সান নিউজ ডেস্ক: সিকি শতাব্দি পরও ব্রিটিশ রাজপরিবারের সাবেক বধূ প্রিন্সেস ডায়নার গল্প এখনও বহু মানুষের হৃদয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে রেখেছে। ২৫ বছর আগে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি।
আরও পড়ুন: সুখ-কষ্ট সব আল্লাহর হাতে!
১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্রেমিক দোদি আল-ফায়েদের লিমুজিনে করে প্যারিস যাচ্ছিলেন ডায়ানা। মোটরবাইকে পাপারাজ্জি ফটোগ্রাফাররা তাড়া শুরু করলে ডায়ানাকে বহনকারী লিমুজিনটি দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় প্যারিসের পন্ট দে ল'আলমা টানেলে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান দোদি ও ডায়ানা।
ডায়ানার মৃত্যু ব্রিটিশ রাজপরিবারকে সঙ্কটে ফেরে দিয়েছিল। ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিয়ের পর তাকে রাজপরিবারের যে শত্রুতা, স্বামীর ব্যাভিচার এবং রাজপরিবারের যে নীরব ভূমিকা তা আবার প্রকাশ্যে চলে আসে।
তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার প্রিন্সেস ডায়ানাকে ‘জনগণের রাজকুমারী’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে সুপরিচিত এই নারীর মৃত্যুতে সেদিন শোক পালন করেছিল লাখ লাখ মানুষ। মৃত্যুর ২৫ বছর পরও ডায়ানার আকর্ষণ মানুষের কাছে খুব একটা কমেনি।
চার্লস এবং ডায়ানার বিবাহের অশান্ত পরিণতি নিয়ে একটি ‘স্পেন্সার’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছিল। অস্কার-মনোনীত পরিচালক এড পারকিন্স ‘দ্য প্রিন্সেস’ নামে একটি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছিলেন। তবে নেটিফ্লিক্সে সম্প্রতি ‘দ্য ক্রাউন’ নামে যে সিরিজ প্রচারিত হচ্ছে তা ডায়ানাকে কেন্দ্র করেই।
তাকে নিয়ে অসংখ্য বই ও সংবাদপত্রে অগণিত নিবন্ধ প্রকাশ এবং অসংখ্য টিভি প্রোগ্রাম নির্মাণ ও প্রচার হয়েছে। ১৯৯৫ সালে তাকে নিয়ে বিবিসির একটি বিতর্কিত সাক্ষাৎকারও চলতি বছর আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল। এছাড়া ‘ডায়ানা, দ্য মিউজিক্যাল’ নামের একটি ব্রডওয়ে একটি ব্রডওয়ে শো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
১৯৯২ সালে প্রথম ডায়নার জীবনী লিখেছিলেন অ্যান্ড্রু মর্টন। এই বইটিতেই প্রথম ডায়ানার বিবাহিত জীবনে দূরত্বের বিষয়টি প্রকাশ পায়।
আরও পড়ুন: সালমান নারী নির্যাতক!
মর্টন বলেন, ‘ডায়ানার এখনও প্রভাব রয়েছে, এখনও তাকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হচ্ছে, তার সম্পর্কে গল্প লেখা হয়েছে, মানুষ এখনও এই নারীর প্রতি আগ্রহী।’
১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ডায়ানাকে বলা হত পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান মহিলা। ফ্যাশন, সৌন্দর্য, এইডস রোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তার অবদান, এবং ভূমি মাইনের বিরুদ্ধে তার আন্দোলন তাকে বিখ্যাত করেছে। তার জীবদ্দশায় ডায়ানাকে বলা হত বিশ্বের সর্বাধিক আলোকচিত্রিত নারী।
১৯৮১ খ্রীস্টাব্দে বিবাহের পর থেকে ১৯৯৬ খ্রীস্টাব্দে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত তাকে হার রয়াল হাইনেস দি প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স বলে সম্বোধন করা হত। এর পরে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আদেশক্রমে তাকে শুধু ডায়ানা, প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স বলে সম্বোধনের অনুমতি দেয়া হয়। তার পুত্র রাজপুত্র উইলিয়াম ও হ্যারি, ব্রিটিশ মসনদের উত্তরাধিকারীদের তালিকায় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ডায়ানার পরিচিতি ব্যাপক। তিনি দানশীলতার জন্য খ্যাত ছিলেন। কিন্তু তার এই দাতব্য কার্যক্রম ঢাকা পড়ে যায় বিভিন্ন কেলেঙ্কারীর গুজবে, যার মধ্যে ছিল তার বিয়ে সংক্রান্ত কাহিনী। চার্লসের সাথে ডায়ানার বিয়ে সুখে-শান্তিতে কাটেনি। নব্বুইয়ের দশকে ডায়ানার পরকীয়া প্রেমের কাহিনী সারা বিশ্বের পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। চার্লসের বিশ্বাসঘাতকতাসহ নানা কারণে অবশেষে ১৯৯৬-এ তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
সান নিউজ/এনকে