সান নিউজ ডেস্ক: হাতি স্থলভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী। বাঘ, সিংহের পরই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশালদেহী এই প্রাণীটি। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে দীর্ঘকায় বিশালদেহী এই বন্য প্রাণীটিকে রক্ষা করার দায় আমাদের সবার উপর এসে পড়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব বাঘ দিবস
১০ বছর আগে মাত্র কয়েকজন বুঝেছিলেন সেই গুরুত্বের কথা। সেক্ষেত্রে যাদের নাম সামনে আসে, তারা হলেন- কানাডার ২ চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস, মাইকেল ক্লার্ক এবং থাইল্যান্ডের রিইন্ট্রোডাকশন ফাউন্ডেশন।
এদের জন্যই আজ বিশ্ব হাতি দিবস পালন করা সম্ভব হয়েছে।
২০১১ সালে বিশ্বে হাতি নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে আফ্রিকায় প্রতিনিয়ত যেভাবে হাতি শিকারি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় সংঘর্ষের কারণে বিপন্ন হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস
সে সময় সবাই এমন একটা কিছু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, যাতে হাতির ব্যাপারে পুরো বিশ্বকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা সম্ভব হয় এবং সবাই হাতি সম্পর্কে সচেতন হয়।
তখনই এগিয়ে এলেন ২ কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস, মাইকেল ক্লার্ক ও থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট রিটারট্রাকশন ফাউন্ডেশন। তারা সবাই মিলে ঠিক করে, প্রতি বছর ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস হিসেবে পালন করা হবে।
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ব হাতি দিবস উদযাপিত হয়।
আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক ‘জাহাজমারা দিবস’
এ নিয়ে একটি ডকুমেনটারি তৈরি হয়েছিল, যেখানে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র তারকা এবং স্ট্রার ট্রেক কিংবদন্তী উইলিয়াম শ্যাটনার দ্বারা রূপায়িত হয়েছিল। তিনি ফিরে আসার পর অরণ্যের কথা বর্ণনা করেছিলেন।
সেখানে বন্যদের কাছে এশিয়ান হাতিগুলোর পুনঃপ্রবর্তন সম্পর্কে ৩০ মিনিটের একটি আকর্ষণীয় চলচ্চিত্র উপস্থাপিত হয়েছিল।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই ডকুমেনটারির কি প্রয়োজন? এর পিছনে কি উদ্দেশ্য?
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা দিবস
এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে বেশ কিছু তথ্য, যা এখানে তুলে ধরা হবে।
বিশ্ব হাতি দিবস পালনের প্রেরণা ছিল যে, এই প্রাণীর দুর্দশার প্রতি বিশ্বজুড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তাদের মনোরম ও বুদ্ধিমান প্রকৃতির কারণে বৃহত্তম এই প্রাণীটিকে যেন বিশ্বজুড়ে ভালোবাসা দেওয়া হয়।
দুর্ভাগ্যক্রমে, এই দুর্দান্ত প্রাণীগুলো তাদের বেঁচে থাকার জন্য একাধিক হুমকির সম্মুখীন হয়ে চলেছে এবং সেটি আজ সারা বিশ্বেই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।
এর পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। আজ হাতির উপরে নেমে এসেছে কুঠারঘাত। এর বড় কারণ হলো হাতির দাঁতের বাণিজ্য।
আরও পড়ুন: বিশ্ব বাবা দিবস
হাতির দাঁতের দাম প্রায়শই সোনার দামের কাছাকাছি। চীনে চাহিদা এর সবচেয়ে বেশি। হাতির দাঁতকে আগের চেয়ে বড় টার্গেট করে তুলেছে দেশটি। সেখানকার অর্থনীতি দৃঢ়তার সাথে হাতির বিরুদ্ধে কাজ করে।
আফ্রিকায় চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করা লোকেরাও প্রায়শই একটি হাতির দাঁত থেকে এক মাসের বেশি মজুরি উপার্জন করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলো বিক্রি করে লাভবান হন তারা।
এছাড়া বিশ্বের যে অংশগুলো হাতির দাঁত দাবি করে, যেমন চীন- তারা ক্রমশ ধনী হয়ে উঠছে। তারা এগুলোর জন্য বেশি অর্থ দিতে পারে। এই কারণগুলোর জন্য হাতি শিকার বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ দিবস
আরো একটি কারণ হলো বাসস্থান হ্রাস পাওয়া। বাসস্থান হ্রাস পাওয়া বিশ্বের হাতির জনসংখ্যার জন্য একটি বড় বিপদ। এছাড়া খাবারের অভাবে তাদের পক্ষে বংশবৃদ্ধি করা আরো কঠিন হয়ে পড়ে।
গবেষকরা মনে করেন, বন্য অঞ্চলে হাতির ক্ষতি রুখতে বাসস্থান হওয়াই সবচেয়ে জরুরী। এক শতাব্দী আগে অরণ্যে ১২ মিলিয়নেরও বেশি সংখ্যক হাতি ছিল।
আজ এই সংখ্যাটি ৪ লাখেরও কম হতে পারে। প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার হাতি শিকারীদের দ্বারা নিহত হয়ে চলেছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব রক্তদাতা দিবস
এক তথ্যসূত্রে জানা গেছে, হাতিগুলোর ভৌগলিক পরিসীমা ২০০২-২০১১ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে।
আফ্রিকা জুড়ে বড় বড় উদ্যান প্রবর্তনের ফলে তাদের আবাসস্থল ধ্বংস স্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। সেই সাথে অবৈধ শিকার হওয়া একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব কারণেই সিমস ও ক্লার্কদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব হাতি দিবসের তাৎপর্য আজ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সাথে মানুষ এবং হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব হ্রাস করার উপায়গুলো খুঁজতে সবাইকে একত্র হওয়ার জন্য একটি সুযোগ করে দিয়েছে।
এসব সমস্যার সমাধানের পথ সম্ভবত কৌশলগুলোর সংমিশ্রণের মধ্যেই রয়েছে।
সান নিউজ/এনজে