মতামত
করোনা দুর্যোগ

শত্রু একটি, চ্যালেঞ্জ অনেক

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

আমাদের দেশে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে-পরে যেসব অসংগতি, ব্যর্থতা, সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে; চলমান তৃতীয় ঢেউয়েও অবস্থা একই। করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির দায়িত্বশীল ও জনস্বাস্থ্যবিদরা দেশে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির প্রেক্ষাপটে সারাদেশে 'শাটডাউন'-এর পরামর্শ দিয়েছিলেন। সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রীর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত-প্রচারিত খবরে জানা গেল, ২৮ জুন থেকে 'শাটডাউন' নয়; এক সপ্তাহের সর্বাত্মক 'কঠোর লকডাউন' দিতে যাচ্ছে সরকার।

কিন্তু ২৬ জুন এ সিদ্ধান্ত পাল্টে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো- ২৮ জুন থেকে সীমিত পরিসরের লকডাউন সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনে রূপ নেবে ১ জুলাই থেকে। কেন এই সিদ্ধান্ত বদল? করোনা পরিস্থিতির যে চিত্র তাতে সবচেয়ে জরুরি সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন এবং তাতে মোটেও সময়ক্ষেপণের অবকাশ নেই। এর সঙ্গে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

২৭ জুন সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'সমন্বয়হীনতার কারণে শুরুর আগেই পিছিয়ে গেল কঠোর লকডাউন'। শুরুতেই সমন্বয়হীনতার বিষয়টি উল্লেখ করেছি। আমরা দেখছি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে পরিস্থিতির ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় দেখা যাচ্ছে নানারকম অসংগতি।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের পরিস্থিতি যখন ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল এবং আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় এর ঢেউ এসে লাগছিল তখন সংক্রমণের বিস্তার যাতে না ঘটে এ লক্ষ্যে কাগজ-কলমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো অনেক। কার্যক্ষেত্রে যা দেখা গেল তাতে আমাদের শঙ্কার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছিল।

শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিল এবং ধারণা করি, এখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরেই চলে গেছে। তার পরও সরকারের দায়িত্বশীল মহলগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর হলো না। জনপরিসরেও সংক্রমণ ঠেকানোর ব্যবস্থাদি মেনে চলা হলো না। দেশে তৃতীয় ঢেউয়ের উথাল-পাথাল যখন চলছে, তখনও যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে, এর জন্য আরও কত ভয়াবহ মাশুল গুনতে হবে- এই শঙ্কাযুক্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।

নাগরিক সমাজের কেউ কেউ বলেছেন, কঠোর লকডাউন দেওয়া যাবে না জীবিকার স্বার্থে। প্রশ্ন হচ্ছে- জীবন চরমভাবে অনিরাপদ-অনিশ্চিত রেখে জীবিকার বিষয়টি বড় হয়ে উঠল! অস্বীকার করি না, দেশে করোনা-দুর্যোগ দারিদ্র্যের হার অনেক বাড়িয়েছে; কর্মহীনের সংখ্যা স্ম্ফীত হয়ে উঠেছে। বিশ্বের অনেক দেশই জীবন-জীবিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কঠোর অবস্থায় গিয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমরাও প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কার্যকর লকডাউনের সুফল পেয়েছিলাম। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে বেশকিছু অনিয়-দুর্নীতি-অসংগতির চিত্র সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে।

তার পরও মানুষ না খেয়ে থাকেনি কিংবা খাদ্যজনিত সংকটে দরিদ্র-হতদরিদ্রদের তেমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। অস্বীকার করি না, বিপন্ন-বিপর্যস্তদের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে যত কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হোক, কার্যত এর সুফল কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় মিলবে না। তাই কার্যকর কঠোর লকডাউনের সঙ্গে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে। এ ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে সরকার সেনা সদস্যদের কাজে লাগাতে পারে যাতে ভুক্তভোগীরা সরকারের ব্যাপক-বিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী হন। আশা করি, এর বাস্তবায়ন খুব কঠিন কিছু নয়।

ফের আমরা যে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিতে পড়লাম, এ জন্য সরকারের দায়িত্বশীল মহলগুলোর ব্যর্থতা, অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা যেমন রয়েছে, তেমনি সমান্তরালে নাগরিক সমাজের দায়ও কম নয়। 'ঢিলেঢালা' লকডাউনের বিরূপ ফল তো আমরা দেখছিই। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সংক্রমণ গোটা দেশের জন্য এতটা বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করত না যদি তখনই সংক্রমণ গণ্ডিবদ্ধ করতে শতভাগ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত। দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা অতীত থেকে কোনো শিক্ষা নিই না।

দায়িত্বশীলদের উচ্চারণসর্বস্ব অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি আর কার্যক্ষেত্রে কিংবা বিদ্যমান বাস্তবতার মধ্যে বরাবরই ব্যাপক ফারাক দৃশ্যমান। লকডাউন কিংবা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে সরকারের কঠোর পদক্ষেপেও অতীতে 'রাজনীতির গন্ধ' খুঁজতে চেয়েছেন অনেকে। আমরা দেখেছি, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা এ থেকেও ইস্যু সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। নিঃসন্দেহে এসব পরিতাপের বিষয়। সরকারের ব্যর্থতা আছে, থাকবে। কিন্তু সমালোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক। তা ছাড়া এত বড় দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও আমরা জনকল্যাণে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছি না। সরকারও সবাইকে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদারতা দেখাতে পারেনি।

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি যে পর্যায়ে ঠেকেছে, তাতে যত দ্রুত সম্ভব কঠোর লকডাউন কার্যকর করতেই হবে। জরুরি অবস্থা বিবেচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় একেবারে 'শূন্য সহিষ্ণু' হতেই হবে। কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধির ব্যত্যয় যাতে না ঘটে, এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা প্রতিরোধ করতে কঠোরতার চূড়ান্ত পর্যায়ে অবস্থান নিতেই হবে নিষ্ঠুর না হয়ে। আমাদের সার্বিক পরিস্থিতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কিংবা অনেক উন্নত দেশ থেকে এখনও অনেক ভালো।

কিন্তু পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। করোনা প্রাণঘাতী, কিন্তু যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণের থাবা থেকে অনেকাংশেই নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। সবাইকে সচেতন-সতর্ক হতে হবে। সরকারের সামাজিক সহায়তামূলক সব কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই হবে। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। কিন্তু প্রশ্ন আছে ব্যবস্থাপনা নিয়ে।

আমাদের জরুরি সেবা খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থা স্বাস্থ্য খাতের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্নিষ্ট সব বিভাগের অবস্থাই নাজুক। কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে অদূরদর্শিতা, বাস্তবায়নে অদক্ষতা ইত্যাদি তো আছেই; পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা এই খাতে জেঁকে বসেছে। করোনা দুর্যোগ এই দুরবস্থা আরও প্রকটভাবে দেখিয়ে দিল।

প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে অনেক উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে টিকা সংগ্রহের। পররাষ্ট্রসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। আমরা তা পারিনি। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে হতাশাজনক তথ্যই দিয়েছেন। তা ছাড়া আমরা নিজেরা উৎপাদন ব্যবস্থার পথ মসৃণ করতে পারলাম না সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও।

কিউবা দেখিয়ে দিয়েছে চলমান মহামারিতে দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেরা টিকা উৎপাদন করে প্রয়োগের মাধ্যমে। তারা ঘোষণা দিয়েছে- টিকা তারা আমদানি করবে না; নিজেদের ব্যবস্থাপনায় তারা সংকট মোকাবিলা করবে। করছেও। তারা কারও অনুমোদন-অনুমতির অপেক্ষায় থাকেনি। ভয়াবহ দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এমন সিদ্ধান্তই তো নেওয়া উচিত।

নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ ব্যাপকভাবে এইডস আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি বিশ্বের ওষুধ কোম্পানি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বলেছিলেন, তোমরা যদি ওষুধের দাম না কমাও এবং মেধাস্বত্ব ছাড় না দাও কিংবা আমাকে প্রয়োজনের নিরিখে ওষুধ না দাও; কোনো অনুমতির অপেক্ষা না করেই আমরা উৎপাদনে যাব। তা-ই তিনি করেছিলেন।

ওষুধ শিল্প আমাদের বিকাশমান অন্যতম শিল্প। বিশ্ববাজারে আমাদের ওষুধের সুনাম রয়েছে। কয়েকটি কোম্পানির সক্ষমতা নিয়েও সংশয় নেই। কিন্তু আমরা করোনা দুর্যোগে এই সক্ষমতা কাজে লাগাতে এখনও পারছি না। আমাদের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

এখন সংক্রমণ সব বয়সের মানুষের মধ্যেই ছড়াচ্ছে; যদিও আগে বলা হয়েছিল, শিশু-তরুণদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। নতুন যে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, এ নিয়ে আমি শঙ্কিত। যারা টিকা নিয়েছেন, এই ভ্যারিয়েন্ট তাদেরও যে সংক্রমিত করবে না- তা বলা যাচ্ছে না। কাজেই সর্বাবস্থায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ জরুরি।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো ও যুক্তরাষ্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনা নিয়ে তামাশার মাশুল দুটি দেশই ভয়াবহভাবে দিয়েছে, দিচ্ছে। যখন কোনো দেশে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়, তখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের ট্রেড চুক্তি বাইপাস করে পেটেন্টেড ড্রাগ উৎপাদনের নির্দেশ দিতে পারে। আমরা ম্যান্ডেলা কিংবা কিউবার সরকারের মতো অবস্থান কেন নিতে পারছি না- এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

ম্যান্ডেলার কঠোর অবস্থানের কারণে তৎকালীন চিত্র পাল্টে গিয়েছিল। আমাদের যে সক্ষমতা আছে; আমরা সেই পথে যেতেই পারি। পেটেন্টেড টিকাগুলো তৈরির জন্য কম্পালসারি লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে। করোনা নির্মূলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যেমন দরকার, তেমনি দরকার প্রচুর টিকার।

দেশের সবাইকে অবশ্যই টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ের ব্যাপারেও কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এটি অত্যন্ত জরুরি।

পেটেন্টেড ওষুধ বা টিকা উৎপাদনে এ ছাড়া গত্যন্তর নেই। যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ অনেক দেশ এ ব্যাপারে প্রস্তাবও দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারকে এ ব্যাপারে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জনস্বাস্থ্যের ভয়াবহ শত্রু এখন একটি, কিন্তু চ্যালেঞ্জ অনেক। আমাদের বাস্তবতায় এই চ্যালেঞ্জের খতিয়ান আরও দীর্ঘ।

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সান নিউজ/এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বোয়ালমারীতে সড়কে প্রাণ গেল ২ জনের

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ট...

'স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ব্রাহ্মণপাড়ার' পথচলা শুরু

ইবি প্রতিনিধি: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ব্রাহ্মণপাড়া...

মুন্সীগঞ্জে ব্যতিক্রম সাংস্কৃতিক সংস্থার শীতবস্ত্র বিতরণ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী চেতনায় বি...

নারী উদ্যোক্তা তনির স্বামী আর নেই

বিনোদন ডেস্ক: দেশের সামাজিক যোগায...

এলপি গ্যাসের দাম বাড়ল

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ভোক্তা পর্যায়ে এলপি গ্যাসের দাম নতুন...

এবার তোপের মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দুর্নীতির অভিযোগে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনি...

ইস্তাম্বুলে মদপানে ১১ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের রাজধানী ইস্তান্বুলে বিষাক্ত মদ...

ইংলিশদের হারাল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক : অনূর্ধ্ব ১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্র...

সিরাজদিখানে তিন দোকানীকে জরিমানা

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলা...

সোনার খনি থেকে ৬০ লাশ উদ্ধার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের দক্ষিণ-পশ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা