মতামত

আন্ত:ক্যাডার দ্বন্দ্ব ও করোনাকালের শিক্ষা

এম এম রুহুল আমিন:

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকেই বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার বিতর্ক চলমান ছিল। ১৭৯৩ সালের ৩নং অধ্যাদেশবলে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস উপমহাদেশে প্রথম সকল বিচারিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। লর্ড কর্নওয়ালিসের পরের গভর্নর লর্ড ওয়েলসলি বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার পক্ষে সমর্থন দেন। তাঁর মতে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের সাথে থাকাটা ব্রিটিশ সংবিধানের মৌলিক নীতির সাথে সাংঘার্ষিক। ফলে লর্ড ওয়েলসলির মতের ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রাদেশিক সরকারকে বিচার বিভাগকে নির্বাহী থেকে আলাদা করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এরপর সময়ের পরিক্রমায় প্রায় ২০০ বছর ধরে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার পদ্ধতি নির্বাচন করতে নানা রকমের কমিটি, উপ-কমিটি গঠিত হলেও তা নির্বাহী বিভাগের মন:পুত না হওয়ায় বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করাটা অধরাই রয়ে যায়। এরপর ১৮৫৩ থেকে ১৯২১ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রশাসকরা মোট ৪টি (১৮৯৩, ১৯০০, ১৯০৮ এবং ১৯১৩) প্রতিবেদন দাখিল করে। ১৯২২ সালে বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এবং ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকারও যদ্দুর সম্ভব বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার নির্দেশনা জারী করে। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয় নাই।

অবশেষে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকারের মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে মোটাদাগে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা হয়। অবশ্য আজও যার পুরোপুরি বাস্তবায়ন কৌশলগত ভাবেই বিঘ্নিত।

রাষ্ট্র পরিচালনার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ব্রিটিশ লর্ডরা এ দেশে নানা ফরম্যাটে প্রশাসক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। সে সময় তারা নিজেরাই অপরাধী ধরে এনে নিজেরাই শাস্তি দিতেন, যা মৌলিকার্থে নিরপেক্ষ ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। অপরাধীর আত্মপক্ষ সমর্থন বা নিরপেক্ষ কোন ফোরামে বক্তব্য উপস্থাপনের কোন সুযোগ থাকত না। অনেক সময় নিরীহ ব্যক্তি প্রশাসকদের ব্যক্তিগত আক্রোশেরও শিকার হতো। দুর্ভাগ্যবশত: ২০২০ সালে এসেও এরূপ কুপ্রথার [Malpractice] কার্যক্রম প্রশাসনিক বিভাগ থেকে পরিচালিত হতে দেখা যায়। [সাংবাদিক আরিফ নির্যাতন, কুড়িগ্রাম]

নির্বাহী ব্যবস্থাপনা ও বিচার ব্যবস্থাপনা দুটিই নি:সন্দেহে ক্ষমতার প্রয়োগ। নির্বাহী বিভাগ নিজের ক্ষমতা খর্ব হয় ভেবে কখনও বিচারিক ক্ষমতা হাতছাড়া করতে চায়নি। ফলে মৌলিক মানবাধিকার আজও নির্বাহী ক্ষমতার কাছে জিম্মি। শুদ্ধ রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক, সুশীল সমাজ বা সুশিক্ষিত নির্বাহীগণকে কখনো কখনো “ঔপনিবেশিক চিন্তাধারা” শব্দকে গালি হিসাবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার আদিকাল থেকেই এর কাঠামোগত প্রয়োগের কারণে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের অন্তরে জল-তেলের একটি সুপ্ত মিশ্রণ হিসাবে সমান্তরাল চলমান ছিল। মৌলিক বিচারিক কাজের সাথে একান্তভাবে যুক্ত কোন ক্ষমতা নির্বাহী ক্ষমতাকে কখনোই ছাপিয়ে যেতে পারেনি।

মোটাদাগে আজকের আলাদাকৃত বিচার বিভাগ মূলত: বিচার বিভাগের বিচারকদের সুদীর্ঘ ২০০ বছরের আইনি সংগ্রামের ফসল।লর্ড ওয়েলসলি থেকে শুরু করে শত শত বছর ধরে চলমান নির্বাহী বিভাগের কৌশলকে পরাস্ত করে বিচারের মাধ্যমে বিচারকের হাতে ন্যস্ত প্রশাসনের আইনানুগ হস্তক্ষেপেই আজকের এ অর্জন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের গৃহীত সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রকে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করার নিশ্চয়তা বিধান করতে বলা হলেও তা নির্বাহী বিভাগের ঔপনিবেশিক চেতনার কারণে বহুবিধ উপায়ে বিঘ্নিত হয়।

মাসদার হোসেন মামলার মাধ্যমে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার পরই বাংলাদেশে মূলত: আন্ত:ক্যাডার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। আর এ দ্বন্দ্বের মূল কেন্দ্রে আবির্ভূত হয় প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগসমুহ। অন্যদিকে আইন ও সাংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকা স্বত্বেও অদ্যাবধি বিচার বিভাগের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় ও বিভাগীয় কার্য সম্পাদনায় প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উপর নির্ভর করতে হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার কাঠামোতে সম্পদ বণ্টনের প্রক্রিয়া নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত। ফলে প্রবৃত্তিগতভাবে বিভাগটি আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে অপর ক্যাডারের প্রতি সম্পদের সুষম বন্টনের যথাযথ মূল্যায়নের প্রতিফলন ঘটায় না।

বাংলাদেশে ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের মৌলিক প্রক্রিয়ায় তেমন কোন ফারাক নেই। ফারাক শুরু হয় কর্মে যোগদানের পর থেকেই। মানব শিশুর হিন্দু-মুসলিম হওয়ার পারিবারিক রেওয়াজের মতই; যদিও শিশুটির হিন্দু-মুসলমান হওয়ার চেয়ে মানব হওয়াটাই ছিল মুখ্য। এক্ষেত্রেও ক্ষমতার প্রাধান্যের বিচারে ক্যাডার চাকুরের সামাজিক সক্ষমতাও প্রদর্শিত হয়। ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের মৌলিক প্রক্রিয়ায় যেমন কোন ফারাক নেই; তেমনি মৌলিক বেতন প্রাপ্তিতেও তেমন কোন তারতম্য নেই। তারতম্য হয় স্ব-স্ব যুক্তিতে সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে। প্রকারভেদে যুক্তি হলো প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তার অফিসে যেতে ড্রাইভারসহ গাড়ী লাগে; শিক্ষক বা চিকিৎসকের লাগে না। এমনকি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক যিনি তাঁর কোন ছাত্র বা ছাত্রীর আগে ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেও তাঁর পরে যোগদানকৃত ছাত্র/ছাত্রীর চেয়েও পিছিয়ে থাকেন। ক্ষেত্র বিশেষে এসব সুযোগ-সুবিধার তারতম্য এতটাই প্রকট যে, তা কখনো কখনো কোন ক্যাডারকে একে অপরের মনিব-ভৃত্যে রূপান্তরিত করে ফেলে। সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক বিচারে আন্ত:ক্যাডার চাকুরের শ্রেণী বিন্যাস মর্মান্তিক-ভয়াবহ। ক্যাডার সার্ভিসের সকল চাকুরের সমান বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বণ্টনের ফলে রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার অবনতি হবার কোন কারণ আছে বলে মনে হয়না।

ক্যাডার সার্ভিসে ক্যাডারভেদে উচ্চতর পদ থাকা বা না থাকার একটা নির্মম রসিকতা বিদ্যমান আছে। আবার উচ্চতর পদ বা গ্রেডে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ক্যাডার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি চালু আছে যার কোন যুক্তিসংগত মানদণ্ড বা বিধান নেই। প্রশাসনে অনুমোদিত পদ না থাকলেও পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি কারো কারো ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট বিধান নাই। ফলে জবাবদিহি বিহীন এ পদোন্নতি পদ্ধতির মাধ্যমে অধিকাংশ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তার কমপক্ষে সর্বোচ্চ বেতন গ্রেড অর্জন সম্ভব হয়।

চিকিৎসক, শিক্ষকসহ অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতি বা উচ্চতর গ্রেড প্রদানের প্রক্রিয়াটি নির্বাহী বিভাগের হাতে থাকায় অনেক ক্যাডার চাকুরের পুরো কর্মজীবন যেমন সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হতে হয় তেমনি পদোন্নতি না পেলেও কমপক্ষে উচ্চতর বেতন গ্রেডও তাদের কপালে জোটে না। একই সালে একই ক্যাডার পরীক্ষার মাধ্যমে যোগদানকৃত কর্মকর্তার পদবী ও বেতন গ্রেডগত অবস্থানে আকাশ-পাতাল দূরত্ব দেখা যায়। ফলে উদাহরণ স্বরূপ প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা যখন ১নং গ্রেডে উন্নীত হন তখন শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ৩নং গ্রেড পর্যন্ত গিয়ে অবসর গ্রহণ করেন; কালে-ভদ্রে একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ১নং গ্রেড পর্যন্ত যেতে পারেন। এমনকি অনেক মেধাবী ক্যাডার কর্মকর্তার অজানা অভিযোগে পদোন্নতি ছাড়া কর্মজীবন শেষ হওয়া ও সামাজিকভাবে নিগৃহীত জীবন কাটানোর ঘটনাও ব্যাপক।

বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের চাকুরেরা পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্যাডারের সুবিধাযুক্ত পদসমুহ অলংকৃত করে থাকেন। কারণ স্ব স্ব ক্যাডারের চাকুরেরা নাকি ঐসব পদ পরিচালনার যোগ্যতা রাখেন না। এমন খোঁড়া যুক্তির আলোকে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের উচ্চতর পদগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় আর্থিক-সামাজিক বঞ্চনার শিকার হন সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগন। তবে কৌশলগত কারণে পুলিশ ও বিচার বিভাগ নিজেদের উচ্চতর পদ কিছুটা ধরে রাখতে সক্ষম হলেও অন্যান্য ক্যাডার সেই সক্ষমতা এখনও অর্জন করতে পারে নাই।

রাষ্ট্রের প্রয়োজনে চিকিৎসকের প্রয়োজন যেমন অনস্বীকার্য; তেমনি শিক্ষকের প্রয়োজনও অপরিসীম।ফলে এসব ক্যাডারের বিলুপ্তি যেমন সম্ভব নয় তেমনি আন্ত:ক্যাডার বৈষম্যের মাধ্যমে এদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করলে তাদের প্রকৃত সেবা থেকে জাতি-রাষ্ট্র বঞ্চিতই হবে। আশ্চর্যজনকভাবে সত্য যে আজ করোনাকালে বৈশ্বিক মহামারীতে চিকিৎসকের প্রয়োজন যেমন অনুভূত হলো; তেমনি অনুভূত হলো শতভাগ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর। জাতি বা রাষ্ট্রকে সেবা দানের বিচারে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিশ্ব আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শিক্ষক ব্যস্ত ঔষধ আবিষ্কারে আর চিকিৎসক ব্যস্ত চিকিৎসা সেবায়। নির্বাহী ও পুলিশসহ অন্যান্যরাও চিকিৎসকের সেবা গ্রহণের রাস্তা বাতলিয়ে দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও সাইনবোর্ড সাঁটানো আছে” বীরেরা এখানে কাজ করেন”। আবার কোন কোন দেশে পুলিশ বিভাগ চিকিৎসকদেরকে গার্ড অব অনার দিচ্ছে এমন ছবিও এখন ভাসছে অন্তর্জালে। ফলে বিলম্বিত হলেও শিক্ষক, চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদেরকে সম্মুখভাগে এগিয়ে যাবার নির্বাহী প্রতিবন্ধকতাসমুহ ধুয়ে ফেলার এখনই সময়।

প্রত্যেক ক্যাডারকে সমান সুযোগ-সুবিধামন্ডিত করে স্ব স্ব ক্যাডারকে কর্তৃত্ব দিলে আন্ত:ক্যাডার পেশাগত উন্নয়ন প্রতিযোগিতার সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে; তুলনামূলক দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জিত হবে; এবং পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে দক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে। উপকৃত হবে দেশ-রাষ্ট্র।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও সদস্য, জাতীয় প্রেসক্লাব

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

লক্ষ্মীপুরে চাষ হচ্ছে সৌদির আজওয়া খেজুর

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: মরুর দেশ সৌদি আরবের বিখ্যাত আজওয়া খেজু...

ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও সিটি ক...

আ’লীগকে নির্বাচনে আনতে চাই বলিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমরা কাউকে নির্বাচনে আনতে চাই, এমনটা বলিন...

কিয়েভে দূতাবাস বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিমান হামলার ভয়...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

পথে সড়কে প্রাণ গেল প্রধান শিক্ষকের

জেলা প্রতিনিধি: ফরিদপুর জেলার সালথায় স্কুলে যাওয়ার পথে দুই ম...

বহু বছরপর সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজি...

২০২৫ সালে স্কুল ছুটি থাকবে ৭৬ দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক...

ইজিপির দায়িত্ব নিয়েছেন বাহারুল 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি)...

ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার হামলা 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এবার ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা