যানজট জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি
মতামত

যানজট জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

গোলাম শওকত হোসেন : বাংলাদেশের ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শহর ঢাকা মহানগরীসহ প্রায় প্রতিটি মেট্রোপলিটন সিটির মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ ট্রাফিক জ্যামের কারণে। এর কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা। রাস্তা ও ড্রেন তৈরি, ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করে সিটি করপোরেশন। ট্রাফিক সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে ডিএমপি, আরএমপি, সিএমপি, এসএমপি বা বিএমপির ডিসি ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট।

আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জ থেকে পানি নামতে শুরু করেছে

গাড়ির নিবন্ধন ও রোড পারমিট দেয় বিআরটিএ; ওয়াসা রাস্তা কাটে; ইলেকট্রিসিটির কোম্পানি রাস্তা কাটে। নামে ফুটপাত হলেও তাতে হকার বসে; মানুষ হাঁটতে পারে না, যা শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন লিগ্যালি লাইসেন্স না দিলেও ম্যানুয়াল রিকশার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ তেমন কার্যকর নয় বলেই গ্রামের মানুষ মহানগরমুখী হচ্ছে দিন দিন। সরকার জনগণের টাকায় রাস্তা বড় করে, কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করা হয় পাবলিক ট্রান্সপোর্টের স্ট্যান্ড হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রীর আপ্রাণ চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সমন্বয়হীনতার কারণ হচ্ছে কাজের ভুল ফ্লো-চার্ট এব সিস্টেম্যাটিক চেইন অব কমান্ডের অভাব। উন্নত দেশে ইন্টারসেকশনগুলোকে ফাঁকা রাখা হয়, যাতে চারদিকের যানবাহন নিরবচ্ছিন্নভাবে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এখানেই বেশি যানজট হয়। কারণ এই স্পটেই হকার বেশি বসে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের স্টপেজও এখানে তৈরি করা হয়। অতিবৃষ্টিতে ভাঙা রাস্তায় প্রায়ই রিকশা বা সিএনজি উল্টে মানুষ আহত হলে কাউকে জবাবদিহি করে শাস্তি পেতে হয় না। এতে আবার ট্রাফিক জ্যামেরও সৃষ্টি হয়।

পুলিশ সারাক্ষণ যানবাহনের কাগজ পরীক্ষা করে জনগণকে আতঙ্কে রাখে। কিন্তু জনগণের ক্ষমতা নেই কারও কাছে ভাঙা রাস্তা বা হাঁটুপানি জমে থাকার কারণ জানার। তখন জনগণের দেশপ্রেম উবে যায়; মানসিকভাবে সরকারকে প্রতিপক্ষ ভাবে। জনগণের দেশপ্রেম উবে যায় বলে সে লিটারিং করে যত্রতত্র। তবে রাজশাহী সিটির নগর ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট উন্নত।

আরও পড়ুন: আমন্ত্রণ পাচ্ছেন ৩ হাজার সুধী

জ্যামের কারণে অতিরিক্ত ফুয়েল বার্নের ফলে অতিরিক্ত কার্বন মনো-অক্সাইড তৈরি হয়ে বায়ুদূষণ হয়। ফলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাঁপানি রোগ, এম্ম্ফাইসিমা এবং চোখ ও ত্বকের ক্ষতি হয়। অতিরিক্ত সময় গাড়ি বা বাসে বসে থাকার ফলে কোমরে ব্যথা, শরীর ব্যথা, ব্লাড প্রেশার বাড়া, টেনশনে মাথাব্যথা, পেপটিক আলসার, বমি বমি লাগে বা হয়। বহু পাইলসের রোগী বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। তাঁদের কষ্ট হয়। ডিপ্রেশন, ইনসমনিয়া বা রাত জাগা রোগ, ডাক্তার ও ওষুধ খরচ, গাড়ির আয়ু কমাসহ এসব অযথা ব্যয় পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বহু মানুষ অসৎ পন্থা বেছে নেয়।

বিলম্বের কারণে (সিটিতে আমাদের গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ ৭ কিমি) অ্যাপয়েন্টমেন্টের কমিটমেন্ট নষ্ট হয়ে মানুষের কাছে ছোট হতে হয়; অন্যদিকে অপরচুনিটি কস্ট নষ্ট হয়। এতে মানসিক অস্থিরতা বাড়ে যা কর্মজীবন, সামাজিক জীবন ও দাম্পত্য জীবনে বিরূপ প্রভাব তৈরি হয়। যেটি আল্টিমেটলি শুধু এক ব্যক্তি বা এক সংসারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে পুরো সমাজ বা রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে।

ধনীরা তাঁদের বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য আলাদা গাড়ি কেনেন বা ড্রাইভার রাখেন ব্যাংক লোনে। বাচ্চারা মুরগির খাঁচায় বড় হয়। ইন্টারঅ্যাকশন ছাড়া পূর্ণ মানসিক বিকাশ হয় না। কিন্তু ৫০ জন অভিভাবক এক হয়ে স্কুল ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বলেন না- আমাদের বাচ্চার জন্য আমরা যৌথভাবে একটি স্কুলবাস কিনি, যাতে বাচ্চারা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে। এতে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমবে। সেই সঙ্গে বাচ্চাদেরও সোশ্যালাইজেশনের প্র্যাকটিস তৈরি হবে।

আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আটক

উন্নত দেশে স্কুলবাসেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। আমরা উন্নয়নশীল, তাই আমাদের খানবাহাদুরির ফুটানি অনেক বেশি। এগুলো সোশ্যাল সায়েন্সের অংশ, যা জনস্বাস্থ্যের একটি শাখা। অনেক দেশে মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ের বহু অফিসার নিজের গাড়ি নিজেই চালান। নিজের কফি নিজেই বানান। এমনকি নিজের অফিসিয়াল গোপনীয় কাজ কম্পিউটারে নিজেই করেন; এতে তাঁদের সম্মান কমে না। ফলে পারিবারিক বা দাপ্তরিক কথা ড্রাইভারদের মাধ্যমে ফাঁস হয় না বা অন্যের হাত দিয়ে গোপন কোনো নথিও ফাঁস হয় না। আমরা তা পারি না। কারণ, কয়েকশ বছর গোলামি করে আজ আমরা চৌধুরী হয়ে গেছি।

এটা বলার কারণ হচ্ছে, এই কালচারের কারণেই গ্রামের অশিক্ষিত যুবকরা কৃষিকাজ বাদ দিয়ে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করছে বা ড্রাইভারের হেল্পার হিসেবে কাজ করে কোয়ালিটি ছাড়া ড্রাইভিং করছে মহানগরগুলোতে। এতে মানুষ মারছে বা মানুষকে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে-বাইরে ট্রাফিক ব্যবস্থার চিত্র দেখলেই বোঝা যায়- আমাদের ভোগান্তির জন্য কোন কোন ফ্যাক্টর দায়ী, যা আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। কারণ তিনি বর্তমানে ভিভিআইপি মুভমেন্ট কমিয়ে তাঁর অফিসে বসেই জুমের মাধ্যমে বেশিরভাগ কাজ করেন। ফলে জনগণ রাস্তার বিড়ম্বনা থেকে অনেকটা রেহাই পেয়েছে।

ডা. গোলাম শওকত হোসেন: চিকিৎসক ও শিক্ষক

সান নিউজ/এফএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

ইসলামী ব্যাংকের সাথে হাব-এর মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর উদ্যোগে হ...

শেখ হাসিনাসহ ৬১ জনের নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জে আদালতের নির্দেশে সাবেক প্রধা...

গুমের সঙ্গে জড়িতরা পার পাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গ জড়িতরা পার পায়নি...

বাংলাদেশিদের পাঁচ দেশ ভ্রমণে সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের ৫ দেশে যেতে চাওয়া বাংলাদেশিদের জন...

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক : দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে টস জিতে ও...

কলম্বিয়ায় গেরিলা হামলায় নিহত ৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কলম্বিয়ার আনোরিতে ন্যাশনাল লিবারেশন আর্ম...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা