ফিচার ডেস্ক: অনেক জাতি গোষ্ঠী রয়েছে সারাবিশ্বে। যা সবার জানা অজানা । ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কার তাদের, সেই সঙ্গে রয়েছে অদ্ভুত ইতিহাসও। তেমনি এক জনগোষ্ঠী হল আমাজিঘ। উত্তর আফ্রিকার মধ্যে হওয়ায় তাদের ভাষাও আরবি।
ভৌগলিক দিক থেকে উত্তর আফ্রিকা পরিষ্কারভাবেই আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। তবে আরব দেশগুলোর কাছাকাছি হওয়ায় এদিকটার মানুষের ভাষাও আরব দেশগুলোর মতোই।
সপ্তম শতকে ইসলাম প্রচারের জন্য আরবরা যখন উত্তর আফ্রিকায় অভিযান চালায়, তারপর থেকে তাদের অনেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে। কালক্রমে ব্যবসায়িক এবং প্রশাসনিক কারণেও আরব উপদ্বীপ থেকে অনেকে উত্তর আফ্রিকায় পাড়ি জমায়।
বর্তমানে উত্তর আফ্রিকার জনগণের একটা অংশ তাদেরই বংশধর। এদের রয়েছে নিজস্ব ক্যালেন্ডার। যার বয়স প্রায় তিন হাজার বছরের কাছাকাছি।
চলুন এদের সম্পর্কে আজ জানা যাক-
বহির্বিশ্বের আমাজিঘদের পরিচিতি মূলত তাদের ইংরেজি নাম বার্বার হিসেবে। শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ বার্বারোস থেকে, যার অর্থ বর্বর। গ্রিকরা মূলত তাদের নিজেদের দেশের বাইরের সবাইকেই বার্বারোস হিসেবে অভিহিত করত। পরবর্তীতে রোমান এবং আরবরাও শব্দটা ব্যবহার করে।
কিন্তু ঋণাত্মক অর্থের কারণে আমাজিঘরা নিজেরা এই নামে পরিচিত হতে পছন্দ করে না। নিজেদেরকে তারা আমাজিঘ বলেই অভিহিত করে। দাবি করা হয়, তাদের ভাষা তামাজিঘ্ত অনুযায়ী 'আমাজিঘ' শব্দটির বা এর বহুবচন 'ইমাজিঘেন' শব্দটির অর্থ ফ্রি পিপল (মুক্ত মানব) বা নোবেল পিপল বা সৎ মানুষ।
ইংরেজি ও রোমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই সময়টা অর্থাৎ জানুয়ারি মাস বছরের প্রথম মাস। তবে জানেন কি? এই জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ পৃথিবীর প্রায় ৩-৪ কোটি মানুষ তাদের নববর্ষ পালন করে? এর মধ্যে আমাজিঘরাও রয়েছে। আমাজিঘ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চলতি বছরটি হল ২,৯৭১ তম বছর!
আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরাংশের পূর্ব দিকের মিশর থেকে শুরু করে পশ্চিমের মৌরতানিয়া এবং ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ বর্গ কিমি অঞ্চল জুড়ে আদিবাসী আমাজিঘরা বসবাস করে। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণকে হাতিয়ার করে গবেষকরা গবেষণা করে জানিয়েছেন আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগেও ওই অঞ্চলে এই আদিবাসী গোষ্ঠীটি বসবাস করত।
এরা আরবদের আগমনের পূর্বে হাজার হাজার বছর ধরে এই ভূমিতে বসবাস করে আসছিল। সপ্তম খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চলে আমাজিঘরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। তারপর পশ্চিম এশিয়ার আরবরা ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে উত্তর আফ্রিকায় আসতে শুরু করে।
একসময় আরবরা এখানকার জমি দখল করার জন্য অভিযান চালাতে শুরু করলে তাদের সঙ্গে বেশ কিছু জায়গায় আমাজিগদের সংঘর্ষ হলেও সার্বিকভাবে তারা আরব আগ্রাসনকে খুব একটা বাধা দেয়নি।
এই বাধা না দেয়ার মূল কারণ হল সেই সময় বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সঙ্গে আমাজিঘদের প্রবল লড়াই চলছিল। এই আদিবাসী গোষ্ঠীর লক্ষ্য ছিল আরবদের সাহায্য নিয়ে বাইজানটাইন সম্রাজ্যকে পরাজিত করা। ঘটনাচক্রে তারা সেই লক্ষ্যে সফল হলেও এই অঞ্চল ধীরে ধীরে আরবদের দখলে চলে যায়। দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর উত্তর আফ্রিকার এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে আমাজিঘরা।
য্যগে যুগে বিভিন্ন জাতি এবং সভ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা আজও টিকে আছে তাদের নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতির স্বকীয়তা নিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রায় প্রতিটি দেশে তারা আজও অবহেলিত, বঞ্চিত এবং অস্বীকৃত। এমনকি নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার, নিজেদের নববর্ষ পালনের অধিকারের জন্যও তাদেরকে সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে।
এই অঞ্চলের বেশিরভাগ আরব জাতিভুক্ত মানুষদের মতো আমাজিঘরাও বর্তমানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। কিন্তু তাদের মাতৃভাষা এবং সংস্কৃতি আরবদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বারবার অভিযোগ উঠেছে আরবরা এই আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর ভাষা ও সংস্কৃতিগত সাম্রাজ্যবাদ চালানোর চেষ্টা করছে।
সবচেয়ে বড় কথা আমাজিঘরা কিন্তু আলাদা স্বাধীন দেশ চায় না, তাদের দাবি নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতি বজায় রাখতে দেয়া হোক। এক সময় উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আমাজিঘরা তাদের মাতৃভাষায় কথা বললে রাষ্ট্র গ্রেফতার পর্যন্ত করত!
সাননিউজ/এএসএম