বি. খন্দকার : উন্নত জীবন ও ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে আর্থিক সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় শিক্ষিত যুবসমাজের একটা অংশ দেশের মায়া ত্যাগ করে ইউরোপ আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে পাড়ি জমাতে মত্ত। প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছুরই পরিবর্তন হচ্ছে, এর সাথে প্রতারণার কৌশলের পরিবর্তনও আরো আধুনিক হচ্ছে। আমি বিগত ৬ মাসের মধ্যে কমপক্ষে দশ জনকে পেয়েছি যারা অস্ট্রেলিয়া, কানাডার জব অফার লেটার বা ই-ভিসা পেয়েছে শুনে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে বসে আছেন।
মূলত বিদেশের ভিসার জন্য আগে প্রার্থীর নিজেকে অ্যাম্বাসিতে গিয়ে তার নিজের এপ্লিকেশন নিজের হাতে জমা দিয়ে ইন্টারভিউ দিতে হতো, এর জন্য ভ্যালিড ডকুমেন্ট বা শিক্ষিত ও স্মার্ট লোকজন ছাড়া অ্যাম্বাসির আশেপাশেও যাওয়ারও সাহস পেতনা এবং এজেন্সী থেকেও উল্টা পাল্টা লোকজনদেরকে এভয়েড করতো। কিন্তু ভিসার এপ্লিকেশনের নিয়ম অনলাইন ভিত্তিক হওয়াতে খুব সহজেই ভুয়া জব অফার লেটার বা ভিসা এপ্রুভাল লেটার দেখিয়ে সাধারণ মানুষের হাত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু কুচক্রি মহল।
মনে রাখা দরকার, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড বা আমেরিকাতে কোনো জব ভিসা বা লেবার ভিসা নেই। অস্ট্রেলিয়াতে যেতে হলে যেই পরিমাণ যোগ্যতা লাগে সেগুলো থাকলে আপনি বাংলাদেশের যেকোনো কর্পোরেট কোম্পানিতেই মাসে দুই লক্ষ টাকার বেতনের চাকরি খুব সহজেই পাবেন।
শুরুতেই আপনার আইইএলটিএস এর স্কোর জানতে চাইবে, তারপর আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা এগুলোর সব কিছু মিলিয়ে যদি আপনার পয়েন্ট তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত হয় তাহলেই স্কিল মাইগ্রেশনের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন।
তবে মনে রাখবেন, আপনার হাজারটা গুণ থাকুক, বিভিন্ন নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রী থাকুক আপনার যদি আইইএলটিএস এর স্কোর ঠিক না থাকে তাহলে আপনার ডিগ্রী এবং ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সের দুই টাকারও মূল্য নেই। এগুলো ছাড়া কেউ যদি আপনাকে কোনো জব অফার লেটার বা ভিসা দেখিয়ে টাকা আদায় করতে চায় তাহলে সোজা আইনের আশ্রয় নিন।
আজকাল ইউটিউবে ভুলভাল তথ্য দিয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে অনুগ্রহ করে এগুলোর ফাঁদে পা দিবেন না। তাদের টার্গেট হচ্ছে দেশের বেকার যুবক ও অশিক্ষিত সমাজের লোকজন, যাদের কাজ কর্ম নেই বসে বসে তাদের ভিডিও দেখে তাদেরকে টাকা কামানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।
ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের হিসাব সম্পূর্ণ অন্যরকম। এর মাঝে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা সবচেয়ে বেশি কঠিন। এমনও আছে অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসায় আসার পর সেখানে টিকতে না পেরে কানাডায় চলে গিয়েছে।
কোনো এজেন্সী যদি কোনো অযোগ্য লোককে অস্ট্রেলিয়ার স্কিল মাইগ্রেশনের ভিসা লাগিয়ে দিতে পারে বলে গ্যারান্টি দেয় তাহলে আমি তাকে ১০ কোটি টাকার ওপেন চ্যালেঞ্জ দিলাম, আমাকে সঠিক নিয়মে ভিসা করে দেখাক।
হয়তো সে প্রাথমিক অবস্থায় ভুয়া কাগজপত্র ম্যানেজ করবে, টাকা খরচ করে কোনো কোম্পানির ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সও দেখাতে পারবে কিন্তু ধরা খাবে আইইএলটিএস এর স্কোরে যদি প্রার্থীর নিজের যোগ্যতা না থাকে। তাই এসব প্রতারণার ফাঁদে পা রাখবেন না। নিজে সাবধান হন এবং অন্যকেও সাবধান করুন।
লেখক:
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি- ইউনাইটেড গ্লোরি অব বাংলাদেশ (ইউজিবি)