মতামত

এপ্রিল ‘পিক টাইম’, তবুও সচেতনতার অভাব

মঞ্জুরুল আলম পান্না:

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার এখনো আশঙ্কাজনকভাবে ঘটেনি বলে দাবি সরকারের। তবে এটির সংক্রমন রোধে অনেক ঘাটতি থাকা সত্বেও নেয়া হয়েছে নানা ধরণের পদক্ষেপ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ভাইরাস পরীক্ষাসেবা। দেরিতে হলেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে অনেকগুলো কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। আর ভাইরাসটির সংক্রমণ খারাপ অবস্থার দিকে গেলে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। কারাগার থেকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর অপরাধীদের সাময়িক মুক্তি দেয়াসহ করোনা মোকাবেলায় আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ওপরই জোর দিচ্ছে সরকার। কিন্তু নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার বিষয়ে এক শ্রেণীর সাধারন মানুষের অসচেতনতায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহল।

চলতি এপ্রিল মাসকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ‘পিক টাইম’ বা সংক্রমনের সর্বোচ্চ ব্যাপ্তির সময়, এমন আশঙ্কা থেকে বাড়ানো হয়েছে নানা ধরণের প্রস্তুতি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দমিয়ে রাখতে মানুষকে ঘরে রাখা বা সামাজিক দূরত্ব রক্ষার কার্যক্রমকে প্রধান কৌশল হিসাবে নিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন শব্দ ব্যবহার না করলেও কার্যত সেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে সরকারি ছুটি।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড: আহমদ কায়কাউস সান নিউজকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা এই মুহুর্তে সরকারের প্রধান কৌশল। বিষয়টি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখতে গত মঙ্গলবার দেশের মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন বা জেলা প্রশাসকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানুষের ঘরে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আরও শক্ত অবস্থানে গেছে সেনাবাহিনী।

কিন্তু এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি সচেতনতা। করোনাভাইরাসের সংক্রমনের ভয় উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে কোন ধরণের নিয়ন্ত্রন ছাড়াই ভীড় দেখা যাচ্ছে মানুষের। স্বল্প মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে ক্রেতাদের যেমন দেখা যাচ্ছে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়াত, একইভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে দেখা যাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে সরকারী সাহায্য নেয়ার সময়। সময় কাটাতে অনেক এলাকার বাসাবাড়ির ছাদে দেখা যাচ্ছে পাড়া প্রতিবেশিদের ভীড় করে গল্পে মশগুল থাকতে। গ্রামে গঞ্জে বা মফস্বলে এখনও মানুষের ভীড় দেখা যাচ্ছে চায়ের দোকানে বা অন্য কোন আড্ডায়।

সব ধরণের সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকার কথা বলা হলেও কোথাও কোথাও তা চলছে চরম অসচেতনতায়। জুমআর দিনে কোন কোন মসজিদে জামায়াতে জমায়েত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। গত ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা-৪ আসনের সাংসদ শামসুর রহমান শরীফের জানাজায় দেখা গেছে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি।

ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর পিকটাইমটা আমরা এখনো দেখিনি। এর একাধিক কারণও থাকতে পারে। হতে পারে আমাদের পরীক্ষা কম হচ্ছে, সেজন্য হয়তো রিপোটিংও কম হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে আক্রান্ত রোগি বেশি দেখা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে অনেকেরই অভিযোগ যে, সাধারণ রোগীদের ভর্তি নিচ্ছে না হাসপাতালগুলো। কারণ যেটিই হোক, বাস্তবতা হল আমরা এখনো কোভিড-১৯ সংক্রমণের পিকটাইমটা দেখতে পাইনি। সেই পিক টাইম সামনে। এজন্য আগামী দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য যথেষ্ঠ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বাংলাদেশের জন্য এপ্রিল মাসকে ‘পিক টাইম’ বা সর্বোচ্চ ব্যাপ্তির সময় বলে মনে করছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা। প্রথমবারের মতো করোনাতে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত, আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদেশফেরতদের বাংলাদেশে প্রবেশের সময়ের ওপর নির্ভর করে এ আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ভাইরাসটির বিস্তার রোধে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ সতর্কতা আরোপ করে আসছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনাভাইরাসের বংশবিস্তারে সময় লাগে ৫ দশমিক ৫ দিন। সংস্থাটির হিসেবে কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার ১২ দিনের মধ্যে তার শরীরে এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তবে কোন লক্ষণ দেখা যাক বা না যাক আক্রান্ত মানুষ করনোভাইরাসের বিস্তার ঘটাতে সক্ষম। অর্থাৎ আক্রান্ত হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ১৪ দিন পর্যন্ত ওই ব্যক্তি সংক্রমণের বিস্তার ঘটাতে পারেন। বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন গত ৮ মার্চ। ১৮ মার্চ থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। তাই এই সময়ের পর আক্রান্তদের লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার কথা মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। আর তখন তাদের মাধ্যমে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াতে পারে অস্বাভাবিকভাবে।

তাই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই চক্রকে যদি ঠেকানো সম্ভব না হয়, তবে এপ্রিলের মধ্যে দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে পৃথিবী ওলোট পালোট করে দেয়া শক্তিশালী এই ভাইরাস।

মঞ্জুরুল আলম পান্না, সাংবাদিক

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সাপের কামড়ে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ে পৃথক স্থানে বিষাক্ত সাপের...

মুন্সীগঞ্জে দাওয়াতে ইসলামী’র জুলুস অনুষ্ঠিত

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল...

ক্ষমা চাইলেন দেব 

বিনোদন ডেস্ক: ভারতে আর জি কর কাণ্ডে এক মেয়ে চিকিৎসককে ধর্ষণে...

মাথায় ইট পড়ে আহত বুয়েট শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর পলাশীর মোড়ে রিকশায় যাওয়ার সময়...

তিস্তা সমস্যার সমাধান হতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সাথে তিস্তা...

কবিরহাটে ইমাম-মুয়াজ্জিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর কবিরহাটে জামায়াতে ইসলামীর উদ্...

সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট বাজারে সাঈদু...

বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট ল...

মুন্সীগঞ্জে দাওয়াতে ইসলামী’র জুলুস অনুষ্ঠিত

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল...

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা