পি আর প্ল্যাসিড
আমার লেখার শিরোনাম দেখে কে কী মনে করছেন জানি না। তবে আমার এই লেখার বিষয়টি একবার ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। নয় মাস সময় যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে ঠিকই বাস্তবে এই স্বাধীনতা ভোগের সংজ্ঞা একেকজন একেকভাবে দেন। সে হিসেবে দেশে সবার সব কাজে স্বাধীনতা থাকতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, যার যা খুশি তা-ই করে বেড়াবেন। যার যা খুশি তা-ই করে বেড়ানোর নাম কিন্তু স্বাধীনতা নয়।
পৃথিবীর সব দেশেই নিয়মের বাইরে অনিয়ম ঘটে। প্রবাসে দীর্ঘদিন বসবাসের কারণে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা থেকে বলছি, দেশে আমাদের এই পুলিশ প্রশাসনের অনিয়মের তথ্য সংবাদ নানা সময় নানা মিডিয়ায় দেখে খারাপ লাগে। হতে পারে বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
আজ ১৫ আগস্ট। দিবসটি জাতি পালন করেছে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে। কারণ কিন্তু সকলেরই জানা। আমাদের জাতির পিতার প্রয়াণ দিবস, তাই। জাতির পিতার নিহত হবার মাত্র কয়েক মিনিট আগে বাঁচার আকুতি ছিল। (সবাই যেহেতু বাঁচতে চাই তাই বলা) সেই আকুতি থেকেই তিনি সহযোগিতা চেয়েছিলাম পুলিশ হেডকোয়ার্টারের। কিন্তু শুনতে কষ্ট মনে হলেও ঘটনা যে সত্য। সেদিন অনেক আকুতি করতে না পারলেও তাঁর অবস্থান থেকে একটি কথাই ছিল অনেক কিছু। পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে কেউ আসেনি জাতির পিতার প্রাণ রক্ষার্থে। কাউকে পাঠায়ওনি উর্ধ্বতন কর্মকতারা। উপরন্তু খুনিদের সাথে অতি সহজে হাত মেলালেন। কথা বললেন রেডিও ভবনে গিয়ে। একাত্বতাও প্রকাশ করলেন পুলিশ প্রধান সেদিন খুনিদের সাথে।
আজ জাতি যে শোক দিবস উদযাপন করছে সেদিনে কিন্তু এই পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতার কথাই মনে করিয়ে দেয়। তারা সেদিন জাতির পিতার আবেদন বা নির্দেশ পেয়ে কোনোভাবে যদি চেষ্টা করতো তাহলে হয়তো ঘটনার মোড় নিতো অন্যদিকে। কারো ভাষ্য মতে মেনে নিলাম সেদিনের সেই ঘটনা ছিল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা যে। বিষয়টি এভাবে ছেড়ে দেয়া যায় না। অন্তত চিন্তা-চেতনা বা মূল্যায়ন করা থেকে।
সম্প্রতি একটি ঘটনা ঘটেছে দেশের অভিনেত্রী পরীমনিকে নিয়ে। পরীমনির নামের আগে "প্রথম শ্রেণীর অভিনেত্রী" বা "অতি জনপ্রিয়", বিশেষণগুলো থাকে বলে বলছি। পরীমনিকে যখন তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় তখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে তিনি লাইভে এসে দেশবাসী তথা তার ভক্তকূলের সাথে সংযুক্ত থেকে সরাসরি সব দেখালেন, কি ঘটছিল তখন তাঁর বাসার সামনে।
শুনেছি তার সেই লাইভ প্রোগ্রামটির এ পর্যন্ত কোটির উপর ভিউয়ার্স হয়েছে। কতোজন দেখেছে সেটি বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, কতো বেশি তার ভক্ত বা সমালোচনাকারী জানলো সেদিনের সেই ঘটনাটি, তাই। পরীমনির মতো এত বড় মনের, বড় মানের অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে অবৈধভাবে গ্রেফতার হবার প্রাক্কালে কতো আকুতি করেছিলেন তিনি তাকে সাহায্য করার জন্য। সেটিই বড়। লাইভ প্রোগ্রামেই শুনেছি, তার বাস ভবনের কাছেই পুলিশ অফিস। এমনকি লাইভে সরাসরি পুলিশ অফিসে কল দিয়ে কথা বলেছেন পরীমনি, পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন তিনি, অনেক বড় কর্মকর্তাদের নামও বলেছেন লাইভে। এতেই বুঝতে পারি তার নেটওয়ার্ক কিন্তু যেনতেন নয়। এতো কিছু থাকার পরেও কিন্তু লাইভেই দেখেছেন কেউ আসলেন না তাকে সাহায্য করতে।
আমি ধরেই নিলাম পরীমনি একজন বাজে মেয়ে। জঘন্য অপরাধী (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিতে) কিন্তু তার বাসায় হামলা করার সময় তারা কি কোনো সুনির্দিষ্ট অপরাধের প্রমাণ দিয়ে আইনী কোনো কাগজ দেখিয়ে গ্রেফতার করেছে শিল্পী স্বত্তার এই পরীমনিকে? আমি আইনের ছাত্র নই। আইন বিশেষজ্ঞও নই। ভালো আইন বুঝি না। তারপরেও যতটা বুঝি তা থেকেই বলা।
ধরেই নিলাম পরীমনি জঘন্য অপরাধী। কিন্তু লাইভে এসে যখন বলছিলেন যে তার বাসার সামনে কে বা কারা এসে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে। সে মারাত্মক ভয়ে আছে। জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। লোকগুলো আসলে কারা সে জানে না। অশুভ কোনো উদ্দেশ্য নিয়েও আসতে পারে তারা তার বাসার সামনে। তাই পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে সহযোগীতা প্রার্থণা করেছেন। পরীমনি সেদিন সহযোগিতা পাবে আশা করে যাদের কাছে টেলিফোন করেছিলেন আজ পর্যন্ত কিন্তু তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরীমনিকে হাত কড়া না পড়ালেও গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের গন্তব্যে। দৃশ্যটি দেখে আমার কাছে যতোটা খারাপ লেগেছে তার চেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে তাঁর আকুতি দেখে। এতো পরিচিতি এতো এতো লোক পিছনে থাকার পরেও বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন যে দায়িত্বের অবহেলা করেছে তা দেখে।
সেদিন তাঁর জন্য যাদের যা করণীয় সেটাই করেছে মনে করে কোনো আবেগী যুক্তি দিয়ে আমি পরীমনির পক্ষে সাফাই গাইছি না। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কাজে অনিয়ম কেনো হবে বা হচ্ছে, এই প্রশ্ন একান্ত আমার। আজকে পরীমনিকে বেশ্যা বলা হচ্ছে। তাই যদি হয় তাহলে যাদের কারণে বা যাদের দ্বারা বেশ্যাবৃত্তিতে নাম লেখিয়েছেন, তারা আজ কোথায়?
সরকারের যদি সত্যিই এতো আন্তরিকতা থেকে থাকে অপরাধীকে ধরে জাতির সামনে মুখোশ খুলে দেবার, তাহলে শুধুই পরীমনি কেনো? পরীমনিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। দেখা হয়েছিল দুবার। তার মধ্যে একবার দেখা এবং কথা হয়েছিল বর্তমান প্রধামন্ত্রীর উপস্থিত থাকা এক অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। স্থান চীনমৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র।
সেদিন দেখা হবার পর কথা বলে বেশ ভালো লেগেছিল তাকে। তেমন কোনো বিষয় নয় বা গভীর কোনো বিষয় নিয়েও হয়নি আমাদের আলোচনা। বাইরে থাকার কারণে দেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনেককেই তেমন চিনতাম না তখন, যতোটা চিনি এখন।
আমাকে একজন ডেকে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন পরীমনির সাথে। এজন্য পরীমনির সাথে আমার পরিচয় আছে এই জন্য সিমপ্যাথি কাজ করছে এমনটা কিন্তু নয়। আমি বলছি অন্য কারণে।
সব মিলিয়ে আমার প্রশ্ন, জাতির পিতা তার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরাসরি ফোন করে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে পাননি। সম্প্রতি দেখেছি, দেশের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতা চেয়ে সহযোগিতা পাননি। তাহলে আমরা যে সহযোগিতা পাবো এর নিশ্চয়তা কোথায়? কে দিবে সেই নিশ্চয়তা? কেনোইবা তাদের এমন দায়িত্বের অবহেলা?
আজকের এই শোক দিবসের অনুরোধ আমরা যেমন বলতে শুরু করেছি, ১৫ আগস্ট আর শোক নয়, এখন এই শোক হোক হয়ে গেছে শক্তি। তাই শোক দিবসেরই প্রত্যাশা, পুলিশ প্রশাসন হোক মানুষের বিপদের বন্ধু। কেউ অপরাধী হলে তার ব্যবস্তা হোক ভিন্ন।
লেখক: জাপান প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক।