রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক : অবশেষে আমাদের আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো। অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টে রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ইংরেজ শাসনামলে যে আইন করা হয়েছিল সত্য গোপন করার জন্য, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭৩ সালে এই আইনটি বাতিল করতে সাংবাদিকদের দাবির সঙ্গে সরকার একমত হয়। অবাধ তথ্য প্রবাহ আইন করার সময় এই অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হয় এবং সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয় আপাত এই আইনের কার্যকারিতা থাকবে না। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে এই সত্য গোপনের আইন জুড়ে দেয়া হয়।
করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সীমাহীন দুর্নীতির খবর প্রকাশ হতে থাকে।
দুর্নীতিতে নিমজ্জিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং হাসপাতাল। আর এর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টে তাকে আটক করা হয়। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় এ ধরনের আইন অনেকদিন প্রয়োগ হয়নি। আমরা যখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সংশোধনীর জন্য আন্দোলন করি তখন সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে এই আইনটির সংশোধনের আশ্বাস দিয়েও পালন করা হয়নি। এই আইন সাংবাদিকতার ইতিহাসে নতুন ধারা সংযোজিত করেছে।
অতি সম্প্রতি বার্মার সামরিক জান্তা এই আইনটি ব্যবহার করে রয়টার্সের দুজন সাংবাদিককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়। ফলে বার্মার সামরিক জান্তা সারা বিশ্বে নিন্দিত হয়। গণতন্ত্রের উচ্চকণ্ঠ বাংলাদেশও কি শেষ পর্যন্ত বার্মার কাতারে চলে গেল? এটা সত্যি দুঃখজনক। একথা বলতে হবে, গোপন কথাটি রবে না গোপনে। যে দুর্নীতি গোপন করতে চেয়েছিল ইংরেজরা, যে দুর্নীতি গোপন করার জন্য আমরাও উঠেপড়ে লেগেছি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমার মনে হয়, এই আইনটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত এবং এই আইনের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টও বাতিল হওয়া উচিত। কারণ এই আইন যতদিন থাকবে ততদিন সাংবাদিক নির্যাতন চলবে। রোজিনা ইসলাম আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।
সাংবাদিকদের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট একটি ঘুমন্ত বাঘ। কিন্তু বাঘ এখন জেগে উঠেছে। বাঘ যখন জেগে উঠে তখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই বাঘকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমি খুশি হয়েছি সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার ফোরাম তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়ায়। এটাই সঠিক পথ। এটাকে আরো শানিত করতে হবে।
এখানে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি সত্য উদ্ঘাটনের জন্য সাংবাদিকতা করতে হয়, যদি সত্যের জন্য, ন্যায়ের জন্য সাংবাদিকতা করতে হয় তবে কেউ তা করতে দেবে না, বাধা দেবে। বাধা উপেক্ষা করে রোজিনার মতো সাহস নিয়ে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে আরো সোচ্চার হতে হবে। এটাই সুযোগ ডিজিটালি সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার। কারণ এই কথা সরকারকে বুঝতে হবে যে, কথা গোপন করার জন্য যে আইন করা হয়েছিল, সেই গোপন কথাটি রবে না গোপনে। জনসমক্ষে বেরিয়ে আসবেই।
সাননিউজ/টিএস/