নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিসেম্বরের শীতে বাংলাদেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ (দ্বিতীয় ঢেউ) আসবে বলে জনস্বাস্থ্যবিদদের একটি অংশ দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে, দ্বিতীয়বার সংক্রমণ শুরুর কথা।
তবে এ নিয়ে অনেক জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং শীতের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে কেউ কেউ দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে এমন যুক্তিও দেখাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ এসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেছেন, বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়ে গেছে, এটা নিয়ে অনিশ্চয়তার আর কোনও অবকাশ নেই। তথ্য-উপাত্তের দিকে তাকালেই এটা পরিষ্কার বোঝা যায়।
তিনি বলেন, প্রতিদিন কজন নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে এর উপর ভিত্তি করে যে গ্রাফ অঙ্কন করা হয়, তা দিয়ে ওয়েভের ধরনটি বোঝা যায়। ওয়েভ প্রকাশের গ্রাফে সংক্রমণের সংখ্যা অবশ্যই লিনিয়ার বা প্রকৃত সংখ্যা হতে হবে, রূপান্তরিত সংখ্যা দিয়ে ওয়েভ বোঝা যাবে না। সুতরাং কোনও গ্রাফে সংক্রমণের ওয়েভ প্যাটার্ন বুঝতে হলে প্রথমে লক্ষ্য করতে হবে গ্রাফটি কি লিনিয়ার স্কেলে নাকি লগারিদমিক স্কেলে আছে।
ড. মেহেদী আকরাম বলেন, যুক্তরাজ্যের করোনা মহামারীর ওয়েভের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রথম এবং দ্বিতীয় ওয়েভ ভালোভাবেই দৃশ্যমান। প্রথম ওয়েভটি শুরু হয় মার্চের মাঝামাঝিতে এবং শেষ হয় জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে। এরপর দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয় আগস্টের শেষে যা পিকে পৌঁছে মধ্য নভেম্বরে। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় ওয়েভের অবনতির ঢাল। ২ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের আদেশে লকডাউন করার কারণে এমনটি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, সেখানে করোনার তিনটি ওয়েভ দৃশ্যমান। প্রথম ওয়েভটি বিস্তৃত মধ্য মার্চ থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ওয়েভের শুরু হয় ১৮ জুনে এবং শেষ হয় ৯ সেপ্টেম্বর। তৃতীয় ওয়েভটি শুরু হয় অক্টোবরের শুরুতে, যা এখন চূড়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই তৃতীয় ওয়েভেই এযাবৎকালের সর্বোচ্চ দৈনিক মৃত্যু ৩ হাজার ১০০ জন রেকর্ড করা হয় গত ৪ ডিসেম্বর।
বাংলাদেশে করোনার গ্রাফের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে প্রথম ওয়েভই শেষ হয়নি, তাহলে দ্বিতীয় ওয়েভ এলো কোথা থেকে? বাংলাদেশে প্রথম ওয়েভের সূচনা ১০ এপ্রিল। এরপর থেকে প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে তাকে সমানুপাতিক হারে, যা পিক বা চূড়ায় পৌঁছে ২ জুলাই এবং তার পর থেকে সংক্রমণ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। সেপ্টেম্বরের শেষে গিয়ে সংক্রমণের এই ক্রমাবনতি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছে। আর এভাবেই প্রথম ওয়েভটি সম্পন্ন হয়।
এরপর অক্টোবরের শেষ থেকে সংক্রমণের সংখ্যা আবার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং সূচনা করে দ্বিতীয় ওয়েভটির। বাংলাদেশে করোনা মহামারীটি এখন দ্বিতীয় ওয়েভের উন্নতির ঢালে অবস্থান করছে।
এ ব্যাপারে ড. মেহেদী আকরাম বলেন, ঠিকমতো টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো গেলে হয়ত দ্বিতীয় ওয়েভটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। অন্য দিকে ভারতে মহামারীটি এখনও প্রথম ওয়েভেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অতএব নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বাংলাদেশে এখন করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ওয়েভের (ঢেউয়ের) সূচনালগ্নে রয়েছে।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৩৮ জন।
সান নিউজ/এসএ/এস