সাগর দত্ত : মুজিববর্ষে এনটিআরসিএ এর তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্যপদ থাকা সাপেক্ষে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ পেতে যাচ্ছে। বর্তমানে চলছে ১৬ তম শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা। করোনা মহামারী ও আইনি জটিলতায় যদিও এনটিআরসিএর নিয়োগ কার্যক্রম কিছুটা ঢিলেঢালা ভাবে চলছে ; কিন্তু সামনেই ১৭ তম এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা।
বর্তমানে দেশের শিক্ষিত বেকারদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি চাকরি। কারণ একটি চাকরির সাথে জড়িয়ে আছে নিজের জীবন ও পরিবারের অনেক কিছু। যারা ১৭ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দেবেন, তারা কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন তা নিয়ে লিখছি।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রিলিমিনারির মোট নম্বর ১০০ এর মধ্যে ৪০% পেলে পাশ যদিও আসলেই ৪০% মার্কস পেলে পাস করায় কি-না, এটা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনাকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। লিখিত পাস করলে আপনকে ভাইভার জন্য ডাকা হবে। ভাইভায় পাস করলে জাতীয় মেধায় আপনার পজিশন ও পরবর্তীতে আবেদনের প্রেক্ষিতে আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে কয়েকটি বিষয়ের উপর। বিষয় গুলো হচ্ছে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। মোট ১০০ টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা যাবে। অর্থাৎ দুটি উত্তর ভুল হলেই প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১ নম্বর কাটা যাবে।
আপনাকে প্রতিটি বিষয়ের জন্যই আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই প্রস্তুতি নিতে হবে ভালভাবে। কারন আপনাকে কয়েক লাখ প্রার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে আর একটি চাকরির সাথে আপনার জীবন ও ভবিষ্যৎ জড়িত।
কী কী পড়বেন ও কীভাবে পড়বেন?
বাংলা
প্রথমেই বাংলা নিয়ে বলছি। বাংলা অংশে ব্যাকরণের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায় উদাহরণসহ ভালোভাবে পড়তে হবে। জানতে হবে কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে। এসএসসি বোর্ড বইয়ের লেখক পরিচিতি বা সাহিত্যিক পরিচিতি অংশ পড়লে অনেকটা সহায়ক হবে। ব্যাকরণ থেকে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাতু, সমাস, বানান শুদ্ধি, পারিভাষিক শব্দ, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন আসে।
সাহিত্য অংশ থেকেও অনেক প্রশ্ন আসে। সাহিত্য অংশে গল্প বা উপন্যাসের রচয়িতা, কবিতার লাইন উল্লেখ করে কবির নাম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ছদ্মনাম, পত্রিকার নাম, সম্পাদকের নাম পড়তে হবে। এই সবগুলো বিষয় যে কোন গাইডে গুছিয়ে দেওয়া আছে। সেখান থেকে পড়তে পারেন।
ইংরেজি
ইংরেজি অংশে অনেকেই দুর্বল থাকে। তবে এটা কঠিন কিছু না। ইংরেজি গ্রামারের Right forms of verb, Tense, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction- থেকে প্রশ্ন আসে। যে কোন গ্রামার বই থেকে গ্রামারের এই টপিকস গুলো উদাহরণসহ পড়ুন। মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idoims, Vocabulary, Synonym, Antonym। ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ ও বাংলা থেকে ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন ও পড়তে হবে। বিগত সালের বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করতে পারেন।
গণিত
গণিত অংশে মার্কস পাওয়া তুলনামূলক ভাবে সহজ। প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা গণিত প্রাকটিস করা দরকার। পাটিগণিতের পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি, ভগ্নাংশ থেকে প্রশ্ন আসে। বীজগণিতের সাধারণ সূত্রাবলী থেকে প্রশ্ন থাকে। মুখে মুখে ও সূত্র প্রয়োগ করে সংক্ষেপে ফল বের করার প্র্যাকটিস করতে হবে। যাতে প্রশ্ন দেখামাত্রই সূত্র প্রয়োগ করে ফল বের করা যায়। জ্যামিতির জন্য ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদির সাধারণ সূত্র ও সূত্রের প্রয়োগ প্রাকটিস করবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবই যেমন অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করলে ভালো হবে।
সাধারণ জ্ঞান
বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ, জাতীয় দিবস থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
আর আন্তর্জাতিক অংশে বিভিন্ন সংস্থা, দেশ, মুদ্রা, রাজধানী, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা থেকে প্রশ্ন থাকে। সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স অবশ্যই পড়বেন।
কম্পিউটার ও আইসিটি থেকেও প্রশ্ন থাকে। আপনি কম্পিউটার ও আইসিটির বেসিক বিষয় গুলো ভালভাবে মনে রাখার চেষ্টা করুন।
বিজ্ঞান, আইসিটি ও কম্পিউটার এর জন্য ২০১৫-২০২০ সালের বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো ভালভাবে পড়লে বেশ কিছু কমন পেতে পারেন।
এভাবে পড়লে আশা করি, আপনি সরকারি যে কোন চাকরির প্রিলিতে ভাল নম্বর পেয়ে প্রিলিমিনারি পাস করতে পারবেন। তবে আপনি চাইলে যিনি আরো ভাল জানেন তার কাছ থেকে বা নিজের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে যেভাবেই নেন না কেন আপনাকে পড়তে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করুন। পারলে আরো বেশি সময় দিন।
পড়ুন, পরিশ্রম করুন, প্রার্থনা করুন এবং পড়ুন। আপনি যদি ভালভাবে পড়েন সেটা কোন না কোন জবে ঠিকই কাজে লাগবে। পড়ালেখা কখনো বৃথা যায় না। কোন না কোন ভাবে এর সুফল আপনি পাবেনই। ভাল প্রস্তুতির মাধ্যমেই ভাল পরীক্ষা দেওয়া যায়। আর পরীক্ষা ভাল হলে জব হওয়াটা সহজ। যারা নেগেটিভ কথা বলবে তাদের থেকে দূরে থাকুন। ভাল থাকবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
লেখক পরিচিতি: সাগর দত্ত
সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি)
নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, কেরানিগঞ্জ
১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ,
জাতীয় মেধায় ১ম স্থান
সান নিউজ/আরএস