ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের সঙ্কটের মধ্যেও ধনিক শ্রেণী তাদের সম্পদ বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। করোনাকালে যখন মানুষ মানুষের পাশে থাকবে, তখন গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে দেশেও নির্বিকার চিত্তে কেবল সোশ্যাল মিডিয়া নয়, বরং অনলাইন পোর্টাল এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম অসাধু কাজকারবার করে চলেছে।
সম্প্রতি সিলেটে মিথ্যা তথ্য ও ছবি দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ‘গুজব’ ছড়ানোর জন্য র্যাব-৯-এর সাইবার মনিটরিং টিমের হাতে সাত ব্যক্তি আটক হয়েছে। যারা এ ধরনের অন্যায় করছে তারা যদি দ্রæত শাস্তি পায় তাহলে দেশের মঙ্গল সাধিত হবে। এ ধরনের গুজবের ফলে যারা গুজবকারী তারা অন্যায় স্পৃহায় উদ্বুদ্ধ হয়। অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ, টাউট, বাটপাড়, শিক্ষিত হয়েও অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার প্রয়াস গ্রহণ করে থাকেন।
চোর যেমন ধর্মের কাহিনী শোনে না, গুজকারীরা চোরকে সুবিধা দেয়। মাঝখান থেকে অনেক সময় দেখা যায় সুস্থ ধারার সংবাদ পরিবেশিত হলেও গুজবকারীদের কারণে সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই হয় না। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে গরিব আরও গরিব হচ্ছে এবং ধনী আরও ধনী হচ্ছে। ফোর্বস কর্তৃক প্রকাশিত বার্ষিক তালিকায় দেখা যায় যে, ধনিক শ্রেণীর বিকাশ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ চলাকালীন বৃদ্ধি পেয়েছে।
যেখানে ধনিক শ্রেণীর সম্পদ ৫.০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশেও কিন্তু গত এক বছরে কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেডিট সুইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট-২০২১ অনুসারে বাংলাদেশে এখন ২১,৩৯৯ মিলিয়নিয়ার রয়েছে, যার মধ্যে প্রত্যেকে মার্কিন ডলার ১ হতে ৫ মিলিয়ন সম্পত্তির মালিক। অথচ ২০১৮ সালের শেষে মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বাংলাদেশে ছিল ১৩,৩৩৯ জন এবং এখন তা ৮,০০০-এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী সম্পদের বৈষম্য দেখাতে গিয়ে গেøাবাল ওয়েলথ রিপোর্ট-২০২১ অনুসারে দেখা যায় যে, বিশ্বের সম্পদের ৮২% মাত্র ১০% জনগোষ্ঠীর কাছে সীমাবদ্ধ রয়েছে। অশিক্ষা, কুসংস্কার, মিথ্যাচার ও দুর্নীতি, মাদকাসক্ত, বেলেল্লাপনা ইত্যাদি ধনিক শ্রেণীর সম্পদ আহরণে সহায়ক।
ক্রেডিট সুইসের ওই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দশকে এক শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশের নিট সম্পদ যেখানে ২০১০ সালে ছিল মার্কিন ডলার ২৪০ বিলিয়ন এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে মার্কিন ডলার ৮৩১ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। এটি অবশ্যই সরকারের সাফল্য। কোভিড না থাকলে এর মাত্রা আরও ক্রমশ বৃদ্ধি পেত। বাংলাদেশের নিট সম্পদ এখন ৪১৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, যা বিশ্বব্যাপী সম্পদের ০.২% পর্যন্ত অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। অবশ্য ২০১০ সালে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ০.০৯%। এটি দেশের ক্রমিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতা নিদর্শন করে থাকে।
অবশ্য যারা যুব সমাজ তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের যে বিশাল কর্মপ্রত্যাশী যুব সমাজ রয়েছে তার সংখ্যা পাঁচ কোটির ওপরে। হতাশা থেকে অনেক ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত, সামাজিক সমস্যা, মনোবৈকাল্য সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে এরা কিন্তু বয়স্ক হয়ে যাবে। বাংলাদেশে এখন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা ১,০৬,৯,০০০, যাদের মাথাপিছু গড় সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন ডলার ৭৮৩৭। এর পরিমাণ ২০১০ সালে ছিল ২৭৮৪ মার্কিন ডলার।
অবশ্য মাথাপিছু সম্পদ কখনও একটি দেশের সত্যিকার উন্নয়নের চালচিত্র প্রদর্শন করে না। এতে মানুষ পর্যাপ্ত অবসর পাবে কিনা, পরিবেশের গুণগতমান বজায় থাকছে কিনা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাত্রা কেমন হচ্ছে, বাজার ব্যবস্থাপনার বাইরের ক্রিয়াকলাপ সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, আয়ের বৈষম্যে পরিবর্তন ঘটছে কিনা, আঞ্চলিকতাদুষ্টে উন্নয়নচক্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা, নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক উন্নয়ন হচ্ছে কিনা, বিভিন্ন ধরনের বৃদ্ধির সুবিধা জনগোষ্ঠীর সবাই পাচ্ছে কিনা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সমভাবে বণ্টন হচ্ছে কিনা, সরাসরি হিসাব পরিচালিত হচ্ছে কিনা, এটি যাচাই-বাছাই করা হয় না। ফলে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো উন্নয়ন কখনও কখনও এককেন্দ্রিক থাকে।
অনেক প্রবঞ্চক ধনবান নির্দিষ্ট সময় সরাসরি কর দেয় না।
অথচ জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে কর ব্যবস্থাপনায় সমতাভিত্তিক ও ন্যায্যতাভিত্তিক সুষম কর ব্যবস্থাপনা করা গেলে করদাতারা সমতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কর দিতে বাধ্য হতো। একে তো জনবহুল দেশ, অন্যদিকে ছোট্ট দেশ হওয়ায় অনেকেই কর ফাঁকি দেয়, যা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রয়াসের ক্ষেত্রে বিরূপতার সঞ্চার করে থাকে। করদাতারা যদি মনে করেন যে, তারা সময়মতো কর দেবেন না, তবে তা দেশের জন্য মঙ্গল নয়।
কেবল ব্যবসায়ী, শিল্পপতি উদ্যোগ শ্রেণীই নয়, বরং অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কনসালট্যান্ট এবং নানামুখীভাবে যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে আয় করে থাকেন, তারাও কর দেন না। তারা মনেপ্রাণে এদেশকে ভালবাসেন না। বরং ঔপনিবেশিক আমলে শাসিত হওয়ায় জিন ফ্যাক্টর মজ্জাগতভাবে কর ফাঁকির অভ্যাস কারও কারও মধ্যে গড়ে উঠেছে।
বিশ্বব্যাপী আয় বৈষম্য একটি মারাত্মক ধরনের নীতিগত ব্যর্থতা, যা সাধারণ মানুষকে ক্রমশ অসহনীয় পরিবেশে ঠেলে দেয় এবং মানুষের মধ্যে যে স্বকীয়তা, সৃষ্টিশীলতা, যাপিত জীবন তাতে ব্যষ্টিকভাবে ব্যর্থতার সৃষ্টি করে। সামষ্টিকভাবেও কিছু মানুষের উন্নতি ঘটলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি না করে নির্বিচারে পণ্যসমূহের দাম বৃদ্ধি পায়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। অন্যদিকে প্রবীণদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থায় অর্থায়নের ব্যবস্থা হয়ত উন্নত রাষ্ট্র করতে পারে, কিন্তু যান্ত্রিকতার কারণে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন জীবনবোধ বিনষ্ট হয়।
একটি দেশ তথা সমাজের অর্থনীতির ক্রমবিকাশ সাধারণত ক্রমবর্ধমান আয়, খরচ, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে যে বৃদ্ধি ঘটে তাতে অবশ্যই গুণগতমানসম্পন্ন বাজারমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, উদ্যোক্তা গঠন ও বণ্টন ব্যবস্থাকে সংযুক্ত করতে হয়। দুঃখজনক যে, আমাদের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশকে কখনও জীবনমুখী করা যাচ্ছে না।
অথচ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ বলা ছিল যে, শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ এবং জীবনমুখী উন্নয়ন ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা। হেফাজতের কারণে এদেশে যুগান্তকারী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে অনেক সমস্যার উদ্রেক হয়েছে।
শিক্ষাই পারে মানুষকে মানব মর্যাদা দিতে। লোক দেখানো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, স্বশিক্ষাও অনেক সময় পথ চলতে সাহায্য করে থাকে। বস্তুত প্রকৃত শিক্ষা পেলে যেমন উদার মনোবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি মানুষকে সুরক্ষা দেয়া যায়।
শিক্ষাহীনতা মানসিক অস্থিশীলতা ও কমসংস্থানহীনতা ক্রমশ যুব সমাজকে গ্রাস করলে ধনিক শ্রেণী শোষণ করতে সুবিধা পায়। অনেক উন্নয়নশীল দেশের গ্রামাঞ্চলে যেখানে লোকবলের বসতি অধিক সেখানে অপরাধের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। উন্নত দেশগুলোর এমন শহরাঞ্চল রয়েছে যেখানে অপরাধের মাত্রা বেশি। উন্নত দেশগুলো প্রায়শই উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর মানবাধিকার, মানবাধিকার বলে চিৎকার করে, কিন্তু আমাদের দেশে মানবাধিকার কোন অংশে উন্নত দেশের চেয়ে খারাপ নয়।
তবে যারা দুষ্টু প্রকৃতির, ব্যক্তিগতভাবে যারা জোর-জুলুম, অত্যাচার করে তাদের অবশ্যই দ্রæত শাস্তির মুখোমুখি করা বাঞ্ছনীয়। উন্নত দেশ হলেও মানুষের মর্যাদা ও কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য না দিয়ে সস্তার জন্য দেশের বাইরে শ্রমিকদের দ্বারা কর্মকাণ্ড আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করায় তাদের অর্থনৈতিকভাবে ভিন্ন দেশের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে চিহ্নিত করা দরকার। তবে কখনও কখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যর্থ হলে দেশের একটি মূল অঙ্গ অর্থাৎ মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তাই ঘটাচ্ছে। তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশনের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।
দ্বৈত শাসনের কারণে জাতীয়করণকৃত ব্যাংকসমূহের কর্মকৌশল সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে পারে না। অবলোপনকৃত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হলেও অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের হার হচ্ছে ৬৪ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের জুন মাস শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একে অন্যের সহযোগী, কেউ কারও প্রতিদ্ব›দ্বী নয়। তবে কেন বাংলাদেশ ব্যাংক তার দায় বারবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপিয়ে দেয়? কেন বাংলাদেশ ব্যাংক ল্যান্ডার অব দ্য লাস্ট রিসোর্টের দায় এড়িয়ে বর্তমান সরকারের সাফল্যকে ম্লান করে? বাংলাদেশ ব্যাংক ফার্মার্স ব্যাংককে পদ্মা ব্যাংকে রূপান্তরিত করতে গিয়ে ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে তহবিল সঙ্কটে ফেলে দিয়েছিল। এ ধরনের প্রয়াস গ্রহণ না করে ফার্মার্স ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে অঙ্গীভ‚ত করা আবশ্যক ছিল।
ভবিষ্যতে যদি অন্য ব্যাংকের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয় তবে আশা করব প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলেছিলেন যে, অন্য বেসরকারী ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করা হবে- সেটি যেন বাস্তবে ঘটে। দুষ্টুচক্রের কারণে যাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষতি না হয় সেটি দেখার দায়িত্ব অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের। আসলে যেসব অর্থনীতিবিদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী এবং সৎ ও ন্যায়ভিত্তিক কাজ করেন তাদের দেশের অর্থনীতিতে করোনাকালে কাজে লাগালে অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতি আরও ভাল হতো।
এখন এমনও দেখা যায়, পদে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রীর কথা বলেন। কিন্তু যে যায় লঙ্কায় তাদের অনেকেই রাবণ হয়ে যায়। এতে কিন্তু জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আরও একটি কথা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের মতো শ্বেতহস্তি পালনের আদৌ দরকার আছে কি? প্রায় ব্যাংকেরই নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে।
বিআইবিএম বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে চিত্র তুলে ধরেছে, যাতে গবেষণালব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাংকের উন্নতির বিধান হয়েছে। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সুপারিশ করছি। পাশাপাশি দি ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশে রয়েছে। এ সমস্ত মাথাভারি প্রতিষ্ঠানকে সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করে কার্যকর, দক্ষ এবং বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। জনগণের ট্যাক্সের প্রতিটি পাই পয়সার হিসাব দরকার।
লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট, আইটি এক্সপার্ট
সান নিউজ/এমএম