সান নিউজ ডেস্ক : রমজানের রোজার উপকারিতা অপরিসীম। রোজা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন উত্তম, তেমন শারীরিক সুস্থতার জন্য কার্যকরী একটি ব্যবস্থাপনা। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত। উন্নত বিশ্বে ‘ফাস্টিং’কে থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রায় ৮০টি রিসার্চের আলোকে ‘ফাস্টিং’ বা রোজার উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপির রাজনীতি তো মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের বেলায় কম খাদ্য গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন- উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ ও স্থূলতা প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতি ঘটায়। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রোজা রাখার আরও উপকারিতা সম্পর্কে-
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
যেসব মানুষ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে ওষুধ গ্রহণ করছেন, খাদ্যতালিকা মেনে চলছেন এবং ওজন কমাতে চাচ্ছেন্ল তাদের জন্য রোজা খুবই উপকারী। বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাইপো গস্নাইসেমিয়া হয়ে না যায়। যারা দুই বেলা ইনসুলিন নিচ্ছেন তাদের জন্য তো কথাই নেই বরং যারা দু'বেলার অধিক ইনসুলিন নেয়, তাদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ডোজ অ্যাডজাস্ট করে রোজা রাখতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্য
হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্য রোজা উপকারী। রোজার ফলে রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। তাছাড়া রোজা রাখার কারণে স্ট্রেস হরমোন করটিসেলের নিঃসরণ কমে। এতে বিপাক ক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। রোজার ফলে মস্তিষ্কের সেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ে বিধায় মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর হয়, কর্মোদ্দীপনাও বাড়ে, যা উচ্চ রক্তচাপের জন্য মঙ্গলজনক। অধিকাংশ হাঁপানি রোগীর ক্ষেত্রেই রোজা উপকারী।
অ্যালার্জি, সর্দি-কাশির রোগীদের জন্য
অ্যালার্জি, সর্দি-কাশির রোগীদের রোগের অসিলা দিয়ে অযথা নিজ সিদ্ধান্তে রোজা না রাখার কোনো ভিত্তি নেই। এসব রোগে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টোমিন কিংবা স্টেরয়েড স্প্রে দিনে দু'বার বা একবার খেলে বা ব্যবহার করলেই চলে। তবে খানাখাদ্যের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: আমাকে খুন করা হতে পারে
পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
রোজা রাখা সময়টাতে সর্বক্ষণ চলতে থাকা পরিপাকতন্ত্রটি একটু হলেও বিশ্রাম পায়। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন পুরো দিন রোজা রেখে একসাথে অনেক খাবার খেয়ে ফেলবেন না যেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য
রোজার সময় যেহেতু দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয়, তাই কারও কারও পানি স্বল্পতা হতে পারে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য সমস্যার ব্যাপার। তারা ইফতার ও সেহরিতে প্রচুর পরিমাণ পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, শরবত, শাক-সবজি, সালাদ, ইসবগুলের ভুসি খেলে আরাম করে রোজা রাখতে সমস্যা হবে না। গরু বা খাসির গোশত, ইলিশ ও চিংড়ি মাছ এবং যেসব খাবার খেলে মল শক্ত হয়ে যায় তা না খাওয়াই ভালো।
স্থূলকায় রোগীদের জন্য
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের কারণে অনেকেই অনেক সমস্যায় ভুগছেন। তাই তো ইসলাম অতিরিক্ত আহার গ্রহণের পক্ষে নয়। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে দেহে প্রচুর চর্বি জমে যায়, ফলে শরীর অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়, যা স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করে। বাড়তি চর্বি চামড়ার নিচে, শিরা-উপশিরা এমনকি হৃৎপিন্ডে জমা হতে পারে। ফলে রক্তনালিতে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল করতে পারে না। কিন্তু রোজা রাখলে শরীরে জমে থাকা এসব চর্বি শরীরের কাজে ব্যবহৃত হয় ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এসব রোগীরা অবশ্যই ইফতার ও সেহেরিতে কম ক্যালরির হালকা খাবার খাবেন।
ধূমপানকারীদের জন্য
ধূমপান করা মানেই বিষপান করা। এ কথা আধুনিক যুগে কে না জানে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের এ আবিষ্কারের বহু আগেই ইসলাম ধূমপান নিষিদ্ধ করেছিল। ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ওপর নিকোটিনের দাগ পড়তে পড়তে এক সময় ধূমপায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
রমজানের রোজার ফলে ধূমপান থেকে বিরত থাকার কারণে ফুসফুস দীর্ঘসময় পর্যন্ত নিকোটিনের বিষক্রিয়া মুক্ত থাকে। ফলে ফুসফুস রোগমুক্ত থাকে এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসে। যারা ধূমপান করেন রমজানের রোজা তাদের জন্য অবশ্যই উপকারী। ধূমপান বর্জনেরও এটা উত্তম সময়।
আরও পড়ুন: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কর্মসংস্থান করবেন
পেপটিক আলসার
একসময় ধারণা ছিল, পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন না, তাদের ঘন ঘন খাওয়ার খেতে হবে। অনেকক্ষণ পেট খালি রাখা যাবে না। অনেকে মনে করেন, রোজা পেপটিক আলসারের ক্ষতি করে এবং এসিডের মাত্রা বাড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ধারণা ঠিক নয়। রোজায় নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার কারণে এসিডের মাত্রা কমে যায়। তাই সঠিকভাবে রোজা রাখলে এবং সঠিক খাবার দিয়ে সেহরি ও ইফতার করলে রোজা বরং আলসারের উপশম করে। এছাড়া রোজা গ্যাস্ট্রাইটিস, আইবিএস ইত্যাদি রোগেও উপকারী।
সাননিউজ/এমআরএস