ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি (ছবি: সংগৃহীত)
মতামত

রাশিয়া আদৌ ইউক্রেন আক্রমণ করবে কি?

একেএম শামসুদ্দিন: পূর্ব ইউরোপের দুটি অভিন্ন সীমান্তের দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা মার্কিন জোটভুক্ত দেশের নেতাদের ক্রমেই ভাবিয়ে তুলেছে। এ উত্তেজনা প্রশমনের জন্য রুশ ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে দু-দুবার আলোচনা হলেও কোনো ফল হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় বন্ধুরা মনে করছে, যে কোনো সময় ইউক্রেন দখল করে নিতে পারে রাশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আরও বেশ কয়েকটি দেশ জাতিসংঘে রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেনের সীমান্ত অতিক্রম করলে রাশিয়াকে চরম মূল্য দিতে হবে।

ওদিকে রাশিয়ার অভিযোগ, ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গরবাচেভকে নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট পূর্বদিকে আর সম্প্রসারণ করবে না, যুক্তরাষ্ট্র সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাগ হওয়ার পর থেকে পূর্ব ইউরোপীয় অনেক দেশকে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এর মধ্যে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাতভিয়া ও এস্তোনিয়ার সরাসরি সীমান্ত রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে। এর পর ইউক্রেনও যদি ন্যাটো জোটে যোগ দেয়, তাহলে ন্যাটো বাহিনীর সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রের উপস্থিতি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্য রাশিয়া চাচ্ছে, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে।

জর্জিয়া ও ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে পশ্চিমাদের সরে দাঁড়াতে হবে। ইউক্রেন ও জর্জিয়াসহ যেসব দেশ আগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল অথচ এখনো ন্যাটোর সদস্য হয়নি, তাদের ভূখণ্ডে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করবে না যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। পরস্পরের ভূখণ্ডের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা যায় এমন অঞ্চল বা এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠাবে না। রাশিয়া চায় ন্যাটোভুক্ত পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া ও লিথুয়ানিয়া থেকেও ন্যাটোর যুদ্ধ সরঞ্জামাদি সরিয়ে নেওয়া হোক।

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট যেন পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন না করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো যদি ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তাহলে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। উল্লেখ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জোটভুক্ত দেশগুলো তাদের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ জ্বালানি রাশিয়ার কাছ থেকে পেয়ে থাকে।

ইউক্রেনকে ঘিরে যে কোনো পরিস্থিতি রাশিয়া শক্ত হাতে যে মোকাবিলা করবে, তা পুতিনের সাম্প্রতিক আরও একটি বক্তব্যে বোঝা যায়। তিনি গত ২১ ডিসেম্বর তার উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ে পিছু হটার সুযোগ নেই।’

গত জুলাইয়ে পুতিন রাশিয়া ও ইউক্রেনকে এক জাতি বলেও ঘোষণা দেন। পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভক্তিকে ‘ঐতিহাসিক রাশিয়া ভাঙন’ হিসাবে দেখেন।

সম্প্রতি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, ক্রিমিয়া ও ইউক্রেন সীমান্তের রুশ সেনাঘাঁটিতে শত শত সাঁজোয়া গাড়ি, ট্যাঙ্ক, দূর ও মধ্যমপাল্লার আর্টিলারি গান, রকেট লাঞ্চার ও মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করা আছে। এ অঞ্চলে বর্তমানে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন রেখেছে মস্কো। এর মধ্যে ১ লাখ ৬ হাজারেরও বেশি গ্রাউন্ড ফোর্স।

নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্য মিলিয়ে এ সংখ্যা হবে ১ লাখ ২৭ হাজারের কাছাকাছি। রাশিয়া এরই মধ্যে ছয়টি যুদ্ধজাহাজ ভূমধ্যসাগরে পাঠিয়েছে, যা ধীরে ধীরে ইউক্রেন উপকূলের দিকে যাচ্ছে বলে দেখা গেছে। অপরদিকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে এস্তোনিয়া, লাতভিয়া ও লিথুয়ানিয়া।

ইউক্রেনের হাতে ট্যাঙ্কবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দিয়েছে বাল্টিক দেশগুলো। ইউক্রেনের নিজেদের সক্রিয় সৈন্য আছে ২ লাখের কাছাকাছি। তবে সামরিক সরঞ্জামাদি মোতায়েনে ইউক্রেন রাশিয়ার তুলনায় অনেক পিছিয়ে।

রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই গত ডিসেম্বরে দেওয়া প্রতিশ্রুতির ২০ কোটি ডলারের নতুন সামরিক সহায়তার অংশ হিসাবে ৯০ টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ ইউক্রেনে পাঠিয়েছে। পেন্টাগন সম্প্রতি সাড়ে ৮ হাজার সেনাকে জরুরি মোতায়েনের লক্ষ্যে হাই অ্যালার্টে রেখেছে।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স সক্রিয় হলে এ সৈন্য মোতায়েন করা হবে। পরিস্থিতির অবনতি হলে এ সৈন্যের সংখ্যা ৫০ হাজার পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে তাদের। ইউক্রেনে ৩০ জনের কমান্ডো বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে ব্রিটেন। একইসঙ্গে ২ হাজার ট্যাঙ্কবিধ্বংসী গানও পাঠিয়েছে তারা। ভবিষ্যতে এ সহায়তা বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে তাদের।

ডেনমার্ক, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও ন্যাটোভুক্ত অন্যান্য দেশ পূর্ব ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিমান ও রণতরী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।

দিন যত গড়াচ্ছে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ততই উত্তেজনা বাড়ছে। ইউক্রেন পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। ইউক্রেনের পশ্চিমে অবস্থিত পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি। দক্ষিণ-পশ্চিমে রোমানিয়া ও মলদোভা, দক্ষিণে কৃষ্ণসাগর ও আজভ সাগর, পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তরে বেলারুশ। ইউক্রেনের আয়তন ৬,০৩৫০০ বর্গকিলোমিটার।

জনসংখ্যা ৪,৪৪,২৯,৪৭১। ধর্মবিশ্বাসীদের অধিকাংশ খ্রিষ্টান। শতকরা ২২ ভাগ অধিবাসী ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। ইউক্রেনে ৫ লাখ মুসলিম ধর্মাবলম্বীও রয়েছে। ইউক্রেন ঐতিহ্যগতভাবে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। ৩০ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও সামরিক ইউনিট ইউক্রেনের অংশে চলে যায়। তবে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রুশ সমর্থক ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল।

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমা প্রভাবিত গণঅভ্যুত্থানের জেরে প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ পদত্যাগে বাধ্য হন। সেই অভ্যুত্থানের পেছনে প্রধান ইন্ধনদাতা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় বারাক ওবামা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তখন জো বাইডেন ছিলেন তার রানিংমেট। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এখনো প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের পদত্যাগের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। ইয়ানুকোভিচের পদত্যাগের কয়েক দিন পরই ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় উপদ্বীপ ক্রিমিয়ায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তর দখল করে নেয় রুশপন্থি বন্দুকধারীরা।

সে বছর এপ্রিলে রুশপন্থি বিদ্রোহী আর সরকারি বাহিনীর মধ্যে বেঁধে যায় পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ। কয়েক মাস পর বিদ্রোহীদের সহায়তায় ইউক্রেনের পূর্বাংশে রুশ সেনারা প্রবেশ করে। যদিও রাশিয়া তখন তা অস্বীকার করেছিল। উল্লেখ্য, ১৭৮৩ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ক্রিমিয়া রাশিয়ারই অংশ ছিল।

১৯৫৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন ইউক্রেনীয় অধিবাসী প্রেসিডেন্ট নিকিতা খ্রুশ্চভ রুশ ভাষাভাষী অধ্যুষিত ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের কাছে উপহার হিসাবে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ কারণেই সোভিয়েত ইউনিয়েনের ভাঙনের পর রাশিয়া বরাবরই ক্রিমিয়াকে নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ খুঁজছিল।

২০১৪ সালে ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় রাশিয়া। শুধু তাই নয়, একই বছর রুশপন্থি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তের দোনবাস অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় রাশিয়া। ক্রিমিয়া দখলের পর ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার নৌবাহিনীর কৃষ্ণমহাসাগর বহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটি স্থাপন করে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ইউক্রেনের ইতিহাস থেকে সোভিয়েত ও রুশ সংস্কৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা চলছিল বরাবর। ২০১৪ সালের পর তা যেন আরও বেগবান হয়। বর্তমানে বিভিন্ন পার্ক আর জাদুঘর থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে সাবেক সোভিয়েত আমলের ইতিহাস সংবলিত বিভিন্ন উপকরণ।

ভেঙে ফেলা হচ্ছে লেনিন ও মার্কসের ভাস্কর্য। বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে রুশ সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অনেক আনুষ্ঠানিকতা। তারা নিজস্ব ঐতিহ্য-সংস্কৃতিতে গড়ে তুলতে চায় ইউক্রেনের নতুন ইতিহাস। নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি ঝুঁকছে দেশটির সাধারণ মানুষ, যেখানে শুধু ইউক্রেনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই আলোচনা হবে। এ কারণেই ইতিহাসের যেসব স্থানে সোভিয়েত ধারার চিন্তাভাবনা রয়েছে, সেগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ বলছে, ইউক্রেনের নিজস্ব ভাষার বইয়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এটা সত্য, অনেক মানুষ এখনো রুশ ভাষাতেই অভ্যস্ত। তবে সেখানে ইউক্রেনের ভাষার বইয়ের চাহিদাই বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু রাজনৈতিক বলয় নয়, ইতিহাস কিংবা সংস্কৃতি চর্চাতেও নিজস্বতা আনতে চাইছে ইউক্রেন। তারা মূলত ঝুঁকছে ইউরোপের দিকে।

রাশিয়ার আপত্তি সম্ভবত সেখানেই। রাশিয়া যে করেই হোক, ইউরোপীয় বলয় থেকে দূরে রাখার অংশ হিসাবে বিভিন্ন উপায়ে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা জারি রেখেছে। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য চাই তাদের মতাবলম্বীর কাউকে, যাকে ক্ষমতায় বসিয়ে তাদের উদ্দেশ্য সাধন করা যায়। এদিকে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ইউক্রেনের পশ্চিমাপন্থি দলগুলোর বিরোধিতাকারী ৪৫ বছর বয়সি সাবেক এমপি ইয়েভেন মুরায়েভকেই রাশিয়ার সম্ভাব্য পছন্দের লোক হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তাদের ভাষ্য হলো, মুরায়েভ হরহামেশাই ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সমালোচনা করে বলেন, ‘জেলেনস্কি পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত একজন রুশবিরোধী প্রেসিডেন্ট।’

ইউক্রেনকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ যেভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, তাতে যুদ্ধের আশঙ্কাও ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকে কার্যত ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে। পশ্চিমা নেতারা যতই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করুক না কেন, রাশিয়ার দেওয়া সর্বশেষ প্রস্তাব না মানলে মনে হয় না রাশিয়ার অবস্থানের পরিবর্তন হবে। ইউক্রেন ও জর্জিয়াকে ন্যাটোভুক্ত না করার রাশিয়ার প্রস্তাব ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষে মানা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি রাশিয়াও চাইবে না এ দুটি রাষ্ট্রকে ন্যাটোভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক বাহিনী তাদের ঘাড়ের ওপর এসে নিশ্বাস ফেলুক। ইউক্রেনে আক্রমণ করবে না বলে রাশিয়া যতই আশ্বাস দিক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করবে তারা ইউক্রেনে সৈন্য প্রবেশ করাবে কিনা। তবে শিগ্গিরই তা ঘটবে বলে মনে হয় না। যদিও ইউক্রেনের মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে মস্কো হামলা চালাতে পারে।

জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চীনের বিরুদ্ধে লেগেছে, তাতে এখন ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে চীন ও রাশিয়াকে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতা চীনকেও রাশিয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা জোনে আবারও রেকর্ডসংখ্যক চীনের যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করেছে। এর মধ্যে বোমারু বিমানও ছিল। তাইওয়ান দাবি করেছে, তাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আকাশ প্রতিরক্ষা জোনে ৩৯টি যুদ্ধবিমান তারা শনাক্ত করেছে। তাইওয়ান ইস্যুতে চীনও যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যস্ত রেখেছে। তবে চীন তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে এখনই কিছু করবে না। আগামী ৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে শীতকালীন অলিম্পিক। এ সময় অলিম্পিক বয়কট এড়ানোর জন্য চীন ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তারপর হয়তো তাইওয়ান ইস্যুতে তারা আরও বেশি সক্রিয় হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়াও কি তাহলে ইউক্রেন আক্রমণে সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান ও ইউক্রেন দুটি ফ্রন্টেই ব্যতিব্যস্ত থাকে? সেটি হয়তো নাও হতে পারে।

আরও পড়ুন: জয় করতে হবে ভালোবাসা দিয়েই

ইরাক ও আফগানিস্তানে একচেটিয়া যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের পক্ষে যত সহজ ছিল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তাদের পক্ষে তত সহজ হবে কিনা, সে প্রশ্ন তো রয়েই গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ‘আক্রমণাত্মক ব্যবস্থা’ গ্রহণের বিরুদ্ধে রাশিয়া ‘উপযুক্ত প্রতিশোধমূলক সামরিক ব্যবস্থা’ হয়তো নেবে। তবে সে ব্যবস্থা সীমিত সময়ের জন্যই হবে বলে মনে হয়।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা

সাননিউজ/এমএসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নলছিটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির নলছিটিতে শুরু হয়েছে ভূট্টো স্মৃত...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে জ...

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহ...

বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃ...

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতি সপ্তাহের এক...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছ...

ফের বাড়ল সোনার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বাজারে ফের সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা...

ফের হারলো সাকিবের দল

স্পোর্টস ডেস্ক : আবুধাবির টি-টেন টুর্নামেন্টে ফের হারের মুখ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা