আবদুল মান্নান
বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ পালন করছে ঠিক সেই সময় পাকিস্তানের ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর করছে। এই গর্হিত কাজটি হয়েছে বাংলাদেশের ‘বিতর্কিত বিসিবি’র অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। ১৬ ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবসে নাকি পাকিস্তান বনাম ভারতের হকি টিমের খেলার কথাও আলোচনায় ছিল। তবে মহান বিজয় দিবসের কারণে ওই দিনের ম্যাচগুলো পিছিয়ে দিতে এশিয়ান হকি ফেডারেশনকে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে এশিয়ান হকি ফেডারেশন মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাতে ১৬ ডিসেম্বরের ম্যাচ তিনটি একদিন পিছিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুনেছি বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনে একসময়ের পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের দুই নাতিও সদস্য ছিলেন, যাদের একজন জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল। এই আদেল আরও ছিলেন সংসদ সদস্য। এরশাদ তাকে বানিয়েছিলেন ঢাকার ডেপুটি মেয়র। তিনি ২০০০ সালে পুরনো ঢাকায় ১৪ আগস্ট পাকিস্তান দিবসে তার বাড়িতে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়েছিলেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ কামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার বুকে আটটি গুলি লেগেছিল। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশায় কামাল হোসেনের পরিবার আদালতে মামলা করলে আদালত আদেলসহ আরও দু’জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দেয়।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশকে আবার একটা মিনি পাকিস্তানে রূপান্তর করার নানা রকমের চেষ্টা হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের শুধু পুনর্বাসিতই করেননি তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে বিভিন্ন পদে পদায়ন করে পুরস্কৃত করেন। একাত্তরে জাতিসংঘে যেই শাহ আজিজ বাংলাদেশে পাকিস্তানের গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়েছিলেন; তাকেই জিয়াউর রহমান বানিয়েছিলেন ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। একাত্তরের ঘাতকদের লাইসেন্স দিয়েছিলেন এই দেশে রাজনীতি করার জন্য। এই কাজটি জিয়া, এরশাদ ও বেগম জিয়া সজ্ঞানে ও স্বীয় বিবেচনায় করেছিলেন। জিয়ার আমলে পাঠ্যপুস্তকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বদলে ব্যবহার হওয়া শুরু হলো শুধু হানাদার বাহিনী। বেগম জিয়ার প্রথম দফার শাসনামলে পর্যন্ত এই রেওয়াজ চলেছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একেবারে প্রথম প্রহরেই পূর্ব বাংলায় তৎকালীন সামরিক শাসক টিক্কা খান পাকিস্তানি সেনা বাহিনীকে বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর সাথে সাথে হুকুম দিলেন বেপরোয়াভাবে বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করতে, যাতে ‘খাঁটি’ মুসলমান জন্ম দেয়। সেই কাজটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একেবারে দ্বিধাহীন চিত্তে ‘নিষ্ঠা’র সাথে করেছে। প্রায় তিন লক্ষ বাঙালি বা তার বেশি মা-বোন এই হায়েনাদের হাতে ধর্ষিত হয়েছে। দেশ স্বাধীন হলে অনেকেই সেই ‘খাঁটি’ মুসলমান জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছে, আবার অনেকেই গর্ভপাত ঘটিয়েছেন। সেই ‘খাঁটি’ মুসলমানদের কিছু বংশধরদের দেখা গেলো গত শুক্রবার ও শনিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টুয়েন্টি খেলার সময়।
স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তান ক্রিকেট টিম আসিফ ইকবালের নেতৃত্বে প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসে ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে। এটি ঠিক বাংলাদেশ সফর না বলে বলা যেতে পারে তাদের ভারতে ছয় টেস্ট সিরিজের বিরতির সময় বাংলাদেশে দুই দিনের দুটি ম্যাচ খেলবে। বাংলাদেশ তখন টেস্ট স্ট্যাটাস পায়নি। টিমে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ইমরান খান, সিকান্দার বখত, ইকবাল কাসিম প্রমুখরা। ইমরান খান আসবে শুনে ঢাকার একঝাঁক তরুণী তাকে দেখার জন্য তেজগাঁ বিমানবন্দরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কেউ কেউ তো পারলে ইমরান খানের কোলে গিয়ে বসে। প্রথম খেলা ঢাকা স্টেডিয়ামে ১ জানুয়ারি। দুটি খেলাই বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) একাদশের সাথে। ঢাকা স্টেডিয়ামে যত না বাংলাদেশের সমর্থক, তার চেয়ে বেশি পাকিস্তান টিমের সমর্থক। অথচ এই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ঠিক নয় বছর আগে বাংলাদেশের ত্রিশ লক্ষ মুক্তিপাগল বাঙালিকে হত্যা করেছে আর ‘খাঁটি’ মুসলমান বানানোর জন্য নির্যাতন করেছে আমাদের মা বোনদের। সেদিনই বোঝা গিয়েছিল টিক্কা খান তার লক্ষ্যে সফল। পরদিন এই টিম গেলো চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে চট্টগ্রাম ক্রীড়া সংস্থার একটি দল গিয়েছিল পাকিস্তানি ক্রিকেট টিমকে অভ্যর্থনা জানাতে। ইমরান খান বিমান থেকে নেমেই অভ্যর্থনা জানাতে আসা দলের সদস্যদের জনে জনে নমস্কার বলতে লাগলেন। বিষয়টা এমন যেন স্বাধীন বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই হিন্দু হয়ে গেছেন। পথে স্ট্রান্ড রোড মোড়ে কিছু মানুষ ভিড় করেছিল খেলোয়াড়দের দেখতে। গাড়ি একটু জামে পড়লে ইমরান খানসহ আরও কয়েকজন তাদের বহনকারী বাসের কাচ নামিয়ে সকলকে নমস্কার জানানো শুরু করলো। রেজাউল হক বাচ্চু ছিলেন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর ক্রীড়া রিপোর্টার। ধারাভাষ্যও দিতেন। তিনি বিষয়টা তার পত্রিকায় রিপোর্ট করে দিলেন। জ্বলে উঠলো বিপ্লব তীর্থ চট্টগ্রাম।
২ জানুয়ারি যথারীতি খেলা শুরু হলো। গ্যালারিতে বাংলাদেশি পতাকায় ছেয়ে গেছে। বেলা বারোটার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে এক বিরাট মিছিল চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের গেট ভেঙে মাঠে প্রবেশ করে ফিল্ডিংরত পাকিস্তান টিমের খেলোয়াড়দের ওপর চড়াও হলো। ধাওয়া দিয়ে তাদের ড্রেসিং রুমে পাঠালো। তারপর এলোপাতাড়ি কিল, ঘুসি, মাথায় চেয়ারের আঘাত। পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করার আগে ইকবাল কাসিমের হাত ভেঙে গেলো। সিকান্দার বখতের মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে। ইমরানকে লুকিয়ে রাখা হলো একটি কক্ষে। খেলা পণ্ড। কোনও মতে পরদিন পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা ফেরত গেলো ঢাকায়, তারপর ভারতে।
এখন তো আর সেই বাংলাদেশ নেই। এবার যখন পাকিস্তান এই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির বছরে আর বিজয়ের মাসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে খেলতে এলো, তখন সকল নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে অনুশীলনের সময় তারা পাকিস্তানের পতাকা পুঁতলেন মাঠে। এতে নাকি তাদের দেশপ্রেম উতলে ওঠে। আমি আজীবন খেলাপাগল মানুষ। একসময় দেশের বাইরে গিয়েও খেলা দেখেছি। কিন্তু এরকম একটি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখলাম এই প্রথম। তারপর তো একাত্তরে পাকিস্তানের রেখে যাওয়া সেই ‘খাঁটি’ মুসলমানদের সন্তানরা। একেবারে পাকিস্তানি জার্সি গায়ে লাগিয়ে আর তাদের পতাকা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে। বাইরে এসে তারা বললো পাকিস্তান বাংলাদেশ তো একই দেশ। একাত্তরে আলাদা হওয়াটা ঠিক হয়নি। কয়েকজন বললেন ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’।
এদের ভগ্নিরা একসময় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যখন শহীদ আফ্রিদি পাকিস্তানের পক্ষে খেলছিলেন গ্যালারিতে ব্যানার টানিয়েছিল তাদের বিয়ে করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে একটি সীমাহীন বেহায়াপনা আর দেশদ্রোহিতা। খেলাটি যদি বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যে হতো আর কিছু বাংলাদেশি দর্শক ভারতের পতাকা হাতে নিয়ে ভারতের পক্ষে স্লোগান দিতো, তাহলে ঘটনাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো?
মাঠে যখন আমার দেশ খেলছে, তারা যতই খারাপ খেলুক তাদের তো আমাদের সমর্থন করাই প্রত্যাশিত। বাচ্চা বিকলাঙ্গ হলে তাকে কি মা-বাবা ড্রেনে ফেলে দেয়?
অনেকে বলেন খেলার সঙ্গে রাজনীতি না মেশাতে। তারা মূর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা খেলাও বুঝেন না আর না বুঝেন রাজনীতি। ইতিহাসের অজ্ঞতা সম্পর্কে আর নাই বা বললাম। তারা কি জানে ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের বর্ণবাদ নীতির কারণে বিশ্ব ক্রিকেট হতে নির্বাসিত ছিল? তাদের সাথে শুধু খেলতো অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করবে বলে ঠিক হলো। দলে কালো মানুষ ব্যাসিল ডি অলিভেরা। দক্ষিণ আফ্রিকা বলে দিলো কোনও কালো মানুষ তাদের দেশে খেলতে আসবে না। এই কথা শুনে ১৯৭০ সালে আইসিসি দক্ষিণ আফ্রিকাকে সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করলো।
১৯৩০ সাল। বার্লিনে অলিম্পিকের আসর বসেছে। তখন হিটলার ইউরোপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কালো দৌড়বিদ জেসি ওয়েন্স একাই চারটি স্বর্ণপদক জয় করে নিলেন। হিটলার ঢুকলেন মাঠে পদক দিতে। ওয়েন্সকে পদক পরানোর পর রেওয়াজ অনুযায়ী তার সঙ্গে হাত মেলানোর কথা। হিটলার এই কালো মানুষটির সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকার করলেন। ওয়েন্স তাঁর মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত উঁচু করে ধরে নীরব প্রতিবাদ জানালেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিবল্যান্ডের বিশাল স্টেডিয়ামটি ওয়েন্সের নামে নামকরণ করা হয়েছে। বছর কয় আগে দেখতে গিয়েছিলাম সেই স্টেডিয়াম। মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজেকেই ওয়েন্স মনে হলো। এসব ঘটনা কি খেলার সঙ্গে রাজনীতি?
২০১৬ সালে ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার খেলার পর বিরাট কোহলির এক পাকিস্তানি ভক্ত তার বাড়িতে ভারতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন। পাকিস্তান আদালত তাকে দেশদ্রোহিতার দায়ে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তিনি এখনও এই অপরাধে কারাগারে। বাংলাদেশের ‘অপদার্থ’ বিসিবি এই ব্যাপারে নিশ্চুপ। যারা সম্প্রতি বাংলাদেশ পাকিস্তানের খেলার সময় পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে আর সেই দেশের জার্সি পরে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন আর পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়েছেন, তারা চরম দেশদ্রোহিতামূলক কাজ করেছে। তারা হয়তো জানে না এই পতাকার মালিকদের অতীত ইতিহাস। তারা কি চিন্তা করতে পারে বাংলাদেশ পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ হচ্ছে লাহোরে আর সেখানে বাংলাদেশি সমর্থক একদল তরুণ বাংলাদেশি পতাকা আর জার্সি নিয়ে মাঠে প্রবেশ করলে তাদের কী পরিণতি হবে।
পাকিস্তানি খেলোয়াড় ফাখরে আজম যখন বলে ‘মনে হচ্ছিল আমরা পাকিস্তানে খেলছি’। খেলার আগে পাকিস্তান টিমের অধিনায়ক বাবর আজম বলেছিলেন ‘বাংলাদেশে আমাদের অনেক সমর্থক আছে’। কী চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণী। এসব শুনে আর দেখে আমাদের প্রজন্মের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তখন ভেসে আসে সেই একাত্তরের দিনগুলোর কথা। তখন ভেসে আসে সেই মায়ের কথা, যিনি একুশ বছর ভাত খাননি। কারণ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আজাদকে ধরে নিয়ে গেলে তিনি একদিন সেই ছেলেকে দেখতে গিয়েছিলেন। ছেলে মাকে জানালেন ‘মা অনেক দিন ভাত খাইনি’। সামনের বার আসার সময় আমার জন্য একটু ভাত নিয়ে এসো। মা গিয়েছিলেন ছেলের জন্য ভাত নিয়ে। গিয়ে জানতে পারেন তাঁর আদরের সন্তানকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মেরে ফেলেছে। এরপর সেই মা বেঁচে ছিলেন একুশ বছর, কিন্তু কখনও ভাত স্পর্শ করেননি।
যারা মিরপুর স্টেডিয়ামে পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে ঢুকেছে বা সেই দেশের জার্সি পরেছে, তারা সকলে আজাদের বয়সী হবে কিন্তু কখনও আজাদ হতে পারবে না। তারা বড়জোড় পাকিস্তানের রেখে যাওয়া রক্তবীজ ছাড়া অন্য কিছু নয়। সব শেষে স্বাধীনতার আগের সময়ের জুয়েলের কথা বলি। জুয়েল ভালো ক্রিকেট খেলতেন। তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। জুয়েল নির্যাতনকারীদের অনুরোধ করেন, ‘আমার যদি আঙুল কেটে দেন তাহলে হাতের তিনটি আঙুল রাখবেন। দেশ স্বাধীন হলে আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হবো। দেশের পক্ষে ক্রিকেট খেলবো’। জুয়েল বাংলাদেশের ত্রিশ লক্ষ শহীদের একজন। বর্তমান প্রজন্ম কি এসব কাহিনি জানে?
লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক
সান নিউজ/ডি