মতামত

সাইমনের ফিরে আসা হলো না

মনজুরুল আহসান বুলবুল : না, সাইমনের আর ফিরে আসা হলো না। বুকের মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়েই সাইমন ফিরে গেলেন না–ফেরার দেশে। পারিবারিক সূত্র জানাচ্ছে, ১৬ জুলাই বেলা আড়াইটায় রোমানিয়ায় অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা সুস্থ হয়েও মারা যান তিনি। সপরিবারে তাঁর শিগগিরই স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ফ্রান্সে যাওয়ার কথা ছিল এবং তিনি আত্মজীবনী লেখার পরিকল্পনাও করছিলেন। তিনি টুকরো স্মৃতিকথাও লিখছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে একটি বড় কাজের পরিকল্পনা তাঁর ছিল। শুধু সাংবাদিকতা নয়, নানা কল্যাণমূলক কাজে সাইমনের জড়িত থাকার কথা বলে তাঁর স্ত্রী জানাচ্ছেন, রোমানিয়ার এতিম শিশুরা তাঁকে বাবা হিসেবেই জানত।

বাংলাদেশ সাইমনের মৃত্যুর খবরটিও জানল তাঁর মৃত্যুর চার দিন পরে। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা খবর ‘ব্রেক’ করতে এত দেরি হলে সাইমন কীভাবে মুখের দিকে তাকাতেন, সে দৃশ্য কেবল কল্পনা করি। আবার তাড়াহুড়ো করে ব্রেকিংয়ের নামে ভুল সংবাদ না দিই, সেই সতর্কতাও ছিল। সে কারণে সাতসকালে যখন সাইমনের চলে যাওয়ার খবর পাই, প্রথমেই তা বিশ্বাস করিনি। পরে ঢাকা, লন্ডন, রোমানিয়া, ভারত, ফ্রান্সের সম্ভাব্য সব সূত্রের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েই পরাজিত হলো বিশ্বাস, সত্য জানান দিল, সাইমন আর নেই।

বাংলাদেশের যত মানুষ সাইমন ড্রিংয়ের নাম জানেন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় নত হন, বহু বাঙালি সাংবাদিকের নামও এত মানুষ জানেন না। সাদা চামড়ার এই মানুষ বাদামি বাঙালিদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন শুধু সাংবাদিকতা করেই। আর সাংবাদিকদের সামনে তিনি আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছেন সৃজনশীল পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে। তিনি বাংলাদেশকে ধারণ করেছিলেন তাঁর অস্থি, মজ্জায়, বিশ্বাসে। সাইমনকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। কাজেই বলা যায়, জন্মসূত্রে একজন ব্রিটিশ হয়েও তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন বাংলাদেশি।

বাংলাদেশের সঙ্গে সাইমনের এ সংযোগ আকস্মিক। ১৯৭১ সালে লন্ডনের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের তরুণ রিপোর্টার সাইমন ড্রিং। ভিয়েতনাম কভার করতে এসেছিলেন কম্বোডিয়ায়। সে সময়কার পূর্ব পাকিস্তানে তখন টালমাটাল অবস্থা। লন্ডন থেকে আরেকজন রিপোর্টার পাঠানোর চাইতে সাইমনকেই পাঠানো হলো ঢাকায়। একাত্তরের উত্তাল মার্চে তিনি ঢাকায় আসেন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ তিনি কভার করেন। পরে তাঁর সখ্য হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে।

৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে সাইমন বলতেন, ‘ভাষণ আমি বুঝিনি, কিন্তু শেখ মুজিবের দৃঢ়তা আর তাঁর প্রতি লাখ লাখ মানুষের আস্থা দেখে আমি অভিভূত হয়েছিলাম।’ একজন ‘জাত সাংবাদিক’ সাইমন বলতেন, ‘সেই ভাষণ, সেই জনসভা এবং পাকিস্তান সরকারের নানা পদক্ষেপ দেখে আমি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম, “ইট উইল বি আ ব্যাটেল গ্রাউন্ড”, এখানে নতুন ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে।’ সাংবাদিক হিসেবে এ সময়ে এই মাঠে থাকার চেয়ে আর ভালো কিছু হতে পারে না। তাই লন্ডনে অফিসকে জানিয়ে দেন, তিনি ঢাকা ছাড়ছেন না।

পরের অংশ তো সবারই জানা। একজন পরিশ্রমী তরুণ অনুসন্ধানী সাংবাদিক সাইমন ড্রিং ঢুকে গেলেন পাকিস্তানের রাজনীতির সদরে–অন্দরে। তাঁর ‘সোর্স’ তৈরি হলো। তিনি শেখ মুজিবের দৃষ্টি কাড়লেন একজন উজ্জ্বল সাংবাদিক হিসেবে। সাইমনের বাংলাদেশ ও মুজিবপ্রেম ছিল একাকার।

২৫ মার্চ রাতে সব বিদেশি সাংবাদিককে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য করে পাকিস্তানিরা। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে লুকিয়ে থাকা, পরদিন পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার চিত্র প্রত্যক্ষ করা একমাত্র বিদেশি সাংবাদিক সাইমন ড্রিং। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁর সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ তাঁকে ২৭ মার্চ পাকিস্তান থেকে বের করে দেয়। কিন্তু সাইমন তাঁর নোটবুক আর ক্যামেরাম্যান ছবির রিল লুকিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হন।

১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হয় সাইমন ড্রিংয়ের রিপোর্ট ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’। পৃথিবীর মানুষ প্রথম জানতে পারে ২৫ মার্চের কালরাতের হত্যাযজ্ঞের কাহিনি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার চিত্র।
সাইমন পাকিস্তান ছাড়েন, কিন্তু ফিরে আসেন ভারতে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কভার করেন যুদ্ধের মাঠ থেকে। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিকসহ সাইমনকে কলকাতায় আটকও হতে হয়। মার্চে পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত সাইমন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলাদেশে, বিজয়ের খবর কভার করে ফিরে যান লন্ডনে। আবার আসেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, যেদিন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে আসেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর গভীর শোকে আচ্ছন্ন ছিলেন সাইমন। এর মধ্যে তাঁর ঠিকানা বদল হয়েছে। বিবিসিতে কাজ করেছেন। নানা দেশে যুদ্ধ, সংঘাত কভার করতে করতে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। কিন্তু মাথার মধ্যে বাংলাদেশ ছিল সারাক্ষণ।

১৯৯৬ সালে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে নতুন নানা উদ্যোগের মধ্যে বেসরকারি খাতে টেলিভিশনের অনুমতি দেওয়া শুরু হয়। এ দেশের গণমাধ্যম মালিকানায় আরেক প্রবাদপ্রতিম মানুষ এ এস মাহমুদ এগিয়ে আসেন একুশে টেলিভিশন প্রতিষ্ঠার কাজে। তাঁর সহযাত্রী হতে আবার সাইমন আসেন ঢাকায়। দায়িত্ব নেন একুশে টেলিভিশনের এমডি হিসেবে। এ এস মাহমুদ সাইমনকে দিলেন অবারিত স্বাধীনতা। সাইমন ড্রিংয়ের হাত ধরে একদল তরুণ বাংলাদেশে সম্প্রচার সাংবাদিকতা, আরও স্পষ্ট করে বললে টেলিভিশন সাংবাদিকতার দুয়ার উন্মোচন করলেন। সাইমন ড্রিং নেতৃত্বে, সৃজনশীলতায় হয়ে গেলেন বাংলাদেশ তো বটেই, এই উপমহাদেশে সম্প্রচার সাংবাদিকতার জনক।

আমার মতো অনেককেই সাইমন হাতেকলমে শেখান টেলিভিশন আর সংবাদপত্রের সাংবাদিকতার উপস্থাপনা, কপি তৈরি ও প্রযুক্তির ব্যবহারে ভিন্নতা। কীভাবে বিষয় বাছাই করে তার সঙ্গে ছবি আর কণ্ঠ মিশিয়ে মানুষের মনের গভীরে ঠাঁই করে নেওয়া যায়, সেই কৌশল শিখি তাঁর কাছেই। একুশের যাঁরাই মানুষের মনের গভীরে ঢুকে যেতে পেরেছেন, তাঁরাই সাইমনের সৃজনশীল পরিকল্পনার আদর্শ সন্তান। একুশের ঘোষিত সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে সে সময়কার সরকারের অনেক নীতির সঙ্গে মিল ছিল স্পষ্ট।

কিন্তু সাইমনের পেশাদারি নেতৃত্বের কারণেই সাংবাদিকতা যেমন সরকারি নীতির মধ্যে হারিয়ে যায়নি, তেমনি সরকারের সঙ্গে সংঘাতও তৈরি হয়নি। একুশে পরিচালনায় সাইমন ছিলেন আমাদের প্রতিদিনের শিক্ষক, হয়ে উঠেছিলেন আমার গুরু। প্রিন্ট মিডিয়ার একদল সাংবাদিককে তিনি তৈরি করেছিলেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অপ্রতিদ্বন্দ্বী পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে। শুধু সংবাদ বুলেটিন নয়, সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় সাইমনের দূরদর্শী পরিকল্পনার প্রমাণ তো আজ সব টেলিভিশনের দিকে তাকালেই দেখা যাবে। কিন্তু তিনি বাজারে বা নন–সিরিয়াস কাজে বিশ্বাসী ছিলেন না কখনোই। সংবাদপত্র নিয়ে অনুষ্ঠান, আন্তর্জাতিক খবরের বিশ্লেষণ, সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে টক শো, বিশেষ সাক্ষাৎকার—এ দেশের টেলিভিশনে এসব অনুষ্ঠানের রূপকার ছিলেন সাইমন। বিনয়ের সঙ্গে বলি, একুশে টেলিভিশনে আমার জন্য তিনি প্রধান বার্তা সম্পাদকের পদ যেমন সৃষ্টি করেন, তেমনি আমাকে দিয়েই একটু আগে উল্লেখ করা অনুষ্ঠানগুলোরও সূচনা করেন। এর আগে এই পদ বা এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠানের অস্তিত্ব টেলিভিশনে ছিল না। একটি টক শো করতে উপস্থাপকের যোগ্যতা যেমন জরুরি, তেমনি পরিকল্পিত টক শোর জন্য যোগ্য অতিথি নির্বাচনও কঠিন কাজ। অনুষ্ঠানের পেছনে প্রযোজক ও গবেষণাকর্মীর কাজটিও যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সাইমন আমাদের হাত ধরে শেখাতেন। আজকের মতো হরেদরে উপস্থাপক বা টক শোতে অতিথি হওয়া সাইমন কখনোই বরদাশত করতেন না। কোনো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে গেলেই তাঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল কেন, এখন এই অনুষ্ঠান করতে চাও, এই দুই জবাবে সন্তুষ্ট হলেই প্রশ্ন, কতগুলো অ্যাপিসোড হবে? অতগুলো অ্যাপিসোডের যোগ্য অতিথি কারা হবেন, এই প্রশ্নের জবাব মনমতো হলে জানতে চাইতেন, এই অনুষ্ঠান তৈরির জন্য নেপথ্যে যোগ্য প্রযোজক ও গবেষণা করার মতো কর্মী আছে কি না। এসব প্রশ্নের জবাবে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারলেই অনুষ্ঠান করার ছাড়পত্র পাওয়া যেত। নিউজরুম ব্যবস্থাপনায় শুধু নিউজরুম লিডার নয়, সব কর্মী, এমনকি ঢাকার বাইরে থেকে কেউ কোনো পরামর্শ দিলে গুরুত্বের সঙ্গে তা বিবেচনা করতেন সাইমন।

টিম পরিচালনায় ভাষা মাঝেমধ্যে সমস্যা হলেও সাইমন তিন থেকে চারজনের কাছে ইংরেজিতে শুনে পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতেন। তাঁকে বিভ্রান্ত করা ছিল খুব কঠিন কাজ। ছোট–বড় কোনো কিছুই তাঁর চোখ এড়াতো না। মূলত, তাঁর নেতৃত্বই একুশেকে নিয়ে গিয়েছিল আকাশচুম্বী উচ্চতায়।

এ দেশে বামনেরা তাদের চেয়ে উচ্চতার কোনো কিছুকেই পছন্দ করে না। হিংসাই করে না শুধু, তাদের ধ্বংস চায়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর একুশে টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও তা–ই হলো। তিনটি কারণে একুশে টেলিভিশন বামনদের প্রতিহিংসা ও রাজনীতির শিকার হলো। ১. একুশে ঘোষিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, ২. এই টেলিভিশন উদ্বোধন করেছিলেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ৩. একুশে টেলিভিশনের প্রতি অযুত মানুষের আস্থা। একুশে বন্ধ করে দিয়ে বামনরা চাইল তাদের স্বপ্নের টেলিভিশন গড়তে।

এসব অপরাধে একুশের বিরুদ্ধে মামলা হলো। আমি কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে নই, কিন্তু আজ যে সাংবাদিকেরা কোনো কোনো গণমাধ্যম বন্ধের জন্য মাতম করেন, শুধু তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বলি, একুশের বিরুদ্ধে এই মামলার বাদীদের একজন ছিলেন এই সাংবাদিকদেরই পূর্বসূরি এক নেতা। আরও জানিয়ে রাখি, এই মামলার রায়ে একুশে বন্ধ করে দেওয়ার কোনো কথা বলা হয়নি।

তার পরেও কী ভয়ংকর প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে একুশে টেলিভিশন, তা হয়তো একদিন গবেষকেরা বের করবেন। বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রতিহিংসায় আদালতের রায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অস্বাভাবিক দ্রুততায় পুলিশ পাঠিয়ে একুশে টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়, বেকার হয়ে যায় প্রকাশ্য ও নেপথ্যের প্রায় ৫০ হাজার সৃষ্টিশীল জনসম্পদ। শুধু তা–ই নয়, বিএনপি–জামায়াতের ভয়ংকর প্রতিহিংসার শিকার হন সাইমন ড্রিং। তাঁর ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়, তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়। সাইমনকে যাতে কেউ বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে না পারে, পুলিশকে সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এই দুর্যোগের মধ্যেও আমরা কয়েকজন মিলে সেগুনবাগিচা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সবুজ চত্বরে সংক্ষিপ্ত একটি বিদায়সভা করেছিলাম নানা গোয়েন্দা চক্রের বেড়াজালের মধ্যে। এ অনুষ্ঠানে বাইরের যাঁরা সাইমনের একটু অনুগ্রহের জন্য ঘুর ঘুর করতেন, তাঁরা তো বটেই, একুশের অনেক দুমুখোও আসেননি।

৩০ আগস্ট সাইমন ঢাকা ছাড়েন। বিদায়ের আগে তাঁর সেই কান্নার দৃশ্য আজও ভুলিনি। সেই কষ্টেরও মধ্যেও সাইমন মলিন হাসি দিয়ে বলছিলেন, ‘পাকিস্তানিরা একবার আমাকে এ দেশ থেকে বের করে দিয়েছিল, আজ দ্বিতীয়বার বিএনপি-জামায়াত সরকার বের করে দিল, হয়তো তৃতীয়বার এসে থিতু হতে পারব।’ কিছুকাল পরে একুশে টেলিভিশন মুক্তি পেল বটে, কিন্তু একুশের সেই আমলে জমল নানা আবর্জনা। সাইমনের ফেরা হলো না।

তবে দীর্ঘ বিরতির পর তৃতীয়বার সাইমন আবার ফিরে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে। তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিল, কীভাবে টিম গড়বেন, কারা তালিকায় আছেন, সবই জানতাম। তখন আমি আরেকটি টেলিভিশনে কাজ করি, প্রায় সন্ধ্যাতেই আসতেন। কিন্তু একসময় তিন বুঝতে পারলেন, তাঁর সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। প্রবল হতাশা নিয়ে ফিরে গেলেন সাইমন।

চতুর্থবার আবার আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হলো। সেই পরিকল্পনাতেই আমি দ্বিতীয় মেয়াদে একুশে টেলিভিশনে যোগ দিলাম। সাইমনকে আনার উদ্যোগও নেওয়া হলো। কিন্তু মালিককে না জানিয়ে কুচক্রীদের আরোপ করা অপমানজনক কিছু শর্তের কারণে সাইমন এলেন না।

সাইমন বারবার এ দেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন। তাঁর স্ত্রী ফিয়োনা, দুই যমজ কন্যা ইন্ডিয়া ও আভাকে নিয়ে বাংলাদেশেই থিতু হতে চেয়েছেন। একবার ফিয়োনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন গাজিপুরে। সেখানে পাহাড়ি এলাকায় শণে ছাওয়া মাটির ঘর দেখে বলেছিলেন, ঢাকায় কাজ করবেন, আর সেখানে জমি কিনে একটি ‘মাড হাউস’ তৈরি করবেন। সপ্তাহ শেষে সেখানে গিয়ে থাকবেন। ফিয়োনা রোমানিয়াতে গরিব মানুষ নিয়েই কাজ করেন, কাজেই তাঁরও আপত্তি ছিল না। কিন্তু সাইমনের ফিরে আসা হলো না। মাড হাউসে থাকার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।

তবে সরকার সাইমনকে সম্মানিত করেছে বাংলাদেশের বন্ধু বলে। তিনি ফের বাংলাদেশে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সম্মাননা নিতে, থাকতে নয়। এ দেশে অনেক সম্মানিত বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশকে তাঁদের দেশ বলেই জ্ঞান করেন। তাঁদের অধিকাংশই মিশনারি কাজ করতে এসে এ দেশের মানুষকে নিজের করে নিয়েছেন, এ দেশের মানুষও তাঁদের বুক আগলে রেখেছে।

কিন্তু সাইমন ড্রিং এ দেশে একদল সৃজনশীল তরুণকে গড়ে তুলেছেন। এ দেশের সাংবাদিকতায় নতুন এক পথরেখা তৈরি করেছেন। তাঁর দেখানো পথরেখা ধরেই এ দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকতা এগিয়ে চলছে। সাইমন ড্রিং নতুন প্রজন্মের এই সাংবাদিকদের সামনে আদর্শ হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবেন। বাংলাদেশে সম্প্রচার সাংবাদিকতার জনক হিসেবে বেঁচে থাকবেন। একজন পেশাদার সৃজনশীল সাংবাদিককে মানুষ কতটা ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, তার প্রতীক হিসেবে বেঁচে থাকবেন সাইমন ড্রিং। বিদায় গুরু।

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সান নিউজ/এনএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কুমিল্লায় গোমতী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন: ৬ ট্রাক জব্দ, ১ জনের জেল

কুমিল্লার গোমতী নদীর চরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ০৬...

সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতাসহ আহত চার

বগুড়ার রেলওয়ে এলাকায় ছাত্রদল নেতার ওপর সন্ত্রাসী হ...

ভালুকায় নারী ও শিশু ধর্ষণ প্রতিরোধ ও মাদকবিরোধী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

নারী ও শিশুর প্রতি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ এবং মাদকমু...

ফেন্সিডিল ও মদসহ স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার

নীলফামারীতে ফেন্সিডিল ও বিদেশী মদসহ মাদক ব্যবসায়ী...

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংহতি জানালো মুক্তিজোট

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জ...

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলনে কৃষকরা খুশি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে দেশে...

সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতাসহ আহত চার

বগুড়ার রেলওয়ে এলাকায় ছাত্রদল নেতার ওপর সন্ত্রাসী হ...

ফেন্সিডিল ও মদসহ স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার

নীলফামারীতে ফেন্সিডিল ও বিদেশী মদসহ মাদক ব্যবসায়ী...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা