অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু
৪০% লোক অধিক মাত্রায় কোনো না কোন উপসর্গে ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এ ধরনের আক্রান্ত ব্যক্তিকে পোস্ট কভিড বা লং হলারস বলা হয়
আমাদের মধ্যে অনেকেই ভাবেন করোনা নেগেটিভ হলেই মনে হয় সেরে গেলাম; আসলে ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। করোনার জটিলতা মানবদেহে দীর্ঘদিন থাকে। আসলে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও ফুসফুস, হার্ট, লিভার, রক্তনালী, কিডনি, পরিপাকতন্ত্র, মাংসপেশি, চোখ, নাক, মুখ, ত্বক, অস্থিসন্ধি, মস্তিষ্কে ও রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতার মাধ্যমে দীর্ঘদিন থাকে এর প্রভাব। এটা আসলে প্রাথমিক সামগ্রিক প্রদাহেরই ফল ও চলমান প্রক্রিয়া।
করোনার পরপরই রোগী অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অবসাদ, ক্লান্তি, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, হাঁপিয়ে ওঠা, মাংসপেশী ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, নাকে গন্ধ না পাওয়া, অনবরত মাথাব্যথা, স্নায়ুবিক জটিলতা, কানে কম শোনা।
এছাড়া চোখ লাল হয়ে যাওয়া, হাতে বা পায়ে এমনকি শরীরে লাল বা গোলাপি রংঙের চাকা হওয়া, চোখে ব্যথা করা, ঘুম না হওয়া বা ঘুম কমে যাওয়া, ঘুমের মধ্যে বারবার জেগে যাওয়া, কোনো কাজে মনোসংযোগ করতে না পারা, ছোটোখাটো বিষয় মনে না থাকা, সাম্প্রতিক স্মৃতি লোপ পাওয়া, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, বিষণ্নতা, একাকিত্ব, স্ট্রোক, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে।
এমনকি দীর্ঘদিন হাসপাতাল বা আইসিউতে থাকায় post traumatic stress syndrome, জন্ডিস, লিভার ফেইলিওর, কিডনিতে পটাসিয়ামের ভারসাম্যহীনতা, এসিড বেস তারতম্য, ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা, মৃত্যুভয়, চোখ ও শরীরের প্রেশার, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়া, কাশি, বুক ভারি ভারি লাগা, হার্টের গতি বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, মায়োকর্ডাইটিস, লাং ফাইব্রবোসিস, আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া এছাড়া স্ট্রোক বা কার্ডিয়াক এরেস্টের মতো ঘটনাও বিরল নয়।
মোটামুটি ৭০% লোক স্বল্পমাত্রায়, আর ৪০% লোক অধিক মাত্রায় কোনো না কোন উপসর্গে ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এ ধরনের আক্রান্ত ব্যক্তিকে পোস্ট কভিড বা লং হলারস বলা হয়। পুরুষ বা নারীর ক্ষেত্রে অথবা যারা হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তাদের মধ্যে যাদের আগে থেকেই কোনো অসুখ থাকে তাদের মধ্যে এই জটিলতা বেশি।
এগুলো থেকে নিরাপদ থাকতে গেলে ৪৮ ঘণ্টা, ১ মাস, ৩ মাস ও ৬ মাস পর পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। মনোবল রাখতে হবে দৃঢ়। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। কাজে যোগ দিতে হবে ধীরেসুস্থে। কোনো ভারী কাজ করা যাবে না অন্তত ৩ মাস। ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস বাড়াতে হবে আস্তে আস্তে। তাও কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ পরে শুরু করতে হবে।
যোগব্যায়াম বা ইয়োগার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। নিয়মিত ও উপযুক্ত ঘুম, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, শাকসবজি, ফলের রস এগুলো বাড়াবে আপনার জীবনীশক্তি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানো, মুক্ত বাতাস বা পানির কাছাকাছি ভ্রমণ, বই পড়া, পেপার পড়া, নাটক সিনেমা দেখা, ঘরের টুকিটাকি কাজকর্ম করা, ঘর গোছানো, দাবা, ক্যারাম খেলা আপনার মনকে রাখতে পারে প্রফুল্ল। পরিশেষে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ভিটামিন ডি, মাল্টিভিটামিন বা যে কোনো ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে নিয়মিত। সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে করোনা নেগেটিভ মানেই সেরে ওঠা নয়।
লেখক : নাক-কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ।
সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
সান নিউজ/এনকে