপদে পড়বে ইউরোপ।

আরও পড়ুন: টাইফুনের আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূল

এই মুহূর্তে বিশ্ব যে কয়েকটি সমস্যার মোকাবেলা করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি এবং খাদ্য সরবরাহ। জ্বালানি সংকটের প্রভাব পরছে উৎপাদন ব্যবস্থায় এবং এর ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। দেশে দেশে জ্বালানি সংকট ধীরে ধীরে এত তীব্র হচ্ছে যে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে নানা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশ।

একথা এখন সবাই জানেন, জ্বালানী তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ক্ষতিকর প্রভাবে দরিদ্র দেশগুলোই বেশি ভুগছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ২ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বে প্রতি ১০ ব্যারেল তেলের এক ব্যারেল আসে রাশিয়া থেকে। আবার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়া উত্তোলন করে। ইউরোপের প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাসের জোগান আসে দেশটি থেকে। অর্থাৎ ইউরোপের জ্বালানির একটি বড় অংশের জোগানদাতা রাশিয়া। সুতরাং চাইলেই রাশিয়াকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন: আ, লীগের আমলেই সুষ্ঠু ভোট হয়েছে

তবে এর মধ্যেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ জ্বালানি বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের দিকে ঝুঁকতে চাইছে। এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। জার্মানি চলতি বছর বন্ধ হতে যাওয়া তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুইটি ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এত কিছু করে হয়তো প্রাথমিক সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু মূলত বিভক্ত বিশ্বকে একত্রিত করা সম্ভব হবে না। ক্ষতি উভয় পক্ষেরই হবে। পৃথিবীকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে চাইলে প্রথমেই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আর তাহলেই বর্তমান সময়ের এই সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও মুক্তগদ্য লেখক

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নলছিটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির নলছিটিতে শুরু হয়েছে ভূট্টো স্মৃত...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহ...

বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে জ...

বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃ...

ডেঙ্গুতে একদিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জনের মৃত...

অটোরিকশার বিষয়ে যে বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অটোরিকশা সম...

পেপার মিলে অগ্নিকাণ্ড, দগ্ধ ১১

জেলা প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি পেপার মিলে অগ্...

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, নিহত ২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবারপাখ...

আমরা সব লিপিবদ্ধ করে যাবো

বিনোদন ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা