মতামত

মাফিয়া রাজ্যে পাপিয়া অর্থনীতি   

মোস্তফা কামাল:

ব্যাংক নিয়া চরম ভীতির রাজ্যে ডুবসাঁতার খাইতেছে মানুষ। ব্যাংক বন্ধ হইয়া গেলে গ্রাহকের যতো সঞ্চয়ই থাক তাহাকে দেওয়া হইবে মাত্র এক লাখ টাকা-এমন খবরে আতঙ্কিত আমানতকারীরা। বাকি টাকা দেওয়া হইবে পরে। নানান হিসাব-নিকাশ কষিয়া। পরে মানে কতোদিন পরে? আদৌ পুরা টাকা? টাকার উৎস জানাজানিসহ ভোগান্তি কোন পর্যন্ত গিয়া ঠেকিবে? এইসব প্রশ্নের ক্লিয়ারকাট জবাব নাই। আর ব্যাংক বন্ধের প্রশ্নটাই বা আসিল কেন?

কোনো হোগলা বা আমপাবলিক নয়, স্বয়ং রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কণ্ঠে এই উদ্বেগ প্রকাশ পাইয়াছে সবিশেষ গুরুত্বের সাথে। ছাচাছিলা ভাষায় বলিয়াছেন, এখন অনেকেই ব্যাংক করেন জনগণের টাকা লুটের জন্য। পল্টন বা মুন্সিগঞ্জের মেঠো বক্তৃতায় নহে। তিনি কথাটা বলিয়াছেন উচ্চ আদালতে একটি রিটের শুনানিতে। যেখানে ছিলেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতিও। অ্যাটর্নি জেনারেলের উস্মার রেশ পড়িয়াছে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বিত বেঞ্চেও।

তাহারা বলিয়াছেন, দেশের ব্যাংক খালি হইয়া গিয়াছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হইয়া গিয়াছে। এখন বেসরকারি ব্যাংকের মতো সরকারি ব্যাংক হইতেও টাকা চলিয়া গেলে এই খাতে ধস নামিবে। ব্যাংকগুলোর এই দশায় আদালত চুপ করিয়া থাকিতে পারে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল মোটেই ইনজেনারেল কেহ নন। বিচারপতিগণ আরো বেশি কিছু। তাঁহাদের এমন প্রতিক্রিয়ার একটা ভ্যালু না থাকিয়া পারে না। ব্যাংকিং খাতের লুটপাট,অর্থপাচার নিয়া আদালতের মনোযোগ গণমানুষের জন্য অবশ্যই আশা জাগানিয়া। অ্যাকশন কিছু একটা হইবার আশা করাই যায়। খোদ আদালত হইতে এমন ধমক ও পর্যবেক্ষণ ব্যাংক ফোকলার তথ্যকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। সেইসঙ্গে উদ্বেগেও মাত্রা যোগ হইয়াছে। কিন্তু, অ্যাকশনের নমুনা নেই। উপরন্তু, দেশে হোমরা -চোমরাদের ঘরেই এখন গোপন ব্যাংক চালু হইয়াছে। তা-ও পুরান ঢাকার এনু-রুপনদের মতো পাড়া-মহল্লা লেভেলের থার্ড-ফোর্থক্লাসের আতিপাতিদের বাসায়ও। ধনে-জনে ইহারা সম্রাট, খালেদ, পাপিয়া বা জিকে শামিমের চেয়ে কমজুরি। তুলনামূলক বড়দের টাকার পাহাড় কোন পর্যায়ে ভাবা যায়?

এই মাফিয়াদের এইসব গৃহব্যাংকের বেশুমার টাকার জন্য দেশে সিন্দুক বিক্রি বাড়িয়াছে। কোনো কোনো ব্যাংকের শাখায়ও এতো টাকা থাকে না। দলে-দলে, সমাজের ডালে-ডালে, পাতায়-পাতায় এখন তাহাদের বিচরণ। বাংলা টাকার সঙ্গে বিদেশি টাকা, সোনাদানাও মিলিতেছে ইহাদের টাকশালে। গেন্ডারিয়ার আওয়ামী লিগ নেতা এনু ও রুপনের গোপন বাড়িতে পাওয়া টাকা গুণিতে দুই মেশিনে লাগিয়াছে টানা তিন ঘণ্টা। তফসিলি বা সরকারের তালিকাভুক্তির বাইরে এইসব পারসোনাল ব্যাংক এখন গর্বেরও ব্যাপার। তাহাদের এত টাকার উৎসও ওপেন সিক্রেট।

সেইসঙ্গে প্রাসঙ্গিক কয়েকটা প্রশ্ন নিস্পত্তিহীনই থাকিয়া যাইতেছে। ব্যাংক কিভাবে প্রতিষ্ঠা হয়? কাহারা ব্যাংকের অনুমোদন পান? কাহারা দেন অনুমতি? তাহা হাসিল করতি লেনদেন কেমন হয়? চুরি বা লুট করার পরও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়া উপরন্তু প্রণোদনা কেন?

ব্যাংকিং সেক্টরে অরাজকতা, লুটপাট-হরিলুট আচমকা নহে। তাহা চলিতেছে অনেকদিন হইতে। আগে মাঝেমধ্যে ব্যাংক হইতে টাকা মারার চেষ্টা বা প্রস্তুতির খবর আসিত। এখন আসে বাসী খবর। ব্যাংকের টাকা মারিয়া দেওয়ার খবর। আর চুরিটা ঠেকিয়াছে ডাকাতিতে। তা-ও আওয়াজে নয়। নীরবে কারসাজিতে। টাকা গায়েবের নানান ডিজিটাল ব্যবস্থা থাকিলে গুলি-বন্দুক নিয়া ডাকাতি করার ঝুঁকি নেয়ার আহম্মক এখন দেশে নাই। এই বিশেষ সাম্রাজ্যের সম্রাট-সম্রাজ্ঞি হয়ে ক্ষমতার ছায়াশীতল হয়ে ওঠা একদিনে হয়নি। এতো অর্থ সম্পদ হতে সময় লাগিয়াছে। ধৈর্য্য ধরিতে হইয়াছে। সবুরে মেওয়া ফলিয়া চলিতেছে।

ক্ষমতা, দুর্নীতি, চাতুরির মেলবন্ধনে এই পদ্ধতি আরো ডালপালা ছড়াইয়াছে। অথচ সাধারণ গ্রাহকরা ব্যাংকে গেলে বসাইয়া রাখা হয়। এমাউন্ট বড় হইলে নানান প্রশ্নবান। দুইয়েক দিন অপেক্ষার পরামর্শ। গোটা বিষয়টা বিব্রতকর-বিরক্তিকর। টাকা পাচারকারী বা বাসাবাড়িতে ব্যাংক পয়দাকারীদের সাথে কি কোনো ব্যাংক এইসব করে? ব্যাংক করার ব্যাপারে সরকারি ঘরানার ধনাঢ্যরা এতো আগ্রহী কেন? কী তাহাদের উদ্দেশ্য? কী বিধেয়? কে না বোঝে?

অনেকেরই জানা, ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পাইতে ব্যাংক পরিচালক, ব্যাংকার সিন্ডিকেটকে কিভাবে খুশি করিতে হয়? কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হইলে এক লাখ টাকার বেশি না পাওয়ার ( সুরক্ষা) আইন অন্যান্য দেশেও রহিয়াছে। কিন্তু, অন্যান্য দেশে এইভাবে ব্যাংকের টাকা লুট-হরিলুট হয়? সেইখানে কি পাপিয়া-মাফিয়ারা এতো শক্তিমান? রঙ্গশালা খুলে-জুয়ার আসর বসিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক তারা। টাকা পাচার বা রফতানিতেও সাফল্য। ইহারও আগে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক এবং দ্য ফারমার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। অথচ এই লুটপাট ঠেকাতে বা সেই টাকা ফিরিয়ে আনতে এখনো শক্ত কোন আইন হয় নাই। হলমার্ক, এনন টেকস, বিসমিল্লাহ, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকের কাহিনীও জানা। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হইতে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৮০৮ কোটি টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করার ঘটনাও মানুষের জানা। কিন্তু, বিহিত বা টাকা উদ্ধারের খবর জানা নাই।

তাহারা বিভিন্ন নহে। অভিন্ন। একটা রোগের উপসর্গ মাত্র। ভাগবাটোয়ারা গোলমাল বা কোনো ঘটনাচক্রে কখনো ধরা পড়িলেও হাসপাতালে এই শ্রেণির জন্য সাজ-সজ্জা তৈরিই থাকে। হাল আলোচনা-সমালোচনার কয়দিন বাদেই নতুন কোন ঘটনার আগ পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করিতে হয় মাত্র।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

লক্ষ্মীপুরে চাষ হচ্ছে সৌদির আজওয়া খেজুর

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: মরুর দেশ সৌদি আরবের বিখ্যাত আজওয়া খেজু...

ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও সিটি ক...

আ’লীগকে নির্বাচনে আনতে চাই বলিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমরা কাউকে নির্বাচনে আনতে চাই, এমনটা বলিন...

কিয়েভে দূতাবাস বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিমান হামলার ভয়...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

আইপিএলের আগেই নিষেধাজ্ঞায় হার্দিক

স্পোর্টস ডেস্ক: আইপিএলের গত আসর শুরুর আগে রোহিত শর্মাকে সরিয়...

খালেদা-ইউনূসের কুশল বিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা সেনানিব...

পথে সড়কে প্রাণ গেল প্রধান শিক্ষকের

জেলা প্রতিনিধি: ফরিদপুর জেলার সালথায় স্কুলে যাওয়ার পথে দুই ম...

বহু বছরপর সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজি...

২০২৫ সালে স্কুল ছুটি থাকবে ৭৬ দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা