মোঃ কামাল হোসেন: বর্ণবাদী দেশে বর্ণবাদী চিন্তধারায় হিরো আলমদের মতো মানুষদের এগিয়ে যেতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাকে কেন সঠিক শিক্ষার সুযোগ দেয়া হলো না, তার আগ্রহ, শ্রম ও প্রতিভা বিকাশে নেই কোনো উদ্যোগ, আছে শুধু সমালোচনা, তিনি (হিরো আলম) যদি কোনো শেখ পরিবারে জন্ম নিতেন, তাহলে কুরুচিপূর্ণ বিদেশি পোষাক পরে অশুদ্ধ ভাষা ও ইংরেজি-বাংলা ভাষা মিশ্রিত (বাংলিশ) ভাষায় অভিনয় করলেও তাকে মাথায় তুলে রাখতো এই জাতি।
এই জাতিকে ভালভাবে চিনেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাই তিনি এ দেশের জাতীয় খেলা হা ডু ডু করেছিলেন, এই খেলায় একজন এগিয়ে যেতে চাইলে বাকি দশজন বাধা দিবেন, এটাই নিয়ম। বাস্তবেও তাই কেউ কোনো কাজ করতে চাইলে তাকে আর দশজন শুধু বাধা দিবে আর সমালোচনা করবে। কেউ এসে বলবে না, তুমি যা করছো ভাল করছো, তবে তা যদি বাংলা সাংস্কৃতির সাথে মিল রেখে সুন্দরভাবে করতে তাহলে আরও সুন্দর হতো।
কিন্তু তা করার মতো মানুষ এই দেশে নেই বললেই চলে। আর যারা আছেন, তারা তো উচুজাতের মানুষ, তাদের কি মানায় নিচু জাতের মানুষের সাথে মিশে কোনো কিছু করতে। আর করবেই বা কেন, তারা তো অভিজাত পরিবারের মানুষ। আসলে পৃথিবীর মধ্যে মনে হয় বাংলাদেশ হলো একমাত্র নীরব বর্ণবাদী দেশ। যেখানে সবাই কথা বলে সাধুর মতো কিন্তু অন্য কেউ সাধু হতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আবার নিজেকে ছাড়া অন্য কেউ যোগ্য ভাবতে পারে না।
তাই অনেকে বৈষম্য দূর করতে সারা জীবন কাজ করলেও কিন্তু সমাজ থেকে বৈষম্য দূর না হয়ে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর একটা বিষয় সবাই নিজেকে নায়কের মতো ভাবলেও বাস্তব জীবনে দেখা যায় উল্টো তিনি বা তারা খলনায়কের পক্ষে অবস্থান নেন। অথবা এই দ্বন্দ্বে নিজেকে নিরপেক্ষ রাখতে নীরব থাকেন, পুরোপুরি নীরব ভূমিকা পালন করেন। আমি বলছি না হিরো আলম যা করছে তা সব সঠিক করছে।
তবে তার প্রতিভা আছে, ইচ্ছাশক্তি আছে, সেটা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। সবাই যদি দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তাহলে কি হিরো আলমের সমালোচনা করার যোগ্যতা তাদের থাকে কি? নিজের পরিবার ছাড়া সারা জীবন কাউকে ভাল শিক্ষা ও ভাল কাজের সুযোগ দিলেন না। আর নিজেকে সারাজীবন সুশীল দাবি করবেন। তা তো হতে পারে না। চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে হবে।
মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে বর্ণ বৈষম্যমুক্ত সমাজ চাই, সেই সাথে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হবে। সব জায়গায় হিরো আলমদের মতো মানুষদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। সুষ্ঠু সাংস্কৃতি চর্চার বাধা দূর করতে হবে। তবেই বর্ণ বৈষম্যমুক্ত দেশ, জাতি ও বিশ্ব গড়ে উঠবে।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক।
সান নিউজ/এমকেএইচ