মতামত

ড. সা’দত ও গৌতম আইচের মৃত্যু

এম এম রুহুল আমিন:

করোনার এ মহামরির কালে কাছাকাছি সময়ে দু’জন সম্মানিত নাগরিকের মৃর্ত্যু আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। জানা গেছে আমাদের সক্ষমতা - অক্ষমতা! অদৃশ্য করোনা আমাদেরকে করে দিয়েছে শ্রেনীহীন- সমান। যদি মানি; যদি বিতর্ক না করি, তাহলে ধরে নেব শিক্ষাও পেয়েছি। আমরা কি সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর জন্য মানুষিকভাবে প্রস্তত ? আসুন দেখি তাঁদের প্রিয়জন, সন্তান ও ডাক্তারের ভাষ্য:

“ড. সাদাত হুসেইন এর ছেলে সাহজেব সাদাত এর টাইম লাইন থেকে:

অসুস্হ হবার টাইম এটা না...গত কয়েকদিন বাবা হারিয়ে আর অসুস্হ মা এর কারনে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কিন্তু আশা করি যেন কাজে না আসে কারো এই লার্নিংগুলো...পরিবার ও আপনি যেন সুস্হ থাকেন।

১. তদ্বির না করলে IEDCR থেকে সহজে নমুনা সংগ্রহ করতে আসে না কেউ। তাই নমুনা সংগ্রহ করতে হতে পারে হাসপাতালে এডমিটের জন্য এরকম সিচুয়েশনে যত আগে সম্ভব যোগাযোগ করুন দেরি না করে।

২. যে হাসপাতালে নেন, নমুনার রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত ডাক্তাররা কোভিড পেসেন্ট হিসেবে ট্রিট করবে আপনার রোগিকে। এটা মূল রোগের ডায়াগনোসিস ও ট্রিটমেন্টকে বিলম্বিত করবে। পেশেন্ট এর রোগের ধরনই যদি এমন হয় যে দ্রুত প্রপার মেডিকেশন লাগবে, সে ক্ষেত্রে ভাগ্য আপনার সহায় হউক। আমার বাবার ক্ষেত্রে ভাগ্য সহায় হয়নি। ডায়াগনোসিস,ট্রিটমেন্ট দুই ই দেরি হয়ে গিয়েছিল।

৩.রোগির যদি কোনক্রমে শ্বাসকষ্ট হয়ে যায়, প্রায় প্রতিটি প্রাইভেট হাসপাতালই এডমিশন নিতে গড়িমসি করবে এবং এই সময়ে তদ্বিরেও কাজ হবে না। বাবা হসপিটালে থাকার একই সময়ে আমার মায়েরও এ্যানেমিয়া হার্ট অ্যাটাকের কারনে ব্রিদিং সমস্যা হওয়ায় ৩/৪ টি হাসপাতাল ঘুরেও এ্যাডমিশন হচ্ছিল না। পরিচিত ডাক্তারের থ্রুতে শেষ মেষ মোটামুটি মানের একটা হাসপাতালে জায়গা হয়, না হলে অ্যাম্বুলেন্সেই মাকে হয়তো হারাতে হতো বাবার সাথেই। কাজেই হাসপাতালের সাথে তর্ক না জুড়ে বরং এফোর্ট দিন কোন হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে, সেটা মোটামুটি হলেও।

৪. প্রাইভেট হাসপাতালে নিলে সেটি কোভিড ১৯ এর জন্য ডেডিকেটেড হোক না হোক, ডাক্তারদের পিপিই এর বিল আপনার ঘাড়ে আসবে মেডিকাল ডিসপোসেবলস হেডিং এর ভিতর। সো বিল শক একটু লাগতে পারে, রেডি থাকুন। এটি সব প্রাইভেট হাসপাতালের পলিসি নাকি সেটা জানি না অবশ্য।

৫. প্রয়োজনীয় ডাক্তার বা স্পেশালিস্টদের একসাথে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কেউ ছুটিতে, কেউ আসা বাদ দিয়েছে, কেউ ২/৩ দিন আসে। একটু কম এক্সপার্টদের হাতে মাঝেই মাঝেই ছেড়ে দিতে হবে আপনার পেশেন্টকে এই সময়ে।

৬. পরিশেষে...এটা অসুস্হ হওয়ার সময় না, করোনাভাইরাসে ধরলে এক সেন্সে কোন না কোন হাসপাতালে হয়তো এ্যাডমিশন পেয়েও যেতে পারেন, সুস্হও হয়ে যাবেন মেবি ঘরে থেকেও। কিন্তু নন করোনা কোন রোগের টাইম এটি না...স্পেশালি একটু জটিল ধরনের কিছু হলে। তাই সুস্হ থাকেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান...যাতে হাসপাতাল থেকে, ডাক্তার থেকে দুরে থাকতে পারেন শত হস্ত।”

সুস্থ থাকুন” না বলে এই সময়, “অসুস্থ না হোন” বলেই দোয়া করতে হবে।

ডা. সুস্মিতা আইচ:
মেয়ে চিকিৎসক, বাবা অতিরিক্ত সচিব। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে ঘুরেছেন কন্যা। কোথাও বাবার চিকিৎসা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেননি বাবাকে চিকিৎসক কন্যা সুস্মিতা আইচ! শনিবার বেলা ১২টার দিকে তার বাবা গৌতম আইচের মৃত্যু হয় বলে তিনি মিডিয়াকে জানিয়েছেন!
---
ডা. সুস্মিতা আইচ ৩৩৩ হটলাইন নম্বর থেকে সরকার যে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে, সেখানকারই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “বাবার আইসিইউ সাপোর্টটা খুবই দরকার ছিল, কিন্তু তা কোথাও পাওয়া যায়নি। বাবার চিকিৎসাই হল না, তিনি মারা গেলেন। আমি ডাক্তার হয়েও কিছু করতে পারলাম না।”

করোনা ছাড়াও অন্য রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে যে ভোগান্তিতে পড়তে হয়, অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
সুস্মিতা আইচ বলেন, “বাবার কিডনির সমস্যা ছিল, নিয়মিত ডায়ালাইসিসের সময় প্রায়ই হঠাৎ করে প্রেসার বেড়ে যেত, শ্বাসকষ্ট হত, লাংসে পানি চলে আসত। তখন আইসিইউ সাপোর্ট হলে ঠিকও হয়ে যেত।”
---
বৃহস্পতিবার ল্যাবএইড হাসপাতালে অতিরিক্ত সচিব গৌতমের ডায়ালাইসিসের সময় প্রেসার বাড়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ল্যাবএইডের ইমার্জেন্সি থেকে চিকিৎসক সুস্মিতা আইচকে ফোন করা হয়। সুস্মিতা বলেন, “আমি বাবাকে ল্যাবএইডে ভর্তি করাতে বলি। তখন তারা বলে, তাদের কনসালটেন্ট নেই, ভর্তি রাখতে পারবে না। তারা জানায়, ল্যাবএইডে তারা আইসিইউ সাপোর্ট দিতে পারবে না। তাই প্রেসার কমানোর ওষুধ দিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে বলে। ল্যাবএইডে তিনি নিয়মিত যে ডাক্তারকে দেখান তিনিও সেদিন ছুটিতে ছিলেন। তখন আমার মনে হয়েছে বাসায় আনা ঠিক হবে না, এই মুহূর্তে অক্সিজেন দরকার। বিকাল ৪টায় ডায়ালাইসিস শেষ হয়। এরপর আমরা বাবাকে নিয়ে বিকাল ৫টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে যাই। তাদের কথা, শ্বাসকষ্ট যেহেতু হচ্ছে, কোভিড-১৯ কি না? অথচ তার কোনো জ্বর ছিল না। আমি নিজে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সব কিছু বুঝিয়ে বললাম। তখন তারা বলল, কোনো রেফারেন্স ছাড়া তারা ভর্তি নিতে পারবে না। সেখানে আমরা কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে চাইলে তারা আইইডিসিআরের কথা বলে। কিন্তু আইইডিসিআরতো টেস্ট বন্ধ করে দিয়েছে!”
---
এরপর বাবাকে নিয়ে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ডা. সুস্মিতা।
তিনি বলেন, “তারাও টেস্ট করানোর কথা বলে স্কয়ারে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালে নিয়ে আসি, কিন্তু তারা পেশেন্টকে দেখেইনি, চেকও করেনি। তারা বলে, ভর্তি নিতে পারবে না। যেহেতু আমি এই হাসপাতালে কাজ করেছি, আমি অতিরিক্ত পরিচালকের সঙ্গে কথা বলি। তিনি চেস্ট এক্সরে করিয়ে আনতে বলেন। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছিল বাবা স্ট্রোক করেছে। কারণ তার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর তিনি কোভিড-১৯ টেস্ট করানোর কথা বলেন। ওখানে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে পারবে না বলে জানানোয় এরপর বাবাকে স্কয়ারে নিয়ে যাই। স্কয়ার বলে, আমাদের পক্ষে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়, আমরা টেস্ট বন্ধ করে দিয়েছি। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে যাই। তারা বলে, পেশেন্টকে কার্ডিয়াক সাপোর্ট দেওয়া দরকার, কিডনির পেশেন্ট যেহেতু। আমাদের এই সাপোর্ট শুরু হয়নি, আমরা পারব না। সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী কার্ডিয়াকে যাই। তারা রাখতে পারবে না বলে জানায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কথা বলি, তারাও বলে, এই মুহূর্তে ভর্তি নেওয়া সম্ভব না। আমি মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালেও গিয়েছি। কী আর বলবো, আমাদের আশপাশে এমন কোনো হাসাপাতাল নেই যেখানে ভর্তি করানোর চেষ্টা করিনি। পরে সাড়ে ৯টার পর যখন আর কিছু করার ছিল না তখন আমরা বাসায় এসে বসে থাকি।"
---
সব হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে নিয়ে যখন বাসায় বসে আছেন, তখন তাদের এক আত্মীয় অনেক চেষ্টার পর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটা ‘সিট ম্যানেজ’ হওয়ার খবর জানান। ডা. সুস্মিতা বলেন, “রাত ১০টার দিকে আমাদের একজন রিলেটিভ একটা রেফারেন্সে কুর্মিটোলায় একটা জেনারেল বেডের অ্যারেঞ্জ করেন। বাবার অক্সিজেনের খুব বেশি দরকার হওয়ায় তার কোভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গ না থাকলেও তাকে ওই হাসপাতালে নিযে যাই। বাবাকে আলাদা কেবিনে রাখা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে বাবার অক্সিজেন ফল করতে শুরু করল। যে বেডে তাকে রাখা হয়েছিল সেখানে কোনো সরকারি ডাক্তার যায়নি। তারা আমাকে ওষুধ বুঝিয়ে দেয়, আমিই ওষুধ খাওয়াচ্ছি, আমার ভাই অক্সিজেন দিচ্ছে। আমি ডাক্তার হিসেবে মনে করি, বাবার করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। ডায়ালাইসিসের সময় তার আগেও এমন হয়েছে। এই অবস্থায় হাসপাতালগুলো চাইলেই তাকে ভর্তি নিতে পারতো। করোনা সন্দেহ হলে তাকে প্রয়োজনে আইসোলেশনে রাখতে পারতো, কিন্তু কেউ সেটা করেনি। আমাব বাবা প্রোপার টিটমেন্ট এর অভাবেই মারা গেলেন!”
---
কী যে মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছি না। শুধু এটুকুই বলবো, এই যদি হয় একজন অতিরিক্ত সচিবের চিকিৎসা ব্যবস্থা, তখন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী যে হচ্ছে বা হতে পারে, তা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে! মহান স্রষ্টা সহায়.... [email protected], ০৯ মে, ২০২০

ডা. সাজ্জাদ হোসাইন মাসুম, কুর্মিটোলা হাসপাতাল:
ব্যক্তিগত কারণে কিছুটা স্ট্রেসড সময় পার করছি। কথা বলার ইচ্ছা কমে গেছে। তাছাড়া আগে থেকেই অভিযোগের উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ তা অর্থহীন। কোন লাভ হয় না। সবাই সবকিছু নিজের মতই বিশ্বাস করেন। তবু কয়েকটা কথা বলতেই হচ্ছে। কারণ আমি নিজেই সরাসরি ব্যাপারটায় জড়িত।

দুইদিন থেকে একটি খবর নেটে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই আমাকে ইনবক্স করেছেন, নিজের টাইমলাইনে বন্ধুরাও শেয়ার করছেন। খবরটি সর্বতোভাবে সত্যি হলে আসলেই সেটা খুবই আপত্তিজনক।

সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যিনি দীর্ঘদিন থেকে কিডনী সমস্যায় ভুগছিলেন, জটিলতা দেখা দিলে তিনি এইসময়ে চেষ্টা করেও হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হতে পারেননি। সর্বশেষ কুর্মিটোলায় ভর্তি হন এবং আই সি ইউতে না নেওয়ার কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর কন্যা একজন সরকারি চিকিৎসক। একজন চিকিৎসকের পিতা এবং একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মৃত্যুতে আমি আন্তরিকভাবে সমব্যাথী। জীবনে এইটুকু অর্জন সহজে তিনি করতে পারেননি। রাষ্ট্রের কাছে তার প্রত্যাশা এবং প্রাপ্যতা অন্যদের থেকে বেশি।

অন্য হাসপাতালগুলোর কথা আমি জানিনা। আমি কুর্মিটোলার ব্যাপারে দুয়েকটি কথা বলতে চাই। গভীর রাতে তিনি কুর্মিটোলা হাসপাতালে পজিটিভ রোগি হিসাবে ভর্তি হন। কেবিন খালি না থাকায় তাঁকে প্রথমে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেই রাত্রেই পরিচালক মহোদয় প্রাধিকারের কারণে প্রথম খালি কেবিনে তাঁকে শিফট করার ব্যাবস্থা করেন। পরদিন সন্ধ্যায় তাঁর কন্যার কাছ থেকে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে তাঁর কোভিড টেষ্ট করা হয়নি। পরদিন সকালে তাঁর স্যাম্পল সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়। সেদিন ছিল শুক্রবার।

সেদিন সন্ধ্যায় রাউন্ডের সময় মেডিসিন কনসালট্যান্ট সিদ্ধান্ত নেন তাঁকে আই সি ইউতে শিফট করা প্রয়োজন। তিনি তাঁর কন্যাকে এটি জানান। এবং আই সি ইউতে কল পাঠান। একই সময় ওয়ার্ড থেকে একজন সাধারণ রোগির জন্য আই সি ইউতে কল আসে যার অবস্থা খুব খারাপ। আই সি ইউতে তখন আর মাত্র একটি বেড খালি আছে। আই সি ইউর এম ও আমাকে দুটি রোগি সম্পর্কেই বিস্তারিত জানান। আমি সিদ্ধান্ত নেই ওয়ার্ডের রোগিকে নেওয়ার জন্য এবং প্রথম বেড খালি হওয়ার সাথে সাথে কেবিনের রোগিকে নেওয়ার জন্য। পাঁচ মিনিটের মাঝেই এম ও আমাকে আবার ফোন করে জানান, স্যার মেডিসিনের কনসালট্যান্ট জানিয়েছেন কেবিনের রোগিকেই নিতে, উনি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আমি পরিস্থিতি বিবেচনা করি। এবং মেডিসিনের কনসাল্ট্যান্টকে জানাই সিদ্ধান্ত তাঁকে নেয়ার জন্য, যে কোন একজনকে সিলেক্ট করার জন্য। আমরা যে কোন একজনকেই নিব। আমরা অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষন পর তিনি জানান, কেবিনের রোগি আই সি ইউ তে শিফট হতে রাজি নন। তারা টেষ্টের রিপোর্ট দেখে সিদ্ধান্ত নিবেন। কারণ আই সি ইউর সব রোগি পজিটিভ। রোগির কন্যা রিস্কবন্ড সই করেছেন (যা রোগির ফাইলে এখনো সংরক্ষিত আছে)। পরদিন সকালে পরিচালক মহোদয় তাঁকে ডায়ালাইসিসে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন। কিন্তু সেখানেও সব রোগি পজিটিভ হবার কারণে তাঁরা অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। দুপুরে তাঁর অবস্থার অবনতি হয় এবং তিনি মৃত্যু বরণ করেন। সেইসময় পরিচালক মহোদয় নিজেও কেবিন প্রিমিসিসে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের আরো কিছু অভিযোগ আছে, সেসব নিয়ে কিছু বলবো না, আগে অন্যখানে বলেছি।

প্রতিটি মৃত্যুই চিকিৎসকের পরাজয়, একটি পারিবারিক, মানবিক বিপর্যয়। আমি ব্যাক্তিগতভাবে বর্তমান সময়ে গভীরভাবে বিপর্যস্ত। আমার কাছে মনে হয় চলমান এই বিপর্যয়কে ঠেকানোর জন্য আমাদের একটা জিনিষেরই প্রয়োজন ছিল, একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা। যা তৈরীর দায়িত্ব ডাক্তারদের হাতে কখনোই ছিলনা। এই বিষয়ে আর কিছু বলবো না। শুধু একটা জিনিষ জানুন। এখন পর্যন্ত আমাদের কয়েকটি কোভিড এবং কয়েকটি ননকোভিড হাসপাতাল আছে। শুরু থেকেই মধ্যবর্তী রোগিরা হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে মারা যাচ্ছেন। এই রোগির ক্ষেত্রেও শুরুতে তাই হয়েছে। আজও পর্যন্ত সাসপেক্টেড রোগিদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন ব্যবস্থা হয়নি। আপনারা দোষ ডাক্তারদের দিয়েই ফেইসবুকের পরবর্তী ইভেন্টে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। সমস্যাটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

যান, অসুবিধা নেই। শুনেছি রাস্তায় রাস্তায় জ্যাম। বাজার জমজমাট। গতকাল আড়ংএর ম্যাসেজ পেলাম। জেনে রাখুন কোভিড হাসপাতালগুলো লড়াইএর শেষ সীমায় আছে। আমাদের চিকিৎসক নার্স ওয়ার্ডবয়রা নিজেদের ইনফেক্টেড হওয়া থামাতে পারছেন না। প্রতিটা হাসপাতাল রোগির ভারের শেষ সীমায়। গতকালের নতুন ইনফেকশানের সংখ্যা দেখেছেন। আপনারাই বলেন এই সংখ্যাটা শুধু একটা ফ্র্যাকশান। এরপর আর গালিতে হবেনা। লাঠি নিয়ে এসে ডাক্তার নার্স পিটিয়ে যাবেন। তবু যদি আর দশদিন পর হাসপাতালগুলো আপনাদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতায় থাকে। সারাজীবন শুধু অন্যের দোষ ধরে গেছেন নাগরিক হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালনে চূড়ান্ত অনাগ্রহ। বাঙ্গালী লাইনে দাঁড়ালে মনে করে ইজ্জত শেষ। ফোন পেয়ে কেউ তাঁকে স্যার স্যার করে লাইন থেকে বের করে নিয়ে বিশেষ সার্ভিস দিবে, এই এ্যাটিচুড নিয়ে চলা বাঙ্গালির আজকে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সারাজীবনের সবচেয়ে বড় অপমান। এই অপমানের রিপার্কাশান খুব নীরব হবেনা। আমরা যারা সরকারী হাসপাতালে কাজ করি এইসব আমরা জানি।

তবু সবার মঙ্গল কামনা করি। এনেসথেশিয়া যাঁর কাছে শিখেছি, জীবনের নানা প্রয়োজনীয় দর্শন যাঁর কাছ থেকে নিয়েছি সেই প্রিয়জন কোভিড পজিটিভ। তিনি প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় ভাই, প্রিয় স্বজন। আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য প্রার্থনা করি। জানিনা কখন নিজেরও এই সময় আসে। ভয় কি শুধু এই দেশে ডাক্তারদেরই!!

আবু আলম মো: শহিদ খান, সাবেক সচিব (টক শো, নিউজ২৪, ১১/৫/২০২০, রাত, ৮:৪৫):

“এই করোনাকালে আমি যদি আক্রান্ত হই, তাহলে আমি কোন হাসপাতালে যাবনা। আমি আমার বাসার একটা রুমে আইসোলেশনে থাকব। তারপর যদি মারা যাই তাহলে বলে যাব আমি মারা গেছি এখন আমাকে দাফন করো”।

সংগৃহীত...

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

ইসলামী ব্যাংকের সাথে হাব-এর মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর উদ্যোগে হ...

ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেখ হাসিনা জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়ে...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষে মৃত্যু বেড়ে ২

জেলা প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গোমস্তাপুরে খাস জমি দখল...

অক্টোবরে সড়কে ঝরল ৪৭৫ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত অক্টোবরে মাসে ৪৫২টি সড়ক দুর্ঘটনায়...

ফেন্সি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসের নতুন আউটলেট উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য সচেতন নারী ও পুরুষদের জন্য ত্বকে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা