আহমেদ রাজু
প্রাচীন মিশরের রাণি ক্লিওপেট্রার প্যালেসের সন্ধান পাওয়া গেছে একটি দ্বীপের গভীর পানির নিচে। ধ্বংসপ্রাপ্ত সেই প্যালেসে আছে ক্লিওপেট্রার একটি চমৎকার ভাস্কর্য। তার রাজত্ব শেষ হওয়ার কয়েক শতাব্দী পর ভূমিকম্প কিংবা সুনামিতে ধ্বংস হয় প্যালেসটি। এরপর সেটি ডুবে যায় গহীন পানিতে।
১৯৯৮ সালে ফরাসি প্রত্নতত্ববিদ ফ্রাঙ্ক গোডিও হারিয়ে যাওয়া প্রাসাদটি খুঁজে পান। গোডিও ডিস্ক আলেকজান্দ্রিয়া স্ট্র্যাবো নামে এক গ্রিক ইতিহাসবেত্তার প্রাচীন একটি লেখা আবিষ্কার করেন। স্ট্র্যাবো লিখেছিলেন- আলেকজান্দ্রিয়ার খুব কাছেই একটি দ্বীপের নাম ছিলো অ্যান্ডিহরডোস। সেই দ্বীপেই ছিলো ক্লিওপেট্রার প্রাসাদ।
রাজকীয় পোতাশ্রয়
দশ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে গোডিওর দল ১৯৯০ সালে দ্বীপটি খুঁজতে থাকেন। অনুসন্ধানকালে প্রথমে তারা ৩০ মিটার দীর্ঘ্য কার্গো জাহাজের একটি ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান। তার মধ্যে গয়না, চুলের কাঁটা, আংটি ও কাঁচের পেয়ালা ছিলো। এরপর খুঁজে পান প্রাচীন জাহাজঘাটের একটি ধ্বংসাবশেষ। আরও খুঁজে পান মিশরীয় লাল গ্রানাইট পাথরের ৭ মিটার উঁচু ও ৪ মিটার দৈর্ঘ্যের কলাম ও প্রাসাদের প্রবেশদ্বার। প্রাচীন চিত্রকলায় সজ্জিত ছিলো সেগুলো।
প্যালেসে ছিলো স্ফিংস
রাণি ক্লিওপেট্রা সপ্তম ফিলোপেটর ছিলেন গ্রিক টলেমেক রাজবংশের শেষ শাসক। একজন শক্তিশালী মিশরীয় ফারাও। তার সৌন্দর্য এখনো রুপকথার মতো। রোমান নেতা জুলিয়াস সিজার ও মার্ক অ্যান্টোনির সাথে তার প্রেম ইতিহাসে বিখ্যাত।
প্যালেসের ভাস্কর্য
খ্রিস্টপূর্ব ৬৯ সালে জন্ম ক্লিওপেট্রার। ক্লিওপেট্রা ১৮ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫১ থেকে ৩০ সাল পর্যন্ত ২১ বছর তিনি মিশর শাসন করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩০ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যা করেন। ক্লিওপেট্রা জীবনে দু্ইবার বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্বামী টলেমি ত্রয়োদশ থিওস ফিলোপেটর এবং দ্বিতীয় স্বামী টলেমি চতুর্দশ ফিলোপেটর। মার্ক অ্যান্টোনি ছিলেন তার প্রেমিক।
ক্লিওপেট্রার ছেলের ভাস্কর্য
বিবাহিত জীবনে ক্লিওপেট্রা চার সন্তানের মা হন। প্রথম ক্লিওপেট্রা সেলেনি দ্বিতীয়, সেকেন্ড সিজারিওন, তৃতীয় টলেমি ফিলাডেলফাস ও চতুর্থ আলেকজান্ডার হেলিওস।
ইতিহাসবিদদের মতে, রোমান জেনারেল মার্ক অ্যান্টোনির প্রতিদ্বন্দী ছিলেন অক্টোভিয়ান। ক্লিওপেট্রার সাথে প্রেম নিয়ে অ্যান্টোনি ও অক্টোভিয়ান খ্রিস্টপূর্ব ৩০ সালে যুদ্ধে জড়ান। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ব্যাটল অব দ্য অক্টিয়াম নামে পরিচিত।
ক্লিওপেট্রার ভাস্কর্য
এই যুদ্ধে রোমান সাম্রাজ্যের জনগণ অক্টোভিয়ানকে সমর্থন দেয়। যুদ্ধে ক্লিওপেট্রাও সৈন্য পাঠান। কিন্তু ৩০ সালে ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টোনির যৌথবাহিনি অক্টোভিয়ানের কাছে হেরে যান। যুদ্ধে হেরে ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টোনি পালিয়ে আসেন আলেকজান্দ্রিয়ায়।
সমাধিতে ক্লিওপেট্রার খোদাই করা চিত্র
অক্টোভিয়ান বিপুল সৈন্য নিয়ে খ্রিস্টপূর্ব ৩০ সালের শেষ দিকে পৌঁছান আলেকজান্দ্রিয়ায়। সে সময় অ্যান্টোনির কাছে খবর পৌঁছায় ক্লিওপেট্রা মারা গেছেন। এই খবর শুনেই অ্যান্টোনি নিজের তলোয়ার তার বুকে বিদ্ধ করেন। তখন ক্লিওপেট্রা মন্দিরে ছিলেন। সৈনিকরা রক্তাক্ত অ্যান্টোনিকে ক্লিওপেট্রার কাছে নিয়ে যান। এবং রাণির কোলেই তার মৃত্যু ঘটে।
মৃত ক্লিওপেট্রা
তখনো অ্যান্টোনির শেষকৃত্য হয় নি। অক্টোভিয়ান ক্লিওপেট্রার কাছে গোপন দূত পাঠান। ক্লিওপেট্রাকে বলা হয়, জেনারেল অক্টোভিয়ান রাণি ক্লিওপেট্রা ও তার সন্তানদের রোমে ধরে নিয়ে যাবেন। এ খবর পাওয়া মাত্রই আইরাস ও চারমিওন নামে দুই দাসীকে নিয়ে ক্লিওপেট্রা মন্দিরে আত্মগোপন করেন। এবং অক্টোভিয়ানের কাছে একটি চিরকূট পাঠান ক্লিওপেট্রা।
ক্লিওপেট্রার কোলে মার্ক অ্যান্টোনি
চিরকূটে অ্যান্টোনির সঙ্গে একই সমাধিতে সমাহিত করার অনুরোধ করেছিলেন ক্লিওপেট্রা। চিরকূট পেয়েই ক্লিওপেট্রা যে মন্দিরে লুকিয়ে আছেন, সেই মন্দিরের কক্ষে সৈন্য পাঠান অক্টোভিয়ান। কক্ষটি তখন ভেতর থেকে বন্ধ ছিলো। সৈন্যরা ভেঙে ফেলেন দরজা। ভেতরে ঢুকে সৈন্যরা দেখতে পাযন সোনার পালঙ্কে পড়ে আছে রাণি ক্লিওপেট্রার লাশ। রাণির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মার্ক অ্যান্টোনির সঙ্গেই সমাহিত করা হয় ক্লিওপেট্রার মরদেহ।
মার্ক অ্যান্টোনি ও ক্লিওপেট্রার সমাধি
রাণি ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টোনির মৃত্যুর পর রোমান সামাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয় প্রাচীন মিশর। তখন মিশরের রাজধানী ছিলো আলেকজান্দ্রিয়া। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সালে আলেকজান্দ্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। কিন্তু রোমের অধীনে চলে যাওয়ার পর স্বাধীনতা হারায় ক্লিওপেট্রার দেশ। চিরতরে হারিয়ে যায় পৃথিবীর বিস্ময় আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর।
সিজারপুত্র অক্টোভিয়ান
সান নিউজ/এনএম