জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী, ট্রাস্টি গণস্বাস্থ্য : ৪৬ বৎসরের উজ্জল দীর্ঘ যুবক শেখ মুজিবুর রহমান পকিস্তানের লাহোরে দীপ্ত গম্ভীর স্বরে ১৯৬৬ সনের ৬ ফেব্রুয়ারী তারিখে পশ্চিম পাকিস্তানীদের জ্ঞাত করলেন পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করেন। তারা অর্থনৈতিক বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার এবং ভারতীয় আগ্রাসনের বিপরীতে নিরাপত্তা বঞ্চিত। সমস্যা নিরসনের নিমিত্তে তিনি ৬ দফা দাবী উত্থাপন করেন। তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখাত হলো। উল্টো শুরু হলো শেখ মুজিবসহ ৩৮ জন বাঙ্গালী সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তার রিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা।
অবশ্য পরবর্তীতে প্রমানিত হয়েছিলো যে, অভিযোগের সত্যতার ইতিহাস। শেখ মুজিব ফাঁসির দড়ি থেকে মুক্ত হয়েছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে দেশব্যাপী গণ আন্দোলনের কারণে। ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ তারিখে সিরাজুল আলম খানের চাতুর্য্যে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে আলাপ আলোচনা না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ঢাকসু (DUCSU) নেতা তোফায়েল আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ভূষিত করলেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে।
৬ দফার ভিত্তিতে নির্বাচন করে ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী-লীগ নিরষ্কুশ বিজয় লাভ করে। পাকিস্তানের সামরিক সরকার জাতীয় সংসদ অধিবেশন রহিত করে শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। সে সুযোগ নিয়ে ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াস নেতা সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক চতুরতায় ঢাকসু (DUCSU) ভাইস প্রেসিডেন্ট আ স ম আব্দুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ২ মার্চ ‘স্বাধীণ বাংলাদেশের পতাকা’ উত্তোলন করেন এবং পরের দিন পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে শাহজাহান সিরাজ পাঠ করলেন ‘জয় বাংলা ইশতেহার ঃ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষনা ও কর্মসূচি।
আবহাওয়া উত্তপ্ত হতে থাকলো। জয়বাংলা বাহিনীর ডেপুটি প্রধান কামরুল আলম খান খসরু গান ফায়ার করে যুদ্ধের ঘোষনা দেন। ঢাকাস্থ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা প্রধান মসিহ উদদৌলা শেখ মুজিবুরকে জানালেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালী সৈনিক ও অফিসার বেশী আছে। ফলে এখন বিনা রক্তপাতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম থেকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারের বাঙালী সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার মাহমুদুর রহমান মজুমদার কর্নেল (অব.) এমএজি ওসমানীর মাধ্যমে জানান যে সামরিক গোপন সার্কুলারে তিনি জেনেছেন যে সামরিক সরকার শেখ মুজিবকে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না। তিনি আরও তথ্য দেন যে পূর্ব পাকিস্তান বাঙ্গালী সৈনিক ও কর্মকর্তার আধিক্য থাকায় বিনা রক্তপাতে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু নিজে কোন সিন্ধান্ত না দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদের নিকট উপরোক্ত তথ্য সমূহ পাঠিয়ে দেন।
সিদ্ধান্ত হয় যে, সামরিক সরকারের উপর চাপসৃষ্টির নিমিত্তে ৭ই মার্চ ১৯৭১ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান বক্তব্য রাখবেন এবং দিক নির্দেশনা দেবেন। এটি একটি গণতান্ত্রিক ঐতিহাসিক ভাষন। সামরিক সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডকে দূতায়ালীর জন্য ঢাকা পাঠালেন। তিনি জানালেন যে, ঢাকায় ইয়াহিয়া খান এসে আলাপ আলোচনা করে সংসদ অধিবেশনের তারিখ স্থির করবেন। অপর পক্ষে শেখ মুজিব নিশ্চিত করলেন যে, তিনি বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে এক ধরনের ফেডারেশনে আগ্রহী এবং তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সরকার কমিউনিস্টদের সামলাতে পারবে না।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে আলোচনার নামে ৬ দফার বাস্তবায়ন বিষয়ে সময় ক্ষেপন করলেন এবং ২৪ মার্চ ঢাকা ত্যাগ করলেন, শুরু হলো নিরীহ জনতার উপর সামরিক বাহিনীর গণহত্যা। ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। মেজর জিয়াউর রহমান মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ২৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। ১৯৭১ সনের এপ্রিল ও মে মাসে প্রায় ৭০-৮০ লাখ বাংলাদেশী নাগরিক আত্মরক্ষার নিমিত্তে ভারতে আশ্রয় গ্রহন করে না। ভারতীয় সরকার ও রেডক্রশ সোসাইটি বিস্তারিত তথ্য হস্তান্তর না করায় শরনার্থীর সঠিক তথ্য স্বীকৃত নয়, অনুমান ভিত্তিক।
মুক্তিযুদ্ধের তিন রণাঙ্গন মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃতি ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বরিশালের পেয়ারা বাগানে মার্কসবাদী নেতা সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বে, টাঙ্গাইলে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর অধিনায়কত্বে, নরসিংদীর শিবচরে মান্নান ভুইয়া ও আনোয়ার খান জুনোর পরিচালনায় এবং অন্যান্য আরও কয়েকটি অঞ্চলে। ভারতে অবস্থান করে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সকল সীমান্তে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও কর্ণেল এমএজি ওসমানীর নেতৃত্বে এগারটি সেক্টরে দশজন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে মুক্তিবাহিনী নিয়ন্ত্রিত মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিবাহিনীর মূল শক্তি ছিল কৃষক, শ্রমিক এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। তাদের প্রশিক্ষনের দায়িত্বে ছিল ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার ও হাবিলদারগন, ইপিআর ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে যাওয়া পুলিশগন।
তৃতীয় রণাঙ্গন ছিল লন্ডনে যেখান থেকে বৃটিশ যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় কুটনৈতিক কার্যকলাপ ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আন্দোলন পরিচালিত হতো, দায়িত্বে ছিলেন বিচারপতি আবু সাইয়িদ চৌধুরী। যার কঠিন পরিশ্রমে বিশ্ববিবেক বাংলাদেশের জনগনের পক্ষে সমর্থন দান করে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জেল থেকে ২২ শে ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিপান।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্য সহযোগিতা ও চক্রান্ত ১৯৪৭ সনের ভারত বিভক্তি ভারতীয় রাজনীতিবিদগণ মেনে নিতে পারেনি। ভারতকে ‘পকিস্তান ও ভারত’ দুই দেশে বিভক্ত করাকে তারা ‘ভারত মাতার’ দ্বি-খন্ডন বলে মনে করতেন। ভারতের শাসকগোষ্টির পক্ষে ১৯৪৭ সনের ১০ই জুলাই বুলেটিনে এ বিষয়ে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের বক্তব্য বিশেষভাবে প্রনিধান যোগ্য ‘------for freedom what we have achieved cannot be completed without unity of India.‘ ১৯৬২ সালে চীন ভারত সীমান্ত যুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানকে কিভাবে ভারতের অংশ করা যাবে সে নিয়ে সদূর প্রসারী সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহন করে ভারতীয় প্রধান গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে। ১৯৬৮ সনে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা `রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইঙ্গ’ (Research and Analysis Wing- RAW) নামে পুর্নগঠিত হয় এবং তাদের মূল কার্যক্রম শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তান ঘিরে।
ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা শশাঙ্ক বন্দোপধ্যায় ১৯৬২ সনের ২৫ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান ও দৈনিক ইত্তেফাকের মানিক মিয়ার সাথে দীর্ঘ সময় আলাপ করেন। শশাঙ্কবাবু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত কিন্তু কলকাতায় ২১ ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ রোড, নর্দাণ পার্ক, ভবানীপুর কলকাতা ৭০০০২১ বসবাসকারী চিত্তরঞ্জন সুতারের সাথে শেখ মুজিবের যোগাযোগ করিয়ে দেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের একটি চিঠি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর নিকট পাঠাবার ব্যবস্থা নেন।
পরবর্তীতে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড এবং নিউক্লিয়াসের মূল কর্মকর্তাদের সাথে চিত্তরঞ্জন সুতারের সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে দেন।
কলকাতার ১০৪ রামলাল বাজারের কর্মকার বুক ষ্টল থেকে প্রকাশিত ডা. কালিদাস বৈদ্য তার ‘বাঙ্গালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ মুজিব’ গ্রন্থে এ সম্পর্কিত অনেক তথ্য আছে।
উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৯ জানুয়ারী ১৯৭২ সনে লন্ডন থেকে দিল্লী হয়ে ঢাকা আসার পথে সার্বক্ষনিকভাবে RAW Agent শশাঙ্ক বন্দোপধ্যায় বঙ্গবন্ধুর পাশে বসে এসেছিলেন এবং তিনি ১০ জানুয়ারী তারিখে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে তার আলাপের সকল তথ্য অবহিত করেন। এ সকল তথ্য শশাঙ্ক রচিত আত্মকাহিনীতে আছে। ষাটের দশকে বিপ্লবী চারু মজুমদারের নকশাল আন্দোলনের ভারতের পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যসমূহে দ্রুত ব্যাপ্তিতে কেন্দ্রীয় ভারত সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশের মাধ্যমে গুপ্ত হত্যায় জড়িত হয়ে পড়ে। এতে সমস্যার দ্রুত সমাধান না হওয়া ‘র’ ভারতীয় সাধারন মানুষের বিক্ষোভ ও আবেগ অনুভূতি অন্য পথে তাড়িত করার লক্ষ্যে নতুন পথ সন্ধান শুরু করে। ঠিক এই সময়ে (মার্চ, ১৯৭১) পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণহত্যা শুরু হয় এবং ব্যাপক সংখ্যক পূর্ব পাকিস্তানবাসী আত্মরক্ষার নিমিত্তে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করতে থাকে বিশেষত: পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসাম সীমান্ত দিয়ে। এই তিন রাজ্যের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ অতীতে ভারত বিভক্তির পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন। স্বভাবতই ১৯৭১ সনের শরনার্থীদের জন্য এদের সহানুভূতি থাকা স্বাভাবিক মনে করে নকশাল আদর্শ থেকে দৃষ্টি ভিন্ন পথে চালিত করার জন্য ভারত সীমান্ত পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত শরনার্থীর জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয় RAW এর পরামর্শ ও সাহায্য সহযোগিতায়। RAW এর দূর দৃষ্টি ফলপ্রসু হয়, নকশাল আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং বিপ্লবী নেতা চারু মজুমদার গ্রেফতার হন এবং বিনা চিকিৎসায় জেলে তার মৃত্যু হয়। সম্প্রতিকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে বিচারাধীন মোস্তাক আহমদের মৃত্যুর সাথে চারু মজুমদারের মৃত্যু তুলনীয়।
একই সাথে ভারত সরকার দশ দিনের মধ্যে সৈয়দ নজরুল ও তাজউদ্দিন আহমদের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ণ সাহায্য সহযোগিতা নিশ্চিত করে এবং মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে প্রবাসী সরকারের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনার ব্যবস্থা করে দেন।
কেবলমাত্র প্রবাসী সরকার নির্ধারিত ব্যক্তিদের এফএফ (Freedom Fighter) মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে ভারত সরকার প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হলেও প্রবাসী সরকারের অগোচরে RAW এর মেজর জেনারেল উবান ‘মুজিববাহিনী’ নামে একদল তরুনদের ভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষন দিচ্ছিলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ভারত অনুগত বাংলাদেশ সরকার সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। এই লক্ষ্যে মুজিব বাহিনী ট্রেনিং শেষ করে ১৯৭১ সনের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেই দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত: বামপন্থীদের হত্যা শুরু করে এবং নিরস্ত করে। এমনকি কতকক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনীর সাথেও সংগ্রামে লিপ্ত হয়। RAW ‘র’ মুজিব বাহিনীর মধ্যেও সতর্কতার সাথে শেখ ফজলুল হক মনি ও সিরাজুল আলম খান গ্রুপ সৃষ্টি করে। RAW এর মদদে শেখ ফজলুল হক মনি তাজউদ্দিন আহমদের প্রধানমন্ত্রীত্ব অনৈতিক বলে প্রচার করতে থাকে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভারত সরকারের অগোচরে খন্দকার মোশতাক ৪২ জন পার্লামেন্ট সদস্য নিয়ে কনফাডেরেসনের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করে শেখ মুজিবের মুক্তির প্রচেষ্টা চালানোর কারনে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে প্রত্যাহার করার জন্য ভারত সরকার প্রবাসী সরকারকে বাধ্য করে। বাংলাদেশকে পুরোপরি ভারতের নিয়ন্ত্রনে রাখার লক্ষ্যে দীর্ঘ স্থায়ী গেরিলা যুদ্ধের পরিবর্তে সরাসরি সম্মুখ সমরের মাধ্যমে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার নিমিত্তে সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সরকার প্রবাসী সরকারের সাথে ৭ দফা চুক্তি করে।
১) ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড পাকিস্তানের সাথে সম্মুখযুদ্ধ পরিচালনা করবেন, এমএজি ওসমানী যৌথ কমান্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
২) বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর, অনির্ধারিত সংখ্যক ভারতীয় সেনা বাংলাদেশে অবস্থান করবে।
৩) বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগের পূর্বে বাংলাদেশ সরকারকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পরামর্শ নিতে হবে।
৪) ভারতের রপ্তানী সুবিধার্থে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য হবে খোলা বাজার (Free Market) ভিত্তিক।
৫) বাংলাদেশের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী থাকবে না।
৬) আভ্যন্তরিণ আইন শৃংখলা রক্ষার জন্য মুজিব বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভারতীয় সেনাধ্যক্ষদের নেতৃত্বে একটা প্যারামিলিশিয়া বাহিনী (রক্ষীবাহিনী) গঠিত হবে, যারা কেবল মাত্র প্রধানমন্ত্রীর নিকট জবাবদিহি করবে, অন্য কোন কতৃপক্ষের নিকট নয়। ৭) মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী ছাড়া অন্য কেউ প্রশাসনিক পদে থাকবেন না। শুন্যপদ সমূহ কতক সময়ের জন্য ভারতীয় বাঙ্গালী কর্মকর্তারা পুরন করবেন সহজে বাংলাদেশের আভ্যন্তরিণ সংঘর্ষ ও অন্তকলহ দমনের নিমিত্তে।
চুক্তি প্রণয়নে কর্ণেল ওসমানী জড়িত ছিলেন না। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রমুখ জড়িত ছিলেন। এই ৫,৬ ও ৭ শর্তে কর্ণেল এমএজি ওসমানী ভয়ানক আপত্তি করেন।
শর্ত প্রয়োগ সংক্রান্ত একটি মিটিং কর্ণেল ওসমানী বলেন, শেষ তিনটি শর্ত অপ্রয়োজনীয় এবং অসম্মানজনক। বহু বাংলাদেশী সিএসপি আমলা আছেন। কিছু অংশ প্রবাসী সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কার্যরত আছেন। অধিক সংখ্যক সিএসপি (CSP) আমলা পাকিস্তানে আটক আছেন। তারা নিশ্চয় বিজয়ের পর দেশে ফিরে দায়িত্বভার নিতে পারবেন। ভারতীয় বাঙ্গালী কর্মকর্তাদের বেসামরিক প্রশাসনিক কার্যে নিয়োজিত দেখলে দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এবং প্রচারের সম্ভাবনা রয়েছে যে, বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। ইসলামাবাদের পারিবর্তে দিল্লী কতৃক বাংলাদেশ শাসিত হচ্ছে। সেনাবাহিনী বিহীন স্বাধীন দেশ হাস্যকর। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার ও অন্য সৈনিকদের কি হবে? স্বাধীনচেতা ওসমানীকে ভারত একটি বড় সমস্যা বিবেচনা করে যৌথ কমান্ডে যুদ্ধ পরিচালিত হলেও কর্ণেল ওসমানীকে বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্র পরিদর্শনে বাধা সৃষ্টি করতে থাকে। যুদ্ধের ফলাফল পর্যবেক্ষনের জন্য ওসমানী লেখককে এবং কেএম ওবায়দুর রহমানকে ৫ ডিসেম্বর যশোর পাঠান। ফিরে এসে লেখক কর্ণেল ওসমানীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যশোর ক্যান্টনমেন্ট লুটের তথ্য জ্ঞাত করালে তিনি লেখককে সংগে নিয়ে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জ্ঞাত করেন এবং প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ মন্তব্য করলেন, ‘সব সৈন্যদের একই চরিত্র’। তাজউদ্দিন আহমদের চাপে পড়ে ১০ ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শনের জন্য কর্ণেল ওসমানীকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করতে ভারত সরকার রাজী হয়। ‘র’ সুপরিকল্পিত ভাবে যৌথ কমান্ডকে অস্বীকার করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংগ্রামকে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে রূপ দেবার লক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বরে (1971) পাকিস্তানের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে কর্ণেল ওসমানীর অনুপস্থিতি নিশ্চিত করে। সিলেটের আকাশে একই দিনে অর্তকিতে ওসমানীকে বহনকারী হেলিকপ্টার অজ্ঞাত বিমানের আক্রমনে ধ্বংস হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে কর্ণেল ওসমানীকে হত্যার চেষ্টা মূল পরিকল্পনার অংশ বিবেচনা করলে ভুল হবে কি?
এত বড় ঘটনার কোন তদন্ত ভারত ও বাংলাদেশে হয়নি। ভারতীয় পরিকল্পনায় বাংলাদেশ মাত্র নয় মাসের সংগ্রামে জয়ী হয়ে একটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এত অল্প সময়ে স্বাধীনতা অর্জনের দ্বিতীয় কোন উদাহরন নাই।
বাংলাদেশ সৃষ্টিতেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও ‘র’ এর দূরদর্শিতার আলোকে ভারতের বিনিয়োগ আলোচনা প্রাসঙ্গিক।
বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতের ব্যয় বিনিয়োগের হিসাব ভারত কখনও প্রকাশ করেনি, তাই হিসেবটা কতক অনুমান নির্ভর। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী শরনার্থীদের প্রায় ১০ মাস আহার- বাসস্থানের ব্যবস্থাপনায় প্রায় ছয়শত থেকে নয়শত কোটি রুপী এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন ও অস্ত্র সরবরাহ ও প্রত্যেক সৈনিককে মাসে দেড়শত রূপি ভাতা প্রদানে সমপরিমান অর্থ দেয়া হয়েছে।
নগদ টাকায় ভাতা দেবার ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতপ্রীতি ও নির্ভরশীলতা ক্রমেই বেড়েছে। ডিসেম্বর মাসে ভারত পকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহনে শতাধিক ভারতীয় সৈনিকের প্রানহানি হয়েছে। শরনার্থী ক্যাম্পে উদ্বেকজনক সংখ্যক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে দূর্যোগ অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার অপ্রতুলতার কারনে। প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ পেলে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতার পরিবর্তে ভয়ানক ক্ষোভের সৃষ্টি হবার সম্ভাবনাকে রহিত করার নিমিত্তে ভারত সরকার ও ভারতীয় রেডক্রস সোসাইটি মৃত ব্যক্তিদের তথ্য অদ্যাপি বাংলাদেশ সরকারকে হস্তান্তর করেনি। ভারতের শরনার্থী ক্যাম্পে সর্বনিম্ন দশ লাখ এবং উর্দ্ধে বিশ লাখ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে যাদের অধিকাংশ শিশু, গর্ভবর্তী ও বয়োবৃদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিডিসির’র কাছে প্রায় ৭ লাখ মৃত্যুর হিসাব আছে, সকল মৃত্যুর হিসেব তারা সংগ্রহ করতে পারেনি।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতের বিনিয়োগে, ভারত চার ভাগে লাভবান হয়েছে -
(১) পূর্ব সীমান্তে পাকিন্তানকে মোকাবিলা করতে হয়না বিধায় ঐ অঞ্চলের জন্য কয়েক হাজার কোটি রূপী সামরিক ব্যয় কমেছে।
(২) বাংলাদেশের সাথে ভারতের ব্যবস্যা কয়েক বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
(৩) বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় শ্রম ম্যানেজারগন প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ভারতে প্রেরন করেন।
(৪) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাধীনতা কর্মীদের (বিচ্ছিন্নতাবাদীদের) সংগ্রাম আন্দোলনে ভারত অনুগত বাংলাদেশ সরকারের (?) সাহায্য সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবার ফলে ভারতীয় জনগনের ক্ষতি হলেও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বেড়েছে এবং আপাতত: ভারত বিভক্তি আন্দোলন স্থিমিত হয়ে পড়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা বিভক্তি সৃষ্টিকারী গুজরাটের কসাই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রন করে বাংলাদেশ ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক ভারতীয় কুটচালে জড়িয়ে পড়ছে এবং প্রায় ত্রিশকোটি সংখ্যালঘু ভারতীয়দের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছে, সংগে অসম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধুকেও অপমান করা হচ্ছে।
মেজর খালেদ মোশাররফের সাবধান বানী- অক্টোবর মাসে সম্মুখ যুদ্ধে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই নম্বর সেক্টর এবং কে ‘ফোর্সের’ অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ ভারতীয় সেন্ট্রাল কমান্ডের লখনৌ সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় লেখকের সাথে সাক্ষাতে বলেন, ‘ভবিষ্যত বাংলাদেশের সমূহ বিপদ, ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের থেকে ভারত উন্নত মানের চৈনিক অস্ত্র উঠিয়ে নিয়ে নিম্নমানের ভারতীয় অস্ত্র দিচ্ছে যাতে ভারতের প্রতি আমাদের নির্ভরশীলতা নিশ্চিত হয়। সত্বর হয়তো আমরা বাংলাদেশের পতাকা অর্জন করবো কিন্তু ক্রমে সিকিমে পরিনত হবো ।‘ এটা প্রতিহত করার নিমিত্তে তাকে চিকিৎসার উপলক্ষ্যে অন্যদেশে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে তিনি লেখককে অনুরোধ করেন এবং যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের জন্যও কর্ণেল ওসমানীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন। খালেদ মোশাররফের চিন্তার স্বচ্ছতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি এবং পরবর্তী সমস্যাসমূহ দেশত্যাগের জন্য তাজউদ্দিন, ওসমানীর অনুরোধ উপেক্ষা করে শেখ মুজিব বাড়ীতে অবস্থান করলে, তিনি পাকিস্তানীদের হাতে বন্দী হন এবং নয় মাস পাকিস্তানের জেলে আটক থাকেন, মুক্তিপান ২২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সনে। মিয়ানওয়ালী জেল থেকে মুক্তিপাবার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দুবার দেখা করে অনুরোধ করেন পাকিস্তানের সাথে একটা সম্পর্ক (? কনফেডারেশন) অব্যাহত রাখতে। পরে জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর ৮ জানুয়ারী (১৯৭২) লন্ডন যাত্রায় প্রাক্কালে উপস্থিত থেকে শেখ মুজিবকে প্রতিশ্রুতির কথা স্মরন করিয়ে দেন। এই তথ্য ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানো
ফালাসির ‘ইন্টারভিউ’ উইথ হিষ্ট্রি, গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিক, এন্থনী মাসক্যারেনাসের ‘‘এ লিগেসী অব ব্লাড’’ বইতে উল্লেখ আছে।
১০ জানুয়ারী দেশে ফেরার পর শেখ মুজিব সুতা ছিড়ে ফেলার কথা বলেন। তিনি দুপুরে দিল্লী থেকে বৃটিশ রয়েল এয়ার ফোর্সের প্লেনে ঢাকা পৌছেন। তেজগাও বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সকল রাজপথ ছিল লোকে লোকারণ্য। তাতে বঙ্গবন্ধু অভিভুত হয়ে পড়েন। রেসকোর্স অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ১৬ ডিসেম্বর (১৯৭১) পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আত্নসমর্পন অনুষ্ঠানের কথা জানালে, তিনি মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করেন ‘তোরা কে কে ছিলি ভারতীয়দের সাথে’? পুরো আলাপের তথ্য সরকারী ভাষ্য কখনও প্রকাশিত হয়নি।
তার অনুপস্থিতিতে তার নামে স্লোগান দিয়ে প্রবাসী সরকারের অপরিসীম শ্রম, বুদ্ধিমত্তা ও রনকৌশলে নয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে বঙ্গবন্ধু কিভাবে দেখেছেন তা বুঝার জন্য কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ প্রয়োজন।
১৯৭১ সনের ১২ জানুয়ারী প্রথম মন্ত্রীসভা পূর্নগঠিত হলে শেখমুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী এবং তাজউদ্দিন আহমদ অর্থ ও প্লানিং মন্ত্রী নির্বাচিত হন। মন্ত্রী সভার প্রথম মিটিংয়ে শেখ মুজিব প্রশ্ন করেন, এনএসআই প্রধান এবিএস সাফদার, পুলিশ বাহিনীর আব্দুর রহিম এরা কোথায়, এদের তো দেখছি না। তাজউদ্দিন জানান যে, আগরতলা মামলা ও মুক্তিযুদ্ধে জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সংগে সংগে বলেন, তাদের কাজে যোগ দিতে। পরের দিন, সাফদার, রহিম ও ই এ চৌধুরী কাজে যোগ দেন।
শেখ মুজিব প্রবাসী সরকারের মন্ত্রীদের কাছ থেকে কখনও মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী শুনেননি, আলোচনা করেননি। কোন মানসিক বাঁধার কারনে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনতে পারেননি বা চাননি, তার বিশ্লেষন প্রয়োজন। তিনটি ক্যাবিনেট মিটিংয়ের অন্যান্য এজেন্ডার সাথে একটি এজেন্ডায় নয় মাসের জীবনমরন মুক্তিযুদ্ধের আলোচনা ছিল। তৃতীয়টিতে একটি মাত্র এজেন্ডা ছিল মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনা, সেটাও হয়নি।
তার সাড়ে তিন বছর প্রধানমন্ত্রীত্ব কালে, তিনি একবারও মুক্তিযুদ্ধের শপথ অনুষ্ঠানস্থল ‘মুজিব নগর’ পরিদর্শন করেননি।
১৯৭৪ সনের ২৬ অক্টোবর তিনি তাজউদ্দিন আহমদকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। তিনি প্রবাসী সরকার ও ভারত সরকারের অনুরোধ উপেক্ষা করে লাহোরে ইসলামিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে ছিলেন এবং তার পূর্বে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোকে বাংলাদেশে আসার জন্য আমন্ত্রন করেছিলেন।স্মরণযোগ্য যে, ১৯৭২ সনের ৭ মার্চ জাতীয় রক্ষীবাহিনী আদেশ এবং ১৭ মার্চে ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরকালে ২৫ বৎসর মেয়াদী ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিপরীত ঘটনা ‘বাকশাল’ সৃষ্টি যেখানে একনায়কত্বের ছায়া লুকায়িত। অপর পরিবর্তিত রূপ হচ্ছে সম্প্রতি প্রবর্তিত মৌলিক অধিকার বিরোধী ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট।
তাঁর জন্ম শতবার্ষিকীতে বিনীত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি।
তথ্যসূত্র: ১.গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, দ্বিতীয়
খন্ড, ঢাকা।
২.একে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এসআর মির্জা, “মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর: কথোপকথন” প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা।
৩.মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ষ্টেট ডির্পাটমেন্টে প্রেরিত টেলিগ্রাম-ন্যাশনাল আর্কাইভস, সেন্ট্রাল ফাইল ১৯৭০-৭৩, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডকুমেন্ট ১২১,
ভলিউম ই-৭।
৪. Brecher.M, Nehru: A Political Biography, Oxford University Press, London,1959.
৫. মাসুদুল হক,“বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র এবং সিআইএ", প্রচিন্তা প্রকাশনী, ঢাকা- ২০১০
৬. মেজর জেনারেল এসএস উবান ‘ফ্যন্টমস অব চিটাগং, ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ এলায়েড পাবলিশাস, নিউ দিল্লী-1985
৭. ওরিয়ানা ফ্যালাসি, ইন্টাভিউ উইথ হিষ্ট্রি হুটন মিফলিন কোম্পানী, বোষ্টন-১৯৭৬
৮. অন্থনী মাসকারেনাস, ‘বাংলাদেশ : এ লিগাসি অব ব্লাড,’ অনুবাদক ড. মাজহারুল ইসলাম, বাংলা একাডেমি, ঢাকা -1973
সান নিউজ/টিএস/এসএম